বাচ্চাদের আবদার মেটাতে কয়েকটা কোয়েল পাখি কিনেছিলাম। দোকানী বলে দিয়েছিলেন, বাসায় নেয়া মাত্র ওরা ডিম দেয়া শুরু করবে।
মাস দুয়েক হয়ে গেল, ডিমের কোন খবর নেই। শুধু খায় আর হাগু করে। খাবার কেনা তেমন সমস্যা নয়, সমস্যা হলো ওদের "ইয়ে" পরিস্কার করা। এর মধ্যে দেশে আসলো আবার করোনা।
অনেক দিন ধরেই বাচ্চাদের বোঝানো হচ্ছিলো, ওরা ডিম দেয় না, ওদের কেটে খেয়ে ফেলা উচিৎ। মনে মনে একটু সঙ্কোচও হচ্ছিলো, বাচ্চাদের কোন ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে কিনা--যার উৎপাদনশীলতা নেই, তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই?
যাই হোক, আগামী শনিবার ওদের খেয়ে ফেলা হবে সিদ্ধান্ত হলো।
গত রাতে বাসায় ফিরে মনে পড়লো, কোয়েলের খাবার শেষ হয়ে গেছে। ভাবলাম, আবার খাবার কিনবো, নাকি সকালেই কেটে ফেলবো পাখিগুলোকে? ভাবলাম, যার মৃত্যদন্ড ঘোষিত হয়েছে, তার আর শনিবার কী আর মঙ্গলবার কী? মৃত্যদন্ড যেহেতু দেয়াই হয়েছে, জীবনের দন্ড নাহয় যতটা পারা যায় কম হোক।
যেই কথা সেই কাজ, সকালে অফিসে যাবার আগে পাখিগুলো জবাই করে দিয়ে আসলাম। পিতা-মাতার প্রপাগান্ডায় অনুপ্রাণিত হয়ে পাখিগুলোর অন্তিম মুহুর্তেও ছোট ছেলেটা বলছিলো--দুষ্ট পাখি, ডিম পাড়ে না, শুধু হাক্কা করে…
একটা অপবাদ মাথায় নিয়ে ছোট ছোট পাখিগুলোর জীবনাবসান ঘটলো।
***
অফিসে যেতে যেতেই বাসা থেকে খবর পেলাম, কোয়েল পাখির পেট থেকে একটা আস্ত ডিম পাওয়া গেছে! হয়তো আজকেই পাড়তো, নয়তো আগামী কাল। সাথে আরও অসংখ্য ছোট ছোট ডিম্বাণু...
এই অর্ধেক জীবনে এসেও সামান্য কোয়েল পাখির জন্য মনটা ভীষণ ভারাক্রান্ত হয়ে গেল!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১২:৩৪