সামুর ব্লগাদের অনেকেই আমাদের দরিদ্র জাতীর জাতীয় কবির (১৮৯৯-১৯৭৬) কবিতা পড়েছেন; অনেকই কবির ১০ লাইন কবিতা নকল করে, পরীক্ষার খাতায় লিখে বাংলায় কোন প্রকারে পাশ করেছেন; এটাও কম সৌভাগ্যের কথা নয়। কিন্তু গার্মেন্টস'এর কোন মেয়ে, সিএনজি চালক, সৌদীতে যাওয়া সস্তা শ্রমিকেরা কখনো কবি নজরুল ইসলামের কবিতা পড়েছেন বলে মনে হয় না; কবি কিন্তু এদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলতে গিয়ে কবিতা লিখেছিলেন; যাদের জন্য তিনি লিখলেন, তারা আজো পড়তে জানে না!
১৯২২ সালে, বৃটিশ কলোনিয়েল সিষ্টেম থেকে ভারতের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য বাংগালীদের উদ্দেশ্য করে কবি 'বিদ্রোহী' কবিতা লেখেন; ১৯২২ সালে পুর্ব বাংলার শতকরা কতজন কবিতা পড়তে জানতেন? ১৯৪৭ সালে, পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার সময়, শতকরা ১২ জন বাংগালী শিক্ষিত ছিলেন; এখন, শতকরা ৬৫ জন বাংগালী নাম লিখতে পারেন। ১৯৪২ সালে কবির কবিতা লেখাই বন্ধ হয়ে গেছে।
জন্ম থেকে তিনি রাজকবি ছিলেন না, শাহনামা লিখে স্বর্ণমুদ্রা, রৌপ্যমুদ্রা কোনটাই পাননি; মাত্র ৯ বছর বয়সে বেকারীতে কাজ করতে হয়েছে কবিকে; সেই সময় থেকে তিনি 'লেটো দলের জন্য গান' লিখেছেন; এসব গান ছিলো কলোনিয়েল সিষ্টেমের বিপক্ষে, তাই অনেক শ্রোতা ছিলো উনার।
কিন্ত দারিদ্তা উনার চিরবন্ধু ছিলো, ১৯১৭ সালে, ১৮ বছর এসএসসি'র সমমানের পরীক্ষার ফি যোগাড় করতে না পারায়, পরীক্ষা না দিয়ে তিনি টাকা উপার্জনে মনযোগ দেন, বৃটিশের সেনা বাহিনীতে যোগদান করেন; ইংরেজদের পক্ষে ১ম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। দেখছেন, দারিদ্রতা মানুষকে কি করে; ইংরেজ বিরোধী মানুষ, পেটের দায়ে ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধে গেছেন!
১৯৩৯ সালে উনার স্ত্রী প্রমিলা দেবী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হন, চিকিৎসার টাকা ছিলো না; ১৯৪১ সালে কবি নিজেই অসুস্হ হয়ে পড়েন, এবার উনার চিকিৎসার পয়সাও নেই। স্বামী স্ত্রী ২ জনেই অসুস্হ; তখন ইংরেজরা ২য় বিশ্বযুদ্ধে লিপ্ত; ১৯৪২-৪৩ সালে বাংলায় ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নয়, তার থেকে হাজার গুণে ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ ছিলো।
আজকের কলিকাতার লোকেরা বেশ কৃপণ; কিন্তু ১৯৪১ সালে কলিকাতার লোকেরা কবিকে সাহায্য করেছেন! হয়তো বিরাট নয়, তারপরেও করেছেন, বিদেশে পাঠায়েছেন; আজকে ঢাকায় কোন ব্লগার অসুস্হ হলে, কেহ সাহায্য করবে বলে মনে হয় না।
আমাদের শেখ সাহবে জীবনে একটা বড় কাজ করেছিলেন, দুস্হ কবিকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন; থাকার ও খাবারের ব্যবস্হা করেছিলেন; কবি জীবনের শেষ দিন গুলোতে দারিদ্রতা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। শেখ সাহেব আমাদের জাতির মুখোজ্বল করে গেছেন। খুবই খারাপ লাগে যে, প্রমিলা দেবী উনার স্বামীর সামান্য সুখের সময়টা দেখে যেতে পারেননি; প্রমীলা দেবীর মৃত্যু হয়েছিলো ১৯৬২ সালে; উনি অসুস্হ স্বামীর দু:খ দেখে গেছেন, মনে অনেক কষ্ট নিয়ে গেছেন নিশ্চয়! কোন স্ত্রী নিজের স্বামীকে কিংবা নিজের সন্তানদের দরিদ্র দেখতে চান না নিশ্চয়ই!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫২