সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে সোজা রেস্টুরেন্টে চলে গেলাম। খিদেয় পেট জ্বলছে। ওয়েটারকে অর্ডার করতেই খাবার সামনে হাজির। খাওয়া শুরু করব এমন ক্ষণে এক বয়স্কলোক আমার মুখোমুখি আসনে বসল। আমাকে ভালো করে কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করে খাবারের দিকে তাকাল। আমি কিছুটা বিব্রতবোধ করলাম। লোকটা হয়ত কিছুটা অনুমান করতে পেরেই ওয়েটারকে ডাকল। — ৫ টেখার খিচুরি দিলাওবা। ওয়েটার জোরে বলল—৫ টেখার খিচুরি নাইবা চাছা! বিশ/ত্রিশ টেখার নিতে অইব! ওয়েটারের কথা শুনেই বৃদ্ধলোকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অস্তে করে বলল—অত টেখা নাই বা চাছা। কথাটি বলেই হোটেলের সব লোকদের একবার দেখে নিল। ছোটো হোটেল। কিন্তু মানুষে টইটম্বুর। সবাই খাচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। হোটেল ম্যানেজারও একবার তাকাল। কিন্তু কিছু বলল না। আমি ওয়েটারকে বললাম—দিলাওবা বিশ/ত্রিশ টেখারই দিলাও। বিল আমি দিমু।
ওয়েটার কী বুঝে একটু ম্লান হাসল। এরপর ঝড়ের গতিতে ছানা, পিয়াজু, সালাদ মিলিয়ে একপ্লেট খিচুরি নিয়ে এলো। লোকটি আমার দিকে একবার তাকাল। আশ্রুভেজা চোখ। এরপর আপন মনে খাওয়া শুরু করল। হয়ত আমার মতোই দীর্ঘ সময়ের অনাহারী, হয়তবা তারও বেশি! বিল খুব বেশি নয়। কিন্তু তা পরিশোধ করে মনের মধ্যে যে প্রশান্তি পেলাম সেকি আর ভাষায় প্রকাশ করা যায়! জীবনের কিছু ভালো কাজের মধ্যে এটাও একটা ভালো কাজ। জয় হোক মানুষের, মানবতার।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫৩