somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চা শ্রমিকদের আন্দোলন এবং ইংরেজ আমলের নীল বিদ্রোহ

২৫ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




চা বাগান শব্দটা শুনলেই অপরুপ সুন্দর এক সবুজ প্রকৃতির ছবি আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। পর্যটকদের কাছে সমুদ্র , পাহাড়ের মতই সমান আকর্ষনীয় এই চা বাগান। বহুবার বেড়াতে গিয়েছি সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন চা বাগানে। প্রতিবারই মুগ্ধ হয়েছি চা বাগানের অপরুপ প্রকৃতিতে। বিশাল হ্যাট পড়ে পিঠে ঝুড়ি বেধে চা বাগানে কাজ করার শ্রমিকদের চা তোলার দৃষ্যও বড় মোহনীয়। চা বাগানের বেড়াতে গিয়ে চা শ্রমিকদের ছবি তোলাও অনেকগুনে বাড়িয়ে দেয় ছবির সৌন্দর্য।

ছবির মত সুন্দর চা বাগানগুলোতে কাজ করা শ্রমিকদের জীবন আসলে কেমন সেই বিষয়ে তেমন কিছু জানা ছিল না। । আমাদের দেশের লেখকদের গল্প উপন্যাসে চা বাগান নিয়ে কোন গল্প কখনও পড়িনি। তবে ইন্ডিয়ান অনেক লেখকদের উপন্যাসে চা বাগান নিয়ে বেশ কিছু লেখা পড়েছি। এসব গল্প থেকে স্বল্প যে ধারনা পেয়েছি তা হচ্ছে '' চা বাগানে মুলত মহিলা শ্রমিকেরা বেশি পরিশ্রম করে। পিঠে বাচ্চাকে বেধে অনেক নারী শ্রমিক চা বাগানে চা তোলে। পুরুষগুলো দিনের বেলা চা তোলে আর সন্ধায় মহুয়া খেয়ে পড়ে থাকে। দারিদ্রতায় পরিপুর্ন মহিলা চা শ্রমিকদের জীবন সংগ্রাম বড় কঠিন।''

বর্তমানে চা শ্রমিকদের ডাক দেয়া ধর্মঘটে সামনে এসেছে তাদের স্বল্প মজুরির কথা। দৈনিক মাত্র ১২০ টাকা তাদের মজুরি। তবে সেটাও পাওয়া যায় ২০ কেজি চা পাতা তুলতে পারলে। সাম্প্রতিক চড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রক্ষাপটে এই ১২০ টাকায় কি একটি পরিবারের বেঁচে থাকা সম্ভব? গত ৯ই অগাস্ট থেকে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ধর্মঘট শুরু করে চা বাগানগুলোর প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। তাদের এ দাবী কি খুব অযৌক্তিক কোন দাবী? এবারের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে চা শ্রমিকদের দাসত্বের পেছনের কারন নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট মিডিয়ায় এসেছে।। চা শ্রমিকদের শোষণের প্রশ্নে দেশীয় এনজিও, শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপ, শীর্ষ মিডিয়া, ইউরোপীয়, ভারতীয়, সবার স্বার্থ মিলেমিশে একাকার। চা বাগানের শ্রমিকদের যে দাসোচিত অবস্থা এর জন্য দায়ী মূলত এসব প্রতিষ্ঠানই। সুত্রঃview this link


মিডিয়ায় আসা এসব রিপোর্ট পড়তে পড়তে বহু আগের সেই ইংরেজ আমলের ''নীল বিদ্রোহের'' কথা মনে পড়ে গেল। ১৮৩৩ সালে ব্রিটেন থেকে দলে দলে ইংরেজ নীলকররা বাংলায় আগমন করে ইচ্ছামত নীলের চাষ শুরু করে। ১৮০৩ সাল পর্যন্ত নীল চাষে যে খরচ হত, তার সবটাই কোম্পানি অল্প সুদে অগ্রিম প্রদান করত। এতে যে নীল উৎপাদিত হত, তার সবটাই যেত ইংল্যান্ডে এবং কোম্পানি বহুগুণ বেশি লাভ করত। এই ব্যবসা এতই লাভজনক ছিল যে, বহু কর্মচারী ও সরকারি আমলা চাকরি ও রাজনীতি ছেড়ে নীলচাষের কারবারে আত্মনিয়োগ করে। বহু দেশীয় জমিদার ও মহাজন ব্যক্তিগতভাবে বা যৌথ মালিকানায় কারবার খোলে এবং ১৮১৫ সালের মধ্যে নদীয়া, যশোর, খুলনা, ২৪ পরগণা, বগুড়া, রাজশাহী, মালদহ,নাটোর, পাবনা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল প্রভৃতি জেলায় অসংখ্য নীলকুঠি গড়ে ওঠে। কিন্ত নীল চাষের চাষীদের মজুরি ছিল খুবই স্বল্প। তখন থেকেই কৃষকদের ওপর নানান অত্যাচার শুরু হয়। ফলে ১৮৫৯ ফেব্রুয়ারি – মার্চ মাসে নীলচাষীরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে নীল চাষ করতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রথমদিকে এই আন্দোলন অহিংস ছিল, কিন্তু নীলচাষ না করার কারণে চাষীদের ওপর ভয়ানক নির্যাতন, গ্রেপ্তার শুরু হলে এ আন্দোলন সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়। এই বিদ্রোহ বাংলার প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীদেরও সমর্থন লাভ করে, বিশেষত চাঁদপুরের হাজি মোল্লা, যিনি ঘোষণা দেন নীলচাষ থেকে ভিক্ষা উত্তম।[৩][৪] সুত্র ঃ উইকিপিডিয়া

ইংরেজদের অত্যাচারের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নীলকুঠি ও বর্তমানের চা বাগানের মাঝে একটা পার্থক্যই কেবল চোখে পড়ছে যেটা হচ্ছে সেই আমলে শ্রমিকের রক্ত চুষেছে ভীনদেশী ইংরেজ বেনিয়া এবং আজকের যুগে রক্ত চুষছে স্বদেশি ব্যবসায়ীরা। আর তাইতো চাঁদপুরের হাজি মোল্লর ''নীলচাষ থেকে ভিক্ষা উত্তম'' কথাটা এই যুগেও বড় বাস্তব বলে মনে হচ্ছে। ভিক্ষার থালা নিয়ে রাস্তায় বসে গেলেও দৈনিক ১২০ টাকার চাইতে অনেক বেশি টাকা উপার্জন করা সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৪১
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×