ফেনীর এক দুরাচারী অধ্যক্ষের অপকর্মের ফলশ্রুতিতে দুর্ভাগা মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের জন্য কেউ কেউ মাদ্রাসা শিক্ষাকে দায়ী করছেন এবং একে সামনে রেখে কেউ কেউ, বিশেষতঃ এই ব্লগের একজন সিনিয়র ব্লগার, মেয়েদের জন্য দেশে বিরাজমান মাদ্রাসা শিক্ষার প্রয়োজনীতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । তাঁর মতে একজন সন্তান, বিশেষত একটি মেয়ে সন্তান, তার বাড়িতে মা বাবার কাছেই যথেষ্ট ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করতে পারেন । মাদ্রাসায় যাওয়ার দরকার নেই ।
আমাদের মনে রাখতে হবে ন্যূনতম ধর্মীয় জ্ঞান সকল মুসলমানের জন্য ফরজ, এখানে ছেলে মেয়ের জন্য আলাদা হুকুম নেই । কাজেই মেয়েদের জন্য সঠিক দ্বীনি শিক্ষার দরকার নেই মনে করা ভুল । কিছুদিন আগেও আমাদের এমনি ধারণা ছিল, ফলে ঘরে মা দাদির কাছ থেকে বা স্বল্প বা অশিক্ষিত মাওলানাদের লেখা মকসুদুল মুমিনীন, নিয়ামুল কোরান, বিভিন্ন আজিফার কিতাব, ফাজায়েলে আমল বা এ জাতীয় ভুলে ভরা বই থেকে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে আমাদের মা বোনেরা অনেকেই ইসলামের সঠিক নিয়ম কানুন না জেনে তাদের নামাজ রোজা ইত্যাদি করে জীবন পার করে গেছেন বা যাচ্ছেন ।
অনেকেই হয়তো দেখে থাকবেন, আজকাল টিভিতে কিছু অনুষ্ঠান হয় (যেমন আপনার জিজ্ঞাসা, জীবন জিজ্ঞাসা ইত্যাদি) যাতে কোনো একজন আলেম জনসাধারণের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে থাকেন । দেখতে পাবেন প্রশ্নকারকদের একটা বৃহদাংশ মহিলা । এতে এমন সব প্রশ্নও আসে যা শুনলে আপনি অবাক হবেন আমাদের অজ্ঞতার পরিসর জেনে ! কঠিন ফিকহী বিষয় বাদ দিন, অত্যন্ত মৌলিক জ্ঞান আমাদের অনেকেরই নেই , "অজু করার পর গায়ের মাহরাম পুরুষের সামনে আসলে বা কথা বললে অজু ভাঙবে কিনা ?" "অজু করে টিভি দেখলে অজু ভাঙবে কিনা ?" "কাজের তাড়া থাকলে ওয়াক্ত হওয়ার আগে নামাজ পড়ে নেয়া যাবে কিনা ?" "নামাজের ওয়াক্ত হয়ে গেছে, কিন্তু এখনো মসজিদে আজান হয়নি, নামাজ পড়া যাবে কিনা ?" রোজা থাকা অবস্থায় ঔষধ খেলে রোজা ভাঙবে কিনা; সেহরির ওয়াক্ত শেষ, কিন্তু মসজিদে এখনো আজান হয়নি, অল্পকিছু খেয়ে নেয়া যাবে কিনা; এহরাম বাঁধার পর বাথরুমে গেলে এহরাম আবার নতুন করে বাঁধতে হবে কিনা ?" ইত্যাদি ইত্যাদি !
এ ধরনের সাধারণ ধর্মীয় জ্ঞান যে কোনো মুসলমানের জন্য থাকা জরুরি যা একজন মার্ জন্যও জানা দরকার । এ জ্ঞান আমাদের মেইন স্ট্রিম স্কুলগুলোতেও দেয়া উচিত। আর কোনো মেয়ে আরো ভালো বা বেশি জানতে আগ্রহী হলে সে যদি মাদ্রাসায় যেতে চায় তাকে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত কেন করা হবে ? মাদ্রাসাকে উন্নত করা যেতে পারে, ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি যুগোপযোগী জাগতিক কল্যাণমুখী শিক্ষাও যাতে শিক্ষার্থীরা পেতে পারে কারিকুলাম সেভাবে ডিসাইন করা বরং দরকার ।
মাদ্রাসায় ভালো আলেমের কাছে ধর্মীয় শিক্ষা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই, যা দরকার সে হলো মাদ্রাসাগুলোকে সেইমতো তৈয়ার করা, উপযুক্ত শিক্ষক, তত্বাবধায়ক, কাউন্সিলর নিয়োগ করে পরিবেশ নিরাপদ করা। মেয়েদের মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান হতে পারে না , শুধু মেয়েদের জন্য সতন্ত্র মাদ্রাসা করা বরং জরুরি । সমাধান খুঁজতে হবে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করায় যেখানে শিক্ষার্থীরা হবে নিরাপদ এবং পাবে সঠিক শিক্ষা যা দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য কল্যাণকর। সর্বপোরি দরকার সমাজে, দেশে, যে কোনো অবিচার অনাচারের যথাযোগ্য বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা । সার্বিক কল্যাণ তাতেই নিহিত ।
আপনার জিজ্ঞাসার একটা অনুষ্ঠান উদাহরণ হিসাবে এখানে দেখতে পারেন, https://www.youtube.com/watch?v=NIrGEo6VtxI
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৯:০৩