পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর, স্বাভাবিক নিয়মে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছিলো ইংরেজীতে; ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে পুর্ব পাকিস্তানে হত্যাকান্ড ঘটার পর, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া অবধি, প্রশাসনের কাজকর্ম চলেছে ইংরেজীতে। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর, প্রশাসনের মুলশক্তি, ব্যুরোক্রেটরা সবকিছু করতো ইংরেজীতে, ওদের আচার-আচরণ অনেকটা বৃটিশের মতোই ছিলো, এরা ছিলো ভারতীয় ইংরেজ। এই অবস্হায়, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা দেন, পুরোপুরি ভুল পদক্ষেপ।
পাকিস্তান যখন স্বাধীন হয়েছিল, মানুষের জন্য চাকুরী সৃষ্টির দরকার ছিলো; কিন্তু তা ঘটেনি, প্রশাসনের বাহিরে অন্যত্র চাকুরী হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো না; অনেক লোকজন ভারতে চলে যাওয়ার ফলে, সরকারী কিছু পদ খালি হচ্ছিল, মানুষ সেই চাকুরীগুলো পাবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে; সেই সময়, রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দু হলে, প্রশাসনে বাংগালীদের চাকুরী পাবার সম্ভাবনা আর থাকার কথা নয়।
জিন্নাহের ঘোষণার ফলে, উর্দুভাষীরা সহজে প্রশাসনে চাকুরী পাবার সম্ভাবনা বাড়লো; পুর্ব পাকিস্তানের লোকজন উর্দু তো দুরের কথা, বাংলায়ও লিখা শিখেনি তখনো। জিন্নাহ ভাষা মাষা নিয়ে পাগলামি ছাগলামী করছিলেন; কিন্তু চাকুরী সৃষ্টি করার মতো দক্ষ ছিলেন না; ফলে, কাজের থেকে অকাজ বেশী শুরু করলেন।
১৯৪৮ সালে, ১৯৫০ সালে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে কোন সব পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়তেন? বুঝতে পারছেন, আজকের মতো, তখন সাধারণ পরিবারে লেখাপড়া ছিলো না; কিন্তু হিন্দু ছাত্রদের পরিমাণ বেশ ছিলো; এরা এমনিতেই উর্দু ভালোবাসতেন না; তদুপরি উর্দুর কারণে, বাংগালীরা সরকারী চাকুরী হতে বন্চিত হবে, এই ব্যাপারটা বুঝতে পারেন।
১৯৫০ সালে, জিন্নাহ সাহেব ঢাকা এসে ইউনিভার্সিটিতে বক্তব্য রাখার সময়, একজাতি, একভাষা, একই পোশাকের উপর জোর দেন; সেখানে তিনি উর্দুকে জা্তীয় ঐক্যের ভাষা হিসেবে, রাষ্ট্রীয় ভাষা করার ঘোষণা দেন। আর যায় কোথায়, ছাত্ররা উনাকে উল্টো লাল কার্ড দেখান, উল্টো দাবী রাখেন, বাংলাই হবে রাষ্ট্র ভাষা; ইহাতে উনি ব্যথিত হয়েছিলেন।
মুসলিম লীগের নেতারা ও পশ্চিম পাকিস্তানের লোকজন ভাবতেন, উর্দু হলো আরবী ভাষার ছোট ভাই, ধর্মীয় কথাবার্তা উর্দুতে বললে ভালো লাগে, বাংলাতে উহা সুন্দর শোনায় না। পশ্চিম পাকিস্তানের অশিক্ষিত মানুষজন বাংগালী ভাইদের উর্দু-বিরোধীতার কথা শুনে বাংগালী ভাইদের ব্যাপারে হতাশ ও রাগান্বিত হয়েছিলো।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৬