আমাদের কবি নজরুল ইসলাম ১৯০৮ সালে, মাত্র ৯ বছর বয়সে দরিদ্র ছিলেন, রুটির বেকারীতে কাজ করেছেন, লেটো গান রচনা করেছেন, মসজিদের মোয়াজ্জিন হয়েছিলেন; উনি ১৯১৭ সালে, ১৮ বছর বয়সেও দরিদ্র ছিলেন, এসএসসি'র সমমানের পরীক্ষা না দিয়ে, তিনি টাকা উপার্জনের জন্য বৃটিশের সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন, ইংরেজদের পক্ষে ১ম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন; অথচ, তিনি ইংরেজদের কলোনিয়ালিজমের বিপক্ষে ছিলেন। দেখছেন, দারিদ্রতা মানুষকে কি করে; ইংরেজ বিরোধী মানুষ, পেটের দায়ে ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধে গেছেন! উনার লেখা লেটো গান মানুষ শুনতেন; কারণ, উনি ইংরেজদের কলোনিয়েল সিষ্টেমের বিপক্ষে লিখতেন। এখন ব্লগার শাহীন৯৯ শেখ হাসিনার কলোনিয়েল সিষ্টেমের বিপক্ষে লেখেন, আপনারা পড়েন টড়েন নাকি?
১৯৩৯ সালেও কবি দরিদ্র ছিলেন, উনার স্ত্রী প্রমিলা দেবী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন, চিকিৎসার টাকা ছিলো না; ১৯৪১ সালে তিনি আরো দরিদ্র হয়ে পড়েন, নিজেই অসুস্হ হয়ে পড়েন, এবার উনার চিকিৎসার পয়সাও নেই। ভেবে দেখেন, স্বামী স্ত্রী ২ জনেই অসুস্হ; তখন ইংরেজরা ২য় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত; ১৯৪২-৪৩ সালে বাংলায় ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নয়, তার থেকে হাজার গুণে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ; কবিকে কে সাহায্য করেছেন? আজকেও তো বাংগালীরা কোন সিনেমার অভিনেতাকে সাহায্য করে না; ব্লগার নুরু সাহেব বলবেন, এসব কবি, মবি, সিনেমার লোকেরা রোজা রাখে না, নামাজ পড়ে না, তাদেরকে আবার কিসের সাহায্য?
১৯৭২ সালেও কবি অনেক দরিদ্র ছিলেন; কলিকাতার সরকার সামান্য সাহয্য করতেন; ভাড়াটিয়া বাড়ীতে থাকতেন, তাতে পান্তা আনতে লবন ফুরাতো; যাকগে, শেখ মুজিবের কারণে তখন উনার জীবনে প্রথমবারের মতো সুদিন আসে ১৯৭২ সালে, শেখ আমাদের কবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন; থাকার জন্য ১টা বাড়ী দেন, বাকী খরচ চালানোর মতো টাকা দেন; শেখ এটা একটা বিরাট কাজ করেছিলেন, কি বলেন?
১৯৪১ সালে কবি অসুস্হ হয়ে গেলে, কলিকাতার লোকেরা উনাকে সাহায্য করেছেন; ভাবতে কষ্ট হয়, আজকের কলিকাতার লোকেরা যেই কৃপণ, তারা সেই সময় কবিকে সাহায্য করেছেন! হয়তো বিরাট নয়, তারপরেও করেছেন, বিদেশে পাঠায়েছেন; আজকে ঢাকায় কোন ব্লগার অসুস্হ হলে, কেহ সাহায্য করবে বলে মনে হয় না; আওয়ামী লীগ করলে হয়তো শেখ হাসিনা সামান্য সাহায্য করবেন; বেগম জিয়া কিন্তু কাউকে কোনদিন ১ পয়সাও দেননি; সেইজন্য মনে হয়, উনাকে শেখ হাসিনা জেলে থাকতে দিয়েছেন, যাও বিনা পয়সায় খেয়ে দেয় বেঁচে থাক!
দেখেছেন, দরিদ্র হলে মানুষের কি অবস্হা হয় ? আমার খুবই খারাপ লাগে যে, প্রমিলা দেবী উনার স্বামীর সামান্য সুখের সময়টা দেখে যেতে পারেননি; প্রমীলা দেবীর মৃত্যু হয়েছিলো ১৯৬২ সালে; উনি অসুস্হ স্বামীর দু:খ দেখে গেছেন, মনে অনেক কষ্ট নিয়ে গেছেন নিশ্চয়! কোন স্ত্রী নিজের স্বামীকে কিংবা নিজের সন্তানদের দরিদ্র দেখতে চান না নিশ্চয়ই!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:৩৮