স্ত্রীর জন্য স্যান্ডেল কিনতে বের হয়েছি; আমি ট্রেনে যাবার পক্ষে ছিলাম, গাড়ীর পার্কিং পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার; আরো ২/১ যায়গায় যেতে হবে, শেষমেষ গাড়ী নিয়ে বের হতে হলো; রেসিডেন্সিয়েল এলাকায় শপিংমল; আশেপাশে পার্কিং নেই; দুই চক্কর দিয়ে, স্ত্রীকে দোকানের কাছে নামিয়ে দিয়ে বললাম, আমি ফোর্থ এভেনিউ ও ডীনষ্ট্রীটের কোণায় অপেক্ষা করবো। ফোর্থ এভেনিউ ও ডী্নষ্ট্রীটের কোণায় একটা খালি যায়গা পেলাম; কিন্তু পার্ক করা যাবে না, নো-পার্কিং এলাকা, গাড়ী থামিয়ে ভেতরে বসে থাকলে চলবে, পুলিশ এলে চলে যেতে হবে। আমি গাড়ীর ভেতরে বসে থাকতে পারি না, বের হয়ে, ট্রাফিক লাইটপোষ্টের ছায়ায় দাঁড়ালাম; লোকজন মলে যাচ্ছে, মল থেকে বাড়ীর দিকে যাচ্ছে; তেমন ব্যস্ততা নেই!
১১/১২ বছরের একটি ছেলে বাইক থেকে নেমে, গ্রীনলাইটের জন্য অপেক্ষা করছে, রাস্তা পার হবে; সে লাইটপোষ্টের গায়ে লাগানো কিসের বিজ্ঞপ্তি পড়ছে মনোযোগ দিয়ে; লাইট গ্রীন হয়ে, আবার লাল হলো, সে পার হয়নি; আমি ওর পেছনে গিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম, কি পড়ছে? একটা 'হারানো বিজ্ঞপ্তি', একটা হিজাবপরা সুন্দরী মেয়ের ছবি; মেয়েটির নাম, সেথ আমেন, ১৬ বছর বয়স, বেরগেন ষ্ট্রীট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী; গতকাল, সে সামার স্কুলের ক্লাশের পর বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়েছিল, বাড়ী ফেরেনি।
-তুমি মেয়েটিকে চেনো? আমি জিজ্ঞাসা করলাম ছেলেটিকে।
সে মুখ খুললো না, মাথা নাড়লো, চেনে না! সে ছবিটি মনোযোগ দিয়ে দেখছে; মিনিট'খানেক পরে বললো,
-আমাদের স্কুলের মেয়ে, আমি নিশ্চয় দেখেছি; তবে, চেহারা থেকে বুঝতে পারছি না, এটি কোন মেয়ে; এই রকম ২০/২৫টি সিনিয়র মেয়ে আছে, এরা হিজাব পরে থাকে; আমার কাছে সবাইকে একই রকম লাগে!
-তোমার ক্লাশে হিজাবপরা মেয়ে আছে?
-আছে ৪/৫ জন; আমি ওদের চিনি, ওরা আমাদের সাথে খেলাধুলা করে, ওরা মাথায় রুমাল বাঁধে; হিজাবপরা সিনিয়র মেয়েগুলো খেলেধুলা করে না, ওরা নিজেদের মাঝে থাকে। আজকে সকালে স্কুলে জরুরী মিটিং হয়েছে; কয়েকটা সিনিয়র গ্রুপ ১০ মাইল এলাকায় খুঁজতে বের হয়েছে।
-তুমি ওকে খুঁজতে চাও?
-আমি সেটাই ভাবছি, আমি আমার ২ বন্ধুকে নিয়ে আমাদের এলকায় খুঁজতে বের হবো; ভাবছি, এই ছবিটি খুলে নেয়া ঠিক হবে কিনা!
আমাদের আলাপের সময় ২ টি ১৩/১৪ বছরের মেয়ে এসে লাইটে থামলো, মনে হচ্ছে, এরা পরস্পরের বান্ধবী, একজন কোরিয়ান, অন্যজন সাদা আমেরিকান; রাস্তা পার হবে, ২ জনের হাতে মিল্কশেক; আমি বললাম,
-লেডিস, এই হারানো বিজ্ঞপ্তিটা দেখেছ?
সাদামেয়েটি বললো,
-কি হারিয়েছে?
-একটি মেয়ে, আমি বললাম।
মেয়ে ২জন ছেলেটার পাশে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞপ্তিটা পড়লো; সাদামেয়েটা আমাকে প্রশ্ন করলো,
-মেয়েটি কি তোমার কেহ হয়?
-না!
-আমি চাই আমার ধারণাটা সঠিক হোক, আমি চাই মেয়েটার খারাপ কিছু না হোক; আমার ধারণা, মেয়েটা পালিয়ে গেছে!
-কেন এই ধারণা।
-প্রথমত, আমি মনেপ্রাণে চাই ওর যেন ক্ষতি না হয়; পালিয়ে গেলে ওর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। মুসলমান মেয়েদের পরিবারের লোকরা ওদেরকে কারো সাথে কথা বলতে দেয় না, মিশতে দেয় না; এই কারণে অনেকেই পালিয়ে যায়।
মেয়েটা নিজের ফোন দিয়ে ২/৩টা ছবি নিলো। ছেলেটা বললো,
আমাকে ছবিটা পাঠাতে পারবে?
-তোমার সেল নম্বর দাও।
-সেলফোন নেই, ই-মেইলে পাঠাও, প্লীজ।
মেয়েটা ছেলের ই-মেইলে পাঠায়ে দিলো। একটি আফ্রিকান আমেরিকান মেয়ে টেলিফোনে বকবক করতে করতে গ্রীন লাইটে রাস্তা পেরিয়ে এ পাশে এলো; আমি হাত নেড়ে তাকে থামতে ইশারা করলাম; সে থেমে প্রশ্ন করলো,
-কি ব্যাপার?
-একটা মেয়ে হারিয়ে গেছে, বিজ্ঞপ্তিটা দেখ।
-স্যরি, আমার তাড়া আছে, আমি এলআইআর ট্রেন ধরবো।
সে পকেটে হাত দিয়ে ১ ডলার বের করে আমার হাতে দিয়ে হনহন করে চলে গেলো। সাদা মেয়ে বললো,
-ডলার দিয়ে কি হবে?
-আমি জানি না।
-মেয়েটি মনে করেছে, আমরা পরিবারকে সাহায্য করার জন্য টাকা তুলছি। টাকাটা তুমি কোন হোমলেসকে দিয়ে দিও।
-ঠিক আছে।
মেয়ে ২টি বিদায় বলে চলে গেলো; ছেলেটি রাস্তা পার না হয়ে, যেদিক থেকে এসেছিলো, সেইদিকে বাইক ঘুরালো, বললো,
-বাসায় গিয়ে ছবিটা প্রিন্ট করবো; আবার দেখা হবে।
আমি স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:১৬