বাচ্চাটা কিছুতেই আসতে চায় না। মায়ের কোলেই থাকে। হঠাৎ সামনে পড়লে গুটিগুটি পায়ে দূরে চলে যায়। তার সাথে কান্নাকাটি তো আছেই।
কি সুন্দর বাবু ! লাল গালটা শুধু টিপে দিতে ইচ্ছে হয়। বয়স একবছরও হয় নি। তবুও নতুন কেউ এলেই উনার দেখা নেই। তাকাতেও কি ভয় ! যেন রাক্ষস-খোক্কস এলো। মায়ের কোলই যেন শেষ আশ্রয় !
কি করা যায় ! ভেবে পাই না। যেভাবেই হোক বাবুটাকে কোলে নিতেই হবে। ওকে আদর না করলে আমার আসাটাই বৃথা !
একটা প্ল্যান করলাম। বাবুর মাকে ফোন করলাম না। বাবু নাকি মায়ের ফোনে কথা বলার মাধমেই বুঝতে পারে কেউ আসছে। এত্তটুকুন বাবু কিভাবে যে বোঝে ! আমার হাই আই-কিউ মস্তিষ্কও ফেল ওকে বুঝতে। কুট্টি জিনিয়াস একটা !
প্ল্যানটা হলো একটা বড় টেডি বিয়ার কিনলাম। লাল টুকটুকে। শুনেছিলাম ওর নাকি একটা আছে, কিন্তু ছোট। সারাদিনই উনি ওটা নিয়ে ঘোরেন। যাইহোক, পুরো একসেট চিপস সাথে নিয়েছিলাম। উনি নাকি চিপসও খান। সাথে কিছু খেলনা। সো চিন্তা ডান এ্যান্ড ওয়ার্ক অন........
ট্রেনটা যথাসময়ে স্টেশনে এলো। যথারীতি ট্রেন হতে নামা এ্যান্ড রিকশা নেওয়া। চিপস আর টেডি বিয়ার দুটো আলাদা ব্যাগে ভরা। সাথে আমার ছোট ব্যাকপ্যাক। রিকশা চলতে শুরু করলো...........
বাসায় পৌঁছে কলিংবেল টিপা এন্ড ইয়েস ! বাবু ইন দ্যা কোল অফ মাদার। উনি নাকি আগেই বুঝে গেছেন। কিভাবে বুঝলো আল্লাহ জানে !
আড় চোখে একবার বাবুর দিকে তাকালাম। তাকাতেই মাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আহারে বেচারা !
ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। আমার আসার এতোটা সময়েও উনি মায়ের কোল থেকে নামেন নি। তাই বাধ্য হয়ে বাবুর মাকে বাবুসহই রান্না করতে হলো। বাবুর মার রান্না বরাবরই অসাধারণ। কিন্তু বেশি কিছু রাঁধতে পারেনি। যেটুকু করেছে সেটুকুই অমৃতের মতো খেয়ে নিলাম। খাওয়ার পুরোটা সময় লুকিয়ে লুকিয়ে বাবু আমাকে দেখছিলো। আমি কিন্তু তাকাচ্ছিলাম না। কারন বাবুকে এখন পাত্তা দেওয়া যাবে না।
খাওয়া শেষে বাবুর ভাইয়ের রুমে ঘুমিয়ে পড়লাম। জার্নির যে ধকল গিয়েছে ! সুন্দর একটা ঘুম দিলাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি দরজার পর্দার নিচে ছোট্ট ছোট্ট পা। বুঝলাম আমার প্রতি বাবুর কৌতুহল আছে ! বাবুর ভাইকে ডাকলাম। ও-ই বললো বাবু নাকি এদিকে প্রায়ই লুকিয়ে দেখে গেছেন। আমার কাছে এটা শুভ লক্ষণই বটে !
আমার উঠে পড়ার আভাস পেয়েই বাবু আবারো মায়ের কোলে। ওদের সাথে অনেক কথা বললাম। বহুদিন পরে আসা। শত কথা লুকিয়ে আছে !
একসময় বাবু ঘুমিয়ে পড়লো। ছোট্ট মুখটা দেখতে দারুণ কিউট লাগছিলো। যেন একটা পুতুল !
বাবুর ঘুমের সময়েই আমাকে যা করার করতে হবে। বাবুর মা ও ভাইকে সবকিছু বুঝিয়ে বললাম। বাবুর মা বললো, "তুমি পারো বটে ! "
বাবুজি ঘুমাচ্ছেন। আর আমি প্রস্তুত হচ্ছি বাবুকে পটানোর জন্য। প্রথমেই ব্যাগ থেকে কিছু খেলনা ও চিপসের প্যাকেট বের করলাম। তারপর বাবুর জেগে ওঠার অপেক্ষা.....
ইয়েস ! বাবুজির ঘুম ভাঙল অবশেষে ! উঠেই মাকে খুঁজছে। আমি সন্তপর্ণে বাবুর হাতে একটা চিপসের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে চলে এলাম পাশের ঘরে। বাবু চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। অতঃপর ক্রন্দন। যা কিনা চিপস মুখে নেওয়ার পরই কমলো। আমি পাশের রুমে অপেক্ষা আছি। বাবু কি আসবে???
নাহ, এলেন। হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে। আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর চিপসের প্যাকেটটা দেখালো ছোট্ট হাত বাড়িয়ে। তবে কি আমার জয় হলো?? কালক্ষেপণ না করে টেডি বিয়ারটা ওর দিকে এগিয়ে দিলাম। নিলো। তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিলো। বরফ এখন পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাবুর মা অবাক। হেসে বললোঃ" তাহলে অবশেষে .... "।
এরপর থেকে ও আমার সার্বক্ষনিক সঙ্গী হয়ে যায়। পিছু ছাড়তে চায় না। যতদিন ছিলাম ততদিনই এই দশা। তবে গরম পানির বিড়ম্বনা ছিলো। একেই বোধহয় মধুর সমস্যা বলে !
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:২৯