সম্মানিত বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আইনের শাসন বাধাগ্রস্ত হলে ,তিনি যখন কথা বলেন,তখন সরকার প্রধানের কাছে ভুল ব্যাখ্যা পৌঁছায় এবং বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয় । সরকার প্রধান ভুল তথ্যে বিভ্রান্ত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত দেন। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা বলয় ভেঙে সরকার প্রধানের কাছে দুঃখ -কষ্ট বলার জন্য যেতে পারে না। তিনি আরো বলেছেন, প্রত্যেক সরকারের সময় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করায় গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে নিরীহ জনগণ নিপীড়িত হয় (তথ্য সূত্র :দৈনিক জনকণ্ঠ, 4 মে /2017)। সিনহার মতে -তাঁর সঙ্গে একটু আলোচনা করা হলে সরকার, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে দূরত্ব দূর হয়ে যেত!
আমরা নিরীহ জনতা দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক অবস্থাদৃষ্টে মনে করি, সিনহার বক্তব্যে এদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার চিত্র অনেকাংশেই প্রতিফলিত হয়েছে। তবে, অতীতের মতই চলমান গণতন্ত্র, কৌশলগত নির্বাচন ও ক্ষমতাবান প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যের কিছু বিষয় এড়িয়ে গেলে সত্যি বলতে দ্বিধা নেই যে, বর্তমান সরকার প্রধানের আমলে, বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃণিত একাত্তরের মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধি ও জাতির জনকের ঘাতকদের সমুচিত শায়েস্তা ও ধরাশায়ী করণের মধ্য দিয়ে পশুচিত রক্তমাখা ইতিহাসের কবর রচনার অদম্য দুঃসাহসিক সূত্রপাত ঘটেছে । আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে,সত্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইতিহাস কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এতটা সফল হবেন, তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেননি! উন্নয়নের ফিরিস্তি না দিয়ে,সম্ভবত এটা শুধুমাত্র বলা অত্যুক্তি নয় যে, বর্তমান সরকার প্রধানের আমলে উন্নয়ন সংগ্রামের একটা বিপ্লব লক্ষ্য করা যাচ্ছে । অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে জনগণ আপাতত সরকারের প্রতি আস্থাশীল রয়েছে ।সরকার বিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থতা সরকারের দীর্ঘ স্থায়ীত্ব বহাল থাকার বিষয়ে নুতন মাত্রা সংযোজন করছে বলে অনেকে মনে করেন ।
যা হউক আবারো আসা যাক সিনহা প্রসঙ্গে । সরকার, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে যে দূরত্ব রয়েছে, তা নাকি দূর হয়ে যাবে মাননীয় বিচারপতি সিনহার সাথে একটু আলোচনা হলেই!একটু আলোচনায় সমাধান পাওয়া গেলে সভা-সমাবেশ কিংবা সংবাদ মাধ্যমে দূরত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের অভিভাবকদের এত বেশি কথন কেন? আইনগত বাধা না থাকলে নীতিগত কারণেই সম্মানিত সিনহা সরকার প্রধানের সাথে একটু আলোচনায় সব দূরত্ব ঘুচিয়ে দেওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, উনার গড়ে উঠা ভাবমূর্তিকে আরো সমুজ্জ্বল করতে পারেন। আমাদের সংস্কৃতি,কে আগে কথা বলবে এমন ভাবটা আর টিকিয়ে রাখা শোভন নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এ রীতি ভঙ্গ করে গত নির্বাচনে আপোষহীন দেশনেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে টেলিফোনে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে জন নন্দিত হয়েছিলেন । এক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্মানিত সিনহার সাথে দূরত্ব নিয়ে আলোচনায় এলে উনার দায়িত্ব, অভিভাবকত্ব ও বিচক্ষণতা বরাবরের মতই জাতি দেখতে পেতো। ইদানিং বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণদের কেহ কেহ সহ অনেকেই যেন,সত্য বলার প্রতিযোগীতায় নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে গিয়ে দল, সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা ঠিক মনে রাখছেন না । গণতন্ত্র, অমুক বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি পাণ্ডিত্যপূর্ণ কত কথা ---! পৃথিবীতে এমন দেশ বিরল নয় যে, সেসব দেশ ও দেশের কোন কোন নেতারা দেশটাকে প্রথমে ছলে,বলে, কৌশলে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করে তারপর গণতন্ত্র, ন্যায় বিচার ইত্যাদি নিয়ে ভাবছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সফল না হলেও সেসব দেশ ও জাতি ভাল আছে। অবশ্য এমন দৃষ্টান্ত অনুসরণের পক্ষে সাফাই গাচ্ছি এমনটি নয়। তবে, আক্ষেপ এজন্য যে, দেশ স্বাধীন হয়েছে বেশ কতক বছর গত হলেও বিভিন্ন ভাবে মোটা-তাজা হওয়া একটা শ্রেণী ছাড়া সাধারণ জনতার একটি অংশ মৌলিক চাহিদা পূরণের এবং নিম্ন মধবিত্তরা উন্নত জীবন -যাপনের অপেক্ষায় আর দিন গুনবে কতদিন?
মনে রাখা দরকার,আধুনিক, পরিবেশ বান্ধব ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন-2021ও2০41 বাস্তবায়নের জন্য অন্তত রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোর চালিকা শক্তির সমমনা হওয়া ও সমন্বয় থাকা খুব জরুরী । নিপীড়িত জনতা মনে করেন, ভিশন-2021 ও 2041একাত্তরের মতই উন্নত জীবন -যাপন প্রাপ্তির অপর একটি মহাযুদ্ধ! এই যুদ্ধে দল,মত, নির্বিশেষে সকলের অংশ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমনকি, অন্য মতাদর্শের কোন সরকার ক্ষমতায় এলেও জননেত্রী শেখ হাসিনার পথনির্দেশিত এই উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখাই হবে জনহিতকর! কারণ, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় পুনরায় না এলে, হয়তো বা অন্য কোন সরকার পাতাল রেল বাতিল করে আকাশ রেলের স্বপ্ন দেখাবে । আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তনের পর এমন দৃশ্য অবলোকনে জনতা একেবারেই অভ্যস্ত ।
অতি নগণ্য দক্ষতায় সামান্য এই লিখাটা , অনেকের কাছেই চুনোপুঁটির লম্ফঝম্প বলে বিবেচিত হলে, দুঃখ করার কিছুই নাই!