বৃটিশ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর, সবচেয়ে বেশী ধর্মীয় মনোভাব দেখিয়ে আসছে পাকিস্তান, দেশটি মিলিটারী কর্ত্তৃক নিয়ন্ত্রিত ইসলামিক রিপাবলিক; কিন্তু আজ অবধি কোন ইসলামিক দল ক্ষমতায় যায়নি। ভারত ১৯৪৭ সালে থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ছিল; বাংলাদেশও জন্মলগ্ন থেকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ; ভারতে উন্নয়নের নাম দিয়ে, প্রথমবার ধর্মীয়রা ভোটে জয়ী হয়েছিলো গত ভোটে; এবার ওরা মোটামুটি ধর্মীয় পরিচয়েই ভোটে নেমেছিলো। যাক, তারা ভারতের অফিসিয়েল ধর্মনিরপেক্ষতার উপর নিশ্চয় হাত দেবে না; মনে হয়, তারা ভারতকে কখনো ধর্মীয় দেশ হিসেবে ঘোষণা দেবে না।
সনাতন ধর্মের ভালো দিক হলো, উহাকে প্রচার করার জন্য উৎসাহ দেয়া হয় না, হিন্দু মায়ের সন্তান হিন্দু; প্রার্থনায়ও ধরাবাধা নিয়ম নেই: ইচ্ছা হলে প্রার্থনা করা যায়, না করলে পাপ হবে না; দেব দেবতা লাখ লাখ, কয়েক কোটী; ইচ্ছা করলে নতুন দেব দেবীও যোগ করা যায়; আনন্দের ধর্মও বলা যায়; বাংলা অন্চলের শক্তিশালী দেবী, দুর্গা, ইংরেজ আমলে সনাতন ধর্মে যুক্ত হয়েছেন।
সনাতন ধর্ম এই মহুর্তে বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন ধর্ম, আনুমানিক ৫০০০ বছর ধরে আছে, আরো অনেক শতাব্দী ধরে থাকবে; ধর্মটি এত দীর্ঘ সময় টিকে থাকার মুলমন্ত্র হলো, রাজ্য পরিচালনা, বিজ্ঞান ও অর্থনীতির সাথে মিলেমিশে থাকে। সনাতনে বড় বড় পরিবর্তন এনেছে ইংরেজরা: সতীদাহ, গংগায় সন্তান নিক্ষেপ ও নরবলি বন্ধ করেছেন তারা; তারা বিধবা বিবাহেও হিন্দুদের উৎসাহ দিয়েছেন।
গত ভোটে মোদী উন্নয়নের নাম দিয়ে ভোট পেয়েছিলো; আশানুরুপ উন্নয়ন হয়নি সর্বস্তরে; তবে, দেশের অর্থনীতি বড় হয়েছে, ব্যবসা, শিক্ষা ও টেকনোলোজীতে দেশ বেশ এগিয়েছে; দারিদ্রতা কিছুটা কমেছে, শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরেছে; তবে, ভারতের মধ্যবিত্তরা সবাইকে ধনী হিসেবে দেখতে চাহে না; তারা নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের দরিদ্র হিসেবে রাখতে ইচ্ছুক; ব্যুরোক্রেটরা এই ব্যাপারে কঠিন প্ল্যান করে রেখেছে, মনে হয়।
২০১৪ সালে, মোদী বিদেশ থেকে ভারতীয় অর্থনীতিবিদ এনে, উন্নয়নের একটা ফিরিস্তি করেছিলেন, সেটা মানুষকে দেখানো হয়েছিলো; এবার সেই রকম কিছু করেনি, ধর্মই ভোট নিয়ে এসেছে; মনে হচ্ছে, ভারতকে ভুল পথে নিয়ে গেছে মোদীর রীতিনীতি।
সনাতন ধর্মের খারাপ দিক হচ্ছে: প্রাচীন কালে, মানুষের পেশাকে হিসেবে ধরে, মানুষকে শ্রেণীতে ভাগ করেছে; এই প্রথার প্রভাব সামান্য কমলেও ইহা বলবৎ আছে; মাত্র গত সপ্তাহে, নীচু বর্ণের এক যুবককে প্রাণ দিতে হলো বর্ণ প্রথার জন্য; যুবকটি একটি বিয়েতে উঁচু বর্ণের হিন্দুদের সাথে চেয়ারে বসে খাওয়ার চেষ্টা করেছিলো। তবে, ধর্মীয় রাজনীতির সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, অন্য ধর্মের লোকদের অধিকার হরণ করা।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৯ দুপুর ২:৫৫