তুরস্কের মুল ভুখন্ড এশিয়ায় হলেও, ইউরোপিয়ানরা তুরস্ককে ইউরোপের দেশ হিসেবে গণ্য করে আসছিলো এতদিন; এই ১ম বার তুরস্ক ইউরোপের বলয় থেকে বের হচ্ছে, নিজকে ধর্মীয় জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে চাচ্ছে; ইউরোপ জানে, তুরস্ক মুসলিম প্রধান দেশ; কিন্তু ইউরোপ তুরস্ককে অন্য মুসলিম দেশগুলোর মতো করে দেখেনি; কারণ, তুরস্কের প্রতিষ্ঠার সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিলো, তারা দেশকে ধর্ম-নিরপেক্ষ হিসেবে দাঁড়া করতে সক্ষম হয়েছিলো।
আধুনিক সভ্যতার শুরু রেনেসাঁ (১৩০০ সাল - ১৭০০ সাল) থেকে, বর্তামান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্হার মুলে হচ্ছে ফরাসী বিপ্লব(১৭৮৯-১৭৯৯), ইউরোপের লোকজন হচ্ছেন এগুলোর উদ্ভাবক। রেনেসাঁর সামাজিক পরিবর্তনের সময়ে একটি বড় প্রতিপক্ষ ছিল ধর্ম , রাজতন্ত্রের বিপক্ষের প্রবক্তাদের বিপক্ষে ছিলো ২টি শক্তি: ধর্ম ও রাজশক্তি। ইউরোপ রাজতন্ত্রকে থামায়েছে, সাথে সাথে রাষ্ট্র ও মানুষের জীবনের উপর ধর্মের কন্ট্রোলকে শিথিল করেছে। এখন, ধর্ম ইউরোপের মানুষের সামাজিক জীবনের সাথে মিশে গেছে, সেখানে ধর্ম নিজের জন্য সঠিক স্হান খুঁজে পেয়েছে, উহা কোনভাবে রাষ্ট্রযন্তকে কন্ট্রোল করে না।
তুরস্ক ইউরোপীয় বলয়ে থাকার ফলে, অন্য মুসলিম দেশগুলো থেকে তুরস্কের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহজ হয়েছিলো; তুরস্কের লোকজন ইউরোপের বহুদেশে সহজেই চাকুরী পেয়ে আসছিলো। তুরস্কের মুল বাণিজ্যও ছিলো ইউরোপমুখী; তুর্কীরা এক সময় ইউরোপের দর্জি ছিলো; পরে তারা ছোট শিল্পে ভালোই করেছে ও ইউরোপীয় বাজারে ছিলো; এখন সে এশিয়ামুখী হচ্ছে, পশ্চিম দ্বার বন্ধ করে দিচ্ছে।
গত ৪ দশকে তুরস্ক ক্রমেই পেছনে পড়ে যাচ্ছিল; তারা ইউরোপের মতো দ্রুত গতিতে বদলাতে পারছিল না: শিক্ষা, টেকনোলোজী ও ম্যানুফেকচারিং তারা শ্লো। একই সময়ে, তাদের রাজনীতিতে ধর্মীয়রা ক্রমেই শক্তি যোগাড় করে আসছে; আসলে, তুরস্কের রাজনীতিতে ধর্মীয়দের ভুমিকা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা: তুরস্কের জন্মটা ছিল বেশ কমপ্লেক্স, ইহা অটোম্যান সাম্রাজ্য (১২৯৯-১৯২২) থেকে রিপাবলিক হয়ে জন্ম নিয়েছে; জন্মের সময় ২টি শক্তির মাঝে ভয়ানক শক্তি পরীক্ষা হয়েছিলো: রিপাবলিক ও রাজতন্ত্র; রিপাবলিকের পক্ষে ছিলেন কামাল আতাতুর্ক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদরা; রাজতন্ত্রের পক্ষে ছিলো শেষ সুলতান মোহাম্মদ-৬ ও ধর্মীয়রা।
এরদেগান গত ৪ দশকে ধর্মীয়দের উত্থানকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় আসেন ও ক্ষমতায় থেকে যাচ্ছেন বিবিধ ধর্মীয় কৌশল কাজে লাগায়ে; ইহা এরদেগানের জন্য কাজ করছে, ধর্মীয়দের জন্য কাজ করছে; কিন্তু তুরস্ক ক্রমেই ইউরোপ থেকে আলাদা হয়ে নিজেদের জন্য পুর্বমুখী একটা দরজা খুলেছে। ইউরোপ কিন্তু ইহাকে আর তুরস্ক হিসেবে নিচ্ছে না, তারা ইউরোপের বুকে আগামীদিনের আফগানিস্তান বা ইয়েমেন দেখছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২১