জাতীয়তাবাদ হলো, এক ধরণের রাজনৈতিক মতবাদ ও ধারণা, যেখানে জাতির স্বার্থকে বড় করে দেখা হয়, এবং জাতির নিজস্ব সম্পদ, সংস্কৃতি, নিজেদের অর্থনীতি ও মানুষের আশা আখাংকাকে প্রাধান্য দিয়ে জাতীর সাংবিধানিক অধিকারগুলোকে কার্যকরী করা হয়; বাংগালীরা বৃটিশ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর, ভাগ্য পরিবর্তন না হওয়ায়, জাতীয়তাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন; সেটার ফলশ্রুতি আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ।
বাংগালীরা পাকিস্তানের শুরুতে বুঝতে পেরেছিলেন যে, পাকিস্তানেের জনগণ ১টি জাতি নন, ২টি জাতি; সেটার পেছনে অর্থনৈতিক, ভাষা ও সরকারী ভুল পদক্ষেপগুলো কাজ করেছে। ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংগালীরা জাতীয়বাদের দিকে চলে যান, এদের নেতৃত্ব আসেন মওলানা ভাসানী, শেরে বাংলা ও ততকালীন আওয়ামী লীগ; ১৯৬৬ সালের দিকে, জাতীয়তাবাদের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়; আজও নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের হাতে, কিন্তু আওয়ামী লীগের লোকেরা এখন আর জাতীয়তাবাদের গরজ অনুভব করার অবস্হানে নেই, তাদের জাতীয়তাবাদের চাহিদা পুরণ হয়ে গেছে।
জেলারেল জিয়ার দলের নামের ভেতরে 'জাতীয়তাবাদী' শব্দটা আছে; এখন অনেকেই বিএনপি'র লোকদের বুঝাতে সংক্ষেপে 'জাতীয়তাবাদীরা' শব্দটা ব্যবহার করেন, এটা ভয়ংকর ভয়ংকর ধরণের ভুল; আসলে, জেনারেল জিয়া দল গঠনের সময় যাদেরকে দলের নেতৃত্বে নেয়ার জন্য টার্গেট করেছিলেন, তারা ছিল বাংগালী জাতীয়তাবাদের বিপক্ষের লোকজন, এরা বাংলাদেশের বদলে বৃহত্তর পাকিস্তানে বিশ্বাসী ছিল: এরা ১৯৭১ সালে জাতির বিপক্ষে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যুদ্ধ করেছে, পাকীদের সাহায্য করেছে, বাংলাদেশ চাহেনি কোনভাবে; এরা জেনারেল জিয়া ও ততকালীন মিলিটারী অফিসারদের বুদ্ধিতে জাতীয়তাবাদী হিসেবে পরিচিত পেয়েছে দলের নামের সাথে তাল মিলিয়ে; এরা নিজেরদের জাতীয়তাবদী হিসেবে পরিচয়ও দেয়: মগজ কম থাকলে, তাদের দুনিয়াটা বেশ সহজ হয়ে যায়!
জেনারেল জিয়ার অর্থনৈতিক পদক্ষেপের মুলে ছিলো, দেশে একটা ধনীক শ্রেণী গড়ে তোলা; এটা জেনারেল আইয়ুবেরও ছিলো; এখন বাংগলীরা ২ দলে বিভক্ত: ধনী ও দরিদ্র; জাতি বড় ধরণের অসমতা নিয়ে ধনী দিরদ্রে বিভক্ত হলে জাতীয়তাবাদ বিলুপ্ত হয়ে যায়। জেনারেল জিয়ার সময়টা ছিলো ধোঁয়াসায় ভরা, দেশের শিক্ষিতরা ও সামান্য ধনীরা জিয়ার সাথে মিলে একটা নতুন শ্রেণী গড়ে তুলছিলো; জিয়া সেটাকেই জাতীয়তাবাদ হিসেবে চালিয়ে দিয়েছেন; অশিক্ষিত মানুষ জানতো না দেশ কোন দিকে রওয়ানা হয়েছে!
আজকে আমাদের দেশে চাকুরীর বড় উৎস হচ্ছে, গার্মেন্টস ও প্রাইভেট চাকুরী; এই ধরণের চাকুরীগুলোতে মালিক ও কর্মচারীর মাঝে খুবই বড় ধরণের অর্থনৈতিক অসমতার বিরোধ থাকে; এরা কি একই উদ্দেশ্য নিয়ে 'জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্টার' দিকে যাবেন?
আজকে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, দেশ শতকরা ১৭.৪ ভাগ সুপার ধনী সৃষ্টি করেছে, এই অস্বাভাবিক ধনীদের ও সাধারণ মানুষের মাঝে কি একই সমতলের রাজনীতি 'জাতীয়বাদ' বেঁচে থাকতে পারে?
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০২