*** কোন ১ ইডিয়ট পোষ্টটাকে রিফ্রেশ করছে ***
পাহাড়িয়া চরার নুড়িগুলো গোলাকার, চ্যাপ্টা গোলাকার, লম্বাটে গোলাকার, মার্বেলের মতো গোলাকার, ডিমের মতো গোলাকার, বৃত্তের মতো গোলাকার, উপবৃত্তের মতো গোলাকার হয়ে থাকে। আমাদের গ্রহগুলো গোলাকার, উপগ্রহগুলো গোলাকার, নক্ষত্রগুলোও গোলাকার; প্রাকৃতিক শক্তি বস্তুকে এক সময় গোলাকার, বা তার কাছাকাছি ফরমে নিয়ে যায়। আমাদের মহাবিশ্ব যত ধরণের জোতিস্ককে বুকে ধরে রেখেছে, সবগুলোই সময়ের সাথে গোলাকার হয়ে গেছে, কিংবা গোলাকার হয়ে যাবে; ইহা প্রকৃতির স্বাক্ষর।
কোন একটা নীহারিকা, তারকা যদি কোন কারনে বিস্ফোরিত হয়, উহার থেকে নতুন জোতিস্ক সৃষ্টি হয়; এগুলো এক সময় গ্যাস আকারে থাকে, বিবিধ আকৃতিতে থাকে, কোটি কোটী বছর পরে, সেগুলো মোটামুটি কোন এক ধরণের গোলকের মতো হয়: হতে পারে ডিমের মতো, কমলা লেবুর মতো, কিন্তু থালার মতো গোলাকার হয় না।
প্লাষ্টিকের একটি চেয়ার যদি প্রচন্ড ঝড়ে পড়ে, তাড়িত হয়ে খোলা মাঠের কোন একদিকে যেতে থাকে, সে কিন্তু ঘুরতে ঘুরতে যাবে; এবং চেয়ারের আকৃতি যে রকমই হোক না কেন, ঘুরার সময়, চেয়ারটি তার সবচেয়ে প্রলম্বিত অংশের ব্যাস বিশিষ্ট একটি বৃত্তের সৃষ্টি করবে সর্বাধিক পক্ষে।
আমাদের মহাবিশ্ব তার সমস্ত নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ, ধুমকেতু, নীহারিকাকে বুখে ধারণ করে ঘুরছে; ঘুর্ণমান মহাবিশ্বের পরিধিতে থাকা বস্তুগুলো নিজ ঘুরছে, ও মহাবিশ্বের পরিধিতে থেকে মহাবিশ্বকে কোন এক ধরণের গোলাকার আকার দিচ্ছে! ঘুর্ণমান এসব বিশাল বস্তুগুলো ঘুরার সময় কি ধরণের, কি আকারের গোলাক তৈরি করে নিজের চারিদিকে, এটা নিয়ে জ্যামিতির একটা শাখা বের হয়েছে অনেক আগে; এই শাখার অংক ও বস্তুর আকার, আকৃতি ইত্যাদি হলো টপোলোজি নামে একটি বিষয়ের ব্যাপার স্যাপার।
ফরাসী এক অংকবিদ, ১৯০৪ সালে একটা ধারণার কথা বলে, উহা আসলে ৩ ডাইমেনশনের ভেতরে ঘুর্ণমান বস্তর গোলাকার আকৃতি নিয়ে; ইহাকে ঐ অংকবিদের নামানুসারে 'পনকারে সমস্যা', বা 'পনকারে অনুমান' নাম দেয়া হয়; তিনি মহাবিশ্বের আকৃতি বুঝার জন্য ছোট আকারের বস্তুর আকৃতিকে প্রথমে অংকের মাধ্যমে বুঝতে চেয়েছিলেন; এই অংকটির বর্ণনা আপনারা উইকিতে দেখতে পাবেন। অংকটা কঠিন ছিলো; তিনি এই ধরণের বিষয়কে অংকের সাহায্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তিনি পারেননি; শতশত অংকবিদ পারেননি; ১০০ বছর পর, উহার সমাধান করেছেন সোভিয়েত রাশিয়ার অংকবিদ গ্রিগরী পিরেলমান।
গ্রিগরী পিরেলমান ১৯৬৬ সালের লেনিনগ্রাডে জন্মগ্রহন করেন; ছোটকালে ভালো অংক পারায়, সরকার তাকে অংক শেখার স্কুলে নিয়ে যায়; সোভিয়েতে সেই সময় তিনি অংকে নাম করেন; সোভিয়েত ভেংগে যাবার পর, আমেরিকান অংকবিদেরা তাঁকে কালিফোর্নিয়া নিয়ে যায়; সেখানে তিনি আমেরিকান অংকবিদদের সাথে কাজ করেন; ১৯৯৪ সালের দিকে তিনি বিশ্বের বেশ কয়েকটি কঠিন অংকের সমস্যার সমাধান বের করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি 'পনকরে সমস্যা' হাতে নেন; তিনি বুঝতে পারেন যে, ইহা সমাধান করতে হলে, উনাকে বেশ কিছু বছরের জন্য আমেরিকান সমাজ থেকে দুরে চলে যেতে হবে; তিনি লেনিনগ্রাডে ফিরে যান।
ইতিমধ্যে তাঁর বোন চলে গেছে ইসরায়েলে, মা চলে যাবার জন্য প্রস্তুত; কিন্তু ছেলেকে একা রেখে তিনি গেলেন না। ৯ বছর অংক কষে, তিনি প্রাথমিক ফলাফল জানান বিশ্বকে; তাঁকে একটা কানাডিয়ান পুরস্কার দেয়া হয়। কিন্তু তিনি তা নিতে কানাডা যাননি। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে, ২০০৬ সালের মাঝে তিনি লিখিতভাবে 'পনকরে সমস্যা'র সমাধান বুঝিয়ে দেন। বিশ্ব তা গ্রহন করে; তাঁকে ১ মিলিয়ন ডলারের এক পুরস্কার দেয়া হয়; কিন্তু তিনি পুরস্কার আনতে যাননি।
২০১০ সালে অংবিদদের পুরস্কার দেয়া হচ্ছিল স্পেনে; গ্রিগরী তখন নিজের পুরস্কারটি নেয়ার আগ্রহ দেখান; কিন্তু শর্ত দেন যে, স্পেনের রাজার হাত থেকে পুরস্কার নেবেন। রাজা অনুষ্ঠানে আসেন গ্রিগরীকে পুরস্কার দেয়ার জন্য, কিন্তু গ্রিগরী অনুষ্ঠানে যাননি। ২০১২ সালে, পুরস্কারের ঘোষণাটিকে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। গ্রিগরী এখন লেনিনগ্রাডে বাস করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:২৮