আমার চলাচল সচারচর বাসা - অফিস, অফিস - বাসা। গার্মেন্টেস এ কামলা খাটি তাই দেশের খবরাখবর বলতে, কনটেইনটার বাহি লড়ি ও কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট ছাড়া কিছু খোজ রাখার সময় থাকে না বা প্রয়োজনও থাকে না। এর বাইরে যেটুকু সময় পাই সেটুক হয় বাচ্চাদের সাথে অথবা পোষাপাখিদের সাথে ব্যয় করি। অতিব দরকার ছাড়া বাইরে যাই না।
গতকাল রাত ৮টার দিকে বের হলাম একটু প্রয়োজনে। জেলা শহর ও আমি যেহেতু বের হইনা সে জন্য এটা আমার জন্য বেশ রাত। কিপটামি স্বভাব ও স্বারিরিক পরিশ্রম বিবেচনায় আমি ১০মিনিটের রাস্তায় সর্বদা পা'জোড়া ব্যবহার করি। তো পা জোড়ার ব্যবহারে যখন এগিয়ে চলেছি, চারিদিকে শুধু লবন লবন শব্দ, এবং মোটামুটি বাজার ফেরত সবার হাতেই লবনের ব্যাগ। ঘটনা কি? রাষ্ট্রকি তা হলে পেয়াজের গন্ধ দুর করতে লবন নিয়ে মেতে উঠল নাকি। কাজ সেরে হাটছি এককাপ লাল চা' খাবার আশায়। পথে চোখে পড়ল কমলা লেবু, চায়ের কথা ভুলে কমলা লেবু কিনতে গেলাম, দোকানী আমার কাছে কমলা বিক্রিতে যতটা না আগ্রহী তার থেকে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠল লবনের কথা নিয়ে। আমি নড়েচড়ে উঠলাম তা হলে কি লবন গুজব সত্যিই নাকি। এজনই কি হাতে হাতে লবন।
এবার গিয়ে দাড়ালাম এক মুদি দোকানে, সেখানেও লাইন লবনের জন্য। এক মহিলা আসল ৫কেজি লবন কিনতে, দোকানী ১কেজির বেশি বিক্রি করবে না। মহিলা নাছোর বান্দা সেও কিনবে, শেষমেশ দোকানদারকে প্রস্তাব করছে দাম বেশি হলেও তার ৫কেজিও লাগবে। আমি গিয়েছিলাম মেথি কিনতে, এসব কান্ড কারখানা দেখে ভুলেই গেলাম আমার মেথির কথা।
বাঙালির একটা স্বভাব আছে তা হল দাম বাড়তি দেখলেই অধিক পরিমানে কিনে স্টক করা। সদ্য পেয়াজের দাম আজ দেশিটা ১৫০ আমদানি করাটা ১২০ আগামীকাল ইনশাল্লাহ আরো অনেক কমে যাবে। পেয়াজের দামের সময় প্রতিটা দোকানে পেয়াজ কেনার হিড়িক। আমি ৫০করে "স্বপ্ন" থেকে পেয়াজ কিনে ঘর ফিরলাম, বাসায় গিয়ে শুনি পেয়াজ নাকি ১০০। খোজ নিতে গিয়ে দেখি সত্যিই ১০০। এখানে এমন তো নয় যে পেয়াজ সে রাতে কিনে এনেছে যার ফলে দাম বৃদ্ধি। প্রতিটা দোকানেই অনন্ত ১সপ্তাহের পিয়াজ স্টক থাকে, আড়তেও তাই। এখানে খুচরা বিক্রেতা থেকে আড়ৎদার কেও কিন্তু সৎ না। এখানে প্রশাসন বা সরকারপক্ষের কেও কিন্তু দাম বাড়ায়নি। দাম যা বাড়ানোর বাড়িয়েছে আমার-আপনার মত কারো ভাই, কারো প্রতিবেশ, কারো আত্মীয়। এখানে আমাদের আত্মীয়, প্রতিবেশী, ভাই এরাই কিন্তু চারিদিকে অতিরিক্ত লাভের আশায় দাম বৃদ্ধি করছে। আর প্রশাসনে এদেরই কেও না কেও।
মোড়ের রিক্সওয়ালা থেকে শুরু করে দেশের সর্বস্তরের মধ্যে সৎলোকের দেখা মেলা বড়ই কষ্টকর।
আকাশে মেঘ, অফিস সময়, আর উৎসব বাড়লেই রিক্সভাড়া দিগুন, আমরাও আজ ৫মিনিটের রাস্তা হাটতে চাই না। আমাদের আর্থিক স্বচ্ছলতায় শরীর একটু গরম হলেই ছুটে যায় ডাক্টারের কাছে, ডাক্টার বসেই আছে লম্বা প্রেসক্রিপশন নিয়ে, জ্বরের এক দিনেই ৩টা টেস্ট, এন্টিবায়োটিক, ভিটামিন এবং এমন সব ভৃতিকর কথা বলবে যে আপনি আবার ৩দিন বাদে ছুটতে বাধ্য। প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে গেলেন ফার্মেসিতে, এবং ৫টা অষুধের মধ্যে ২টি নকল অষুধ গছিয়ে দিবে। বাড়িতে এসে খাবেন আর মুচকি মুচকি হাসবেন, যাহ রোগ তুই বিদেয় হ।
আমরা কথায় কথায় সরকারী লোকজনদের ঘুষ/দুর্নীতি নিয়ে দোষ দিয়ে থাকি। কিন্তু নিজের দিকে আঙুল তুলি না। গার্মেন্টেস এ কামলা খাটি এটা বেশ মজার জায়গা যেখন থেকে National and International চিটার বাটপারের দেখা মেলে। একজন মার্চেটডাইজার ৫-১০বছর চাকরী করে বিলাসবহুল বাড়ি, গার্মেন্টস এর মালিক বনে যান, কিভাবে যান সে কথা থাক, কাখানায় শ্রমিকদের টিফন দেয়া হয় সেটা কখনও মালিককৃত বরাদ্দের সমমানের থাকে না, বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের উপহার সামগ্রী দেয়া হয় সেখানেও একই অবস্থা। ৩০হাজার টাকা বেতনে চাকরী করে ৫তলা বাড়ি বানিয়ে ফেলে নিশ্চয় সৎপথে না সেটা নিঃস্বন্দহে বলা যায়।
ঠিক এভাবে প্রতিটা স্তরে আজ অসৎ লোকে ভরপুর। সেখানে প্রশাসন বা সরকারের কিইবা করার আছে যদি না মানুষ নিজেদের অবস্থান থেকে সৎ না হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪১