আমেরিকান কংগ্রেস বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের প্রতীক; সন্মানের দিক থেকে ব্রিটিশ পারলামেন্টের পরেই ইহার স্হান। ট্রাম্প কোনদিন কংগ্রেসের সদস্য ছিলো না, সে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। কংগ্রেসে আসার জন্য কিছুটা হলেও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের দরকার হয়; ট্রাম্পের সেটা ছিলো না, এবং মানুষ সেজন্যই ট্রাম্পকে নির্বাচিত করেছিলো। মানুষ রাজনীতিবিদদের শাস্তি দিতে চেয়েছিলো, সেটা কাজ করেছে; কিন্তু ট্রাম্পও রক্ষা পায়নি, কংগ্রেস তাকে পেয়েছে, তাকে ইমপিচের মত অসন্মানী অপবাদ নিয়ে ইতিহাসে থাকতে হবে। তবে, ইমপিচের সময় সে কংগ্রেসের বেশীর ভাগ আদেশকে অমান্য করেছে; ইহা আইনীভাবে সম্ভব হয়েছে রিপাবলিকানরা তার পেছনে থাকায়; তবে, গণতন্ত্রের জন্য খারাপ উদাহরণের সৃষ্টি করেছে।
গতকাল থেকে সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পরবর্তী পদক্ষেপ, পদচ্যুত করার শুনানী শুরু হয়েছে; ইতিমধ্যে, ট্রাম্পকে ইমপিচ করেছে হাউস অব রিপ্রেজেন্টটেভিভ (লোয়ার হাইস), ট্রাম্প ইমপিচ হয়ে গেছে; এখন সিনেট নির্ধারণ করবে, সে ক্ষমতায় থাকতে পারবে কিনা! ইমপিচমেন্ট'এর শুরুতে ডেমোক্রেটরা আশা করেছিলো যে, কিছু রিপাবলিকান তাদের পক্ষে যোগ দিবে; কিন্ত তা ঘটেনি। তারপরেও ইমপিচ করতে কোন অসুবিধা হয়নি; কারণ, হাউস অব রিপ্রেজেন্টটেভিভ'এ ডোমোক্রেটরা সংখ্যায় বেশী। ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে, কমপক্ষে ৭ জন রিপাবলিকান সিনেটরকে ফ্লোর ক্রস করে, ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিতে হবে; বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।
আগামী ৬ দিন পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক ও আলোচনা হবে; তারপর, সিনেটরেরা নিজেদের মতামত জানাবেন; এখন সিনেটরেরা আসলে কোর্টের জুরির ভুমিকা পালন করছে; যদি ৭ জন সিনেটর ডেমোক্রেটদের সাথে মিলে, ট্রাম্পের বিপক্ষে মতামত না দেয়, ট্রাম্প টিকে যাবে।
ট্রাম্পের নমিনেশন নিয়ে রিপাবলিকানরা উৎসাহী ছিলো না; কিন্তু প্রাইমারীতে তার জনপ্রিয়তার কারণে, তার নমিনেশনে রিপাবলিকানরা বাধা দিতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরও, অনেক রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ও সিনেটর তার পক্ষে ছিলো না। মনে হচ্ছিল, সুযোগ এলে রিপাবলিকানরাও ট্রাম্পের বিপক্ষে চলে যাবে। কিন্তু আজ ৩ বছর পর, দেশের অর্থনীতি, অর্থনীতিতে ধনীদের প্রভাব, ট্রাম্পের কিছু সংস্কার বিপাবলিকানদের মাঝে এক ধণের অশুভ শক্ত ঐক্যের সৃষ্টি করেছে; এর পেছনে একটা কারণ হচ্ছে, ট্রাম্পের বিরোধীতা করে নিজের পদে পুর্ণ-নির্বাচনে টিকে থাকা কঠিন হতে পারে। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ও সিনেটরেরা আজো সাধারণ মানুষের রাজনীতিবিদ-বিরোধী মনোভাব ও চাপ অনুভব করছে।
ট্রাম্প টিকে যাবে, তাকে চিন্তিত মনে হচ্ছে না; সে রাজনীতিবিদ না হওয়ায় সে কংগ্রেসকে সন্মান করতে শিখেনি; কিন্তু বিশ্বের গণতন্ত্র আমেরিকার কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে থাকে; ট্রাম্প সেটার গুরুত্ব কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৪