somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মতিঝিলের ঘটনায় মিডিয়াকে নীরব রাখা হয়েছে : ইকোনোমিষ্ট

১১ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকার মতিঝিলে ৫ মে মধ্যরাতে হেফাজতে ইসলামের ঘুমন্ত কর্মীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ অভিযানে ঠিক কতজন মানুষ হতাহত হয়েছে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। বাংলাদেশের মিডিয়ায় ৫ মে দুপুর থেকে ৬ মে সারাদিনে মোট কতজন নিহত হয়েছে তার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। তবে মধ্যরাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কতজন নিহত বা আহত হয়েছে তার কোন সংখ্যা প্রকাশ করেনি। এ অবস্থায় লন্ডন থেকে প্রকাশিত পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, ঢাকার ভীতসন্ত্রস্ত স্থানীয় মিডিয়াকে সম্পূর্ণভাবে নীরব রাখা হয়েছে। ‘পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স ইন বাংলাদেশ, ইন হট ব্লাড। দ্য কিলিং অব ইসলামিস্ট হার্ডলাইনার প্রমিজ ফারদার ইন্সটেবেলিটি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি আজ প্রিন্ট ভার্সনে প্রকাশিত হবে। তবে পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে শুক্রবারই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রানা প্লাজা ভবন ধসে ৯ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়তো যথেষ্ট ছিল না, এখন নতুন করে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যু ঘটেছে। ৬ মে ভোরের কয়েক ঘণ্টায় ঢাকায় যা ঘটেছে তা গণহত্যার মতোই মনে হচ্ছে। ইউরোপিয়ান কূটনীতিকরা বলছেন, রাজধানীতে কট্টর ইসলামপন্থীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে (ক্র্যাকডাউন) প্রায় ৫০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। দেশের অন্যত্র আরও অনেক বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সুনামধারী মানবাধিকার সংস্থা অধিকার বলছে, পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারীদের সমন্বয়ে ১০ হাজার সদস্যের এক যৌথ অভিযানে শত শত লোক নিহত হয়েছে। ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকার রাস্তায় যত্রতত্র লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ঢাকার বাইরেও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর দক্ষিণে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছে ২০ জন। শাপলা চত্বরে আসলে কী হয়েছে তা অস্পষ্ট। কারণ, ভীতসন্ত্রস্ত স্থানীয় মিডিয়াকে ব্যাপকভাবে নীরব রাখা হয়েছে। গুলি শুরু করার আগে পুলিশ ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মাদ্রাসা থেকে আসা তরুণ ছাত্রসহ হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার জন্যই এ গুলিবর্ষণ করা হয়। এসব তরুণ ছাত্র হেফাজতকর্মী। এখন পর্যন্ত এই ইসলামপন্থী সংগঠনটি ছিল স্বল্প পরিচিত। দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদ্রাসার সমর্থন নিয়েই মূলত এটি দেশব্যাপী নিজের অস্তিত্বের জানান দিয়েছে। এপ্রিলে লাখ লাখ হেফাজত কর্মী ঢাকায় লংমার্চ করে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন। তারা এসব দাবি মেনে নিতে সরকারকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত সময় দেন। এসব দাবির মধ্যে ইসলাম অবমাননার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের কথাও রয়েছে। এছাড়া তালেবান স্টাইলে তারা বাংলাদেশের নারী উন্নয়ন নীতিমালাও বাতিল করার দাবি জানান। তারা বলেন, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করতে হবে; অশালীন আচরণ ও পোশাক পরিধান বন্ধ করতে হবে এবং আহম্মদিয়া তথা কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ যে আধুনিক ইসলামচর্চা করেন তার সঙ্গে এ ধরনের সেকেলে দাবি সাংঘর্ষিক। সেই সঙ্গে এসব দাবি দেশের সাধারণ সেকুলার ধারার বিরুদ্ধে যায়। যদিও অস্বস্তিকরভাবে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) হেফাজতকে সমর্থন দেয়। ফলে বিএনপির ইসলাম-ঘেঁষা মনোভাব আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দলটি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও জোটবদ্ধ রয়েছে। এই ধর্মীয় দলটি আবার সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর ধ্বজাধারী। এপ্রিলে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া আরব কূটনীতিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠক থেকে বোঝা যায়, দলটির প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক শক্তি। এমনকি সেকুলার আওয়ামী লীগও নির্বাচনের আগে তাদের ইসলামপন্থী সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে নেয়। যেমনÑ ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ কট্টর ইসলামপন্থী দল খেলাফত মজলিসের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। ওই চুক্তিতে আওয়ামী লীগ আজকের হেফাজতের মতোই বিভিন্ন দাবিদাওয়া বাস্তবায়নের প্রতিশ্র“তি দেয় খেলাফত মজলিসকে। তবে ২০০৬ সালের নির্বাচন না হওয়ায় আর সেসব নিয়ে কোন কথা ওঠেনি। এবারও আগামী নির্বাচনের আগে যা ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে হবে। সে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নিজেকে ইসলামের পক্ষের শক্তি প্রমাণে ব্যস্ত। গত মাসে চার নাস্তিক ব্লগারকে গ্রেফতার করতে পুলিশ পাঠানো হয়। ৬ মে মতিঝিলের ঘটনার পর হেফাজতের ৯০ বছর বয়সী নেতাকে বিমানযোগে চট্টগ্রামে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ দেখাতে চেয়েছে যে, তারা ওই নেতাকে আটক করেনি।
সামনের মাসগুলো মনে হচ্ছে আরও সংঘাতময় হয়ে উঠবে। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত উগ্র ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে আদালত তাদের রায় দেয়া অব্যাহত রাখেন। এসব অভিযুক্তের প্রায় সবাই জামায়াতে ইসলামীর নেতা। এর আগে ফেব্র“য়ারিতে এক রায়কে কেন্দ্র করে সংঘাতে অন্তত ৬৭ জন নিহত হয়। ৯ মে আদালত জামায়াতের আরেক নেতা মুহম্মদ কামারুজ্জামানকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। বাংলাদেশের জন্য আরও রক্তপাত অপেক্ষা করছে।


যুগান্তর ডেস্ক থেকে : http://www.jugantor.us/2013/05/11/news0528.htm
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×