somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাস্কফোর্স ৭৪

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডিসেম্বর ১৯৭১, বাংলাদেশের চুড়ান্ত বিজয়ের এই ক্রান্তিলগ্নে ,পাকিস্তান যখন পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় ফ্রন্টে প্রায় ধরাশায়ী, অন্যদিকে তখন পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার লক্ষ্যে, পাকিস্তানের অন্যতম মিত্র দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে প্রেরন করেছিল তৎকালীন সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী "ইউ এস এন্টারপ্রাইস" এর নেতৃত্বে নৌবহর যা "টাস্কফোর্স ৭৪" নামে পরিচিত।
কিন্তু বাংলাদেশের পরম বন্ধু এবং মিত্রশক্তি ভারত এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্রুতগতিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত , বঙ্গোপসাগরের প্রবেশ মুখ ভারত মহাসাগরে - "সোভিয়েত নৌ মহড়া", ইঙ্গ-মার্কিন চক্রের এই পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেয়, যার ফলে আমাদের পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা প্রাপ্তি ত্বরান্বিত হয়।


বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে , বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া , পত্রপত্রিকা ফলাও করে প্রকাশ করছে যে "১৯৭১ সালে বঙ্গোপসাগরে ৭ম নৌবহর পাঠানোর কোন ঘটনাই ঘটে নি , সোভিয়েত ইউনিয়নের , মার্কিন নৌবহর "টাস্কফোর্স ৭৪" কে প্রতিরোধ করা ছিল নিছক ধাপ্পাবাজি " ইত্যাদি । যেখানে পৃথিবীর স্বনামধন্য প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে ১৯৬২ সালের কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের, ইঙ্গ-মার্কিন জোটকে ভারত মহাসাগরে প্রতিরোধ করা ছিল স্নায়ুযুদ্ধ সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, সেক্ষেত্রে এদেশের কিছু মিডিয়া,পত্রপত্রিকা এবং বুদ্ধিজীবীর এই ঘটনাকে "মিথ্যা" এবং "কখনোই ঘটেনি" বলে প্রচার করা যে ঊদ্দেশ্যমূলক সেটা বলাই বাহুল্য।

পাঠক , ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরোধের মুখে ইঙ্গ-মার্কিন শক্তির ভারত মহাসাগর থেকে পলায়নের ঘটনা, তাদের এদেশীয় দালাল কতিপয় মিডিয়া ব্যক্তিত্বের আঁতে ঘা লাগাবেই। ইঙ্গ- মার্কিন শক্তির পয়সায় ফুলে , ফেঁপে ওঠা সেইসব মিডিয়া ব্যক্তিত্ব , যারা এককালে মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরত, চট্টগ্রামের রাস্তায় কাঁধে ঝোলা নিয়ে "একতা" পত্রিকা বিলি করে বেড়াত , তারা বর্তমানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারে ব্যস্ত। বাংলাদেশ সচিবালয় থেকে প্রভাবশালী জায়গা "কাওরান বাজার" থেকে তারা "জন কেরি" কে দিয়ে যুদ্ধ অপরাধিদের বিচার ঠেকান ,পদ্মা সেতু আটকান- আরও কত কি ? । সুতরাং ১৯৭১ সালে সোভিয়েতের ভয়ে তাদের দাদা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের পলায়ন অবশ্য ই তারা খুব সহজে মেনে নিতে পারেন না , তাই এত বড় ঘটনাটিকে প্রস্নবিদ্ধ করার কিংবা ধাপ্পাবাজি বলে চালিয়ে দেওয়ার তাদের এই অপচেষ্টা। যাই হোক এই নিয়ে আরেক দিন লেখা যাবে।

শুরুতেই আমি আলোচনা করার চেষ্টা করব একটা খুবই স্পর্শ কাতর বিষয়। যদি ৭ম নৌবহর বা টাস্কফোর্স ৭৪ এর যুদ্ধজাহাজ গুলো বঙ্গোপসাগরে পৌঁছে করাচী কিংবা চট্টগ্রামে নোঙর করত , তাহলে কি ঘটতে পারত ? কিংবা কিভাবে এটি আমাদের স্বাধীনতা প্রাপ্তিকে আরও জটিল করে তুলতে পারত?

আমার ব্যক্তিগত সামরিক বিশ্লেষণ থেকে যা আমি চিন্তা করেছি তা হল সেই সময়কার টাস্কফোর্স ৭৪ কিংবা ৭ম নৌ বহরের যুদ্ধজাহাজ গুলোর কার্যক্ষমতাঃ

১) টাস্কফোর্স ৭৪ এ ছিলো সেই সময়কার সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী "ইউ এস এন্টারপ্রাইস" (কোড- CVN-65) । এই এন্টারপ্রাইসে প্রায় ৭০টি F4B Phantom যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ১৬টি A-4C , SHY HAWKS গোয়েন্দা যুদ্ধবিমান। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে আমাদের মিত্রশক্তি ভারতের এন্টারপ্রাইসকে আটকানোর মত নৌ সামরিক শক্তি ছিল না। ফলে এন্টারপ্রাইসকে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করিয়ে , F4B Phantom যুদ্ধবিমানগুলোকে ব্যবহার করে পূর্ব পাকিস্তানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা কোন ব্যপারই ছিল না।

২) টাস্কফোর্স ৭৪ এ নৌবহরে ছিল আরও একটি যুদ্ধজাহাজ যার নাম USS- Tripoli (LPH-10)। এই যুদ্ধ জাহাজটির বিশেষত্ব হচ্ছে , মার্কিন বাহিনী সাধারণত "Amphibious assault" সামরিক অভিযান করার সময় এই রণতরীটিকে ব্যবহার করে। "Amphibious warfare" হচ্ছে এমন এক ধরনের রণকৌশল – যুদ্ধজাহাজ কে উপকূল হতে দূরে নোঙর করে , যুদ্ধজাহাজ থেকে ছোট ক্যরিয়ার শিপ এর মাধ্যমে সেনা এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম উপকূলীয় এলাকায় পৌঁছে দেওয়া এবং এগুলোকে শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা। অতএব ১৯৭১ সালে টাস্কফোর্স ৭৪ ,বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করলে USS- Tripoli (LPH-10) থেকে প্রচুর পরিমান U.S. Marine Corps এর সদস্যরা , সৈন্যরা সমুদ্র উপকূল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করে পাকিস্তানী সেনাদের যুদ্ধে সহায়তা করত এবং আমদের বিজয় হত বিলম্বিত।

৩) শুরু থেকেই ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের যুদ্ধজাহাজ এবং রণতরীর মাধ্যমে পুরবপাকিস্তানের নৌসীমা অবরোধ করে। ইঙ্গ-মার্কিন নৌবহর সেই অবরোধকে ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানে সহজেই সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারত।

৪) রণতরী “ ইউ এস এন্টারপ্রাইস “ ত্থেকে F4B Phantom যুদ্ধবিমানগুলোর মাধ্যমে সহজেই U.S. Marine Corps এর সদস্যরা , সৈন্যরা প্যরাসুটের মাধ্যমে পূর্বপাকিস্তানে অবতরন করে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তানী সেনাদের পূর্ণ সহযোগিতা করতে পারত।

কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “টাস্কফোর্স ৭৪ “পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? কেন এটা এতই জরুরী ছিল ?


পাঠক , লেখার এই অংশটি প্রস্তুত করতে আমি ভারতের "Institute for Defense Studies and Analysis" এর মুখপত্র "Journal of Defense Studies" এ প্রকাশিত "Mr.Raghavendra Mishra” এর একটি গবেষণা পত্রের সাহায্য নিয়েছি। তাঁর মতে ১৯৭১ সালে আগস্ট মাসে ভারত-সোভিয়েত সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর , এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিক্সন-কিসিঞ্জার administration এর যথেষ্ট মাথাব্যথার কারন হয়ে ওঠে । তারা তাদের চিরদিনের মিত্র পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য তাদের আদর্শ গত শত্রু চীনের সাথে জোট গঠনের লক্ষে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়।

৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান ভারতকে সামরিক ভাবে আক্রমন করার পর, ভারতীয় নৌবাহিনীর তৎকালীন চীফ অফ নেভাল স্টাফ "অ্যাডমিরাল এস এম নন্দ" পাকিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা করাচী সমুদ্র বন্দরের উপর পাল্টা আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। ৪ এবং ৫ ই ডিসেম্বর ভারতীয় নৌ বাহিনী “Operation Trident" নামক নৌ সামরিক অভিযান শুরু করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এর সরবরাহকৃত Anti-ship missile ব্যবহার করে করাচী সমুদ্র বন্দরকে প্রায় অকার্যকর করে দেয়।

উপর্যুপরি আক্রমন চলতে থাকে। ৮ এবং ৯ ই ডিসেম্বর ভারতীয় নৌবাহিনী আরেকটি সামরিক অভিযান “Operation Python” শুরু করে। এর মাধ্যমে করাচী সমুদ্রবন্দরের কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় “Fuel Tank” ধ্বংস করে দেয়। যার ফলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মনোবল সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে যায়। কারন করাচী সমুদ্রবন্দর ছাড়া বিশ্বের কোন দেশের পক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পর্যাপ্ত জ্বালানী সরবরাহ করার কোন উপায় ছিল না এবং ভারতীয় নৌবাহিনী করাচী সমুদ্র বন্দরকে প্রায় ব্লক করে রেখেছিল।

৮ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর রাতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ণিক্সন এবং তার প্রধান সামরিক উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার এর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। কিসিঞ্জার এবং নিক্সন এই বৈঠকে সিধান্ত নেন যে তাদের মিত্র পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করার জন্য , পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ভারতীয় আগ্রাসনকে প্রতিরোধ করার তাদের শক্তিশালী রণতরী “ইউ এস এন্টারপ্রাইস" কে বঙ্গোপসাগরে মোতায়েন করা উচিৎ এবং প্রয়োজনে তারা ভারতীয় নৌবাহিনীর উপর হামলা করতে প্রস্তুত।

৯ই ডিসেম্বর ১৯৭১, মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ণিক্সন তাঁর চীফ নেভাল স্টাফ এর সাথে এক বৈঠকে মিলিত হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী “ইউ এস এন্টারপ্রাইস" এর নেতৃত্বে গঠন করেন “ টাস্কফোর্স ৭৪" । এই নৌবহরে ছিল "USS Tripoli (LPH-10)" , "USS USS Anderson" ইত্যাদি রণতরী সমূহ । ৯ই ডিসেম্বর ১৯৭১ মধ্যরাতে প্রেসিডেন্ট নিক্সন টাস্কফোর্স ৭৪ কে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দেন। তখন "ইউ এস এন্টারপ্রাইস" সহ "টাস্কফোর্স ৭৪" এর অন্যান্য রণতরীগুলো ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারনে “Gulf of Tonkin” এ অবস্থান করছিল। ১০ই ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশ সময় সকাল ১০:৪৫ এ “ইউ এস এন্টারপ্রাইস" এবং অন্যান্য রণতরীগুলো বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।

সোভিয়েত আর্মি ইন্টেলিজেন্স কিভাবে এই ব্যপারে জানলো ?
৯ই ডিসেম্বর নিক্সন-কিসিঞ্জার administration এর নৌবহর পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর , হঠাৎ ওয়াশিংটন থেকে একটি তারবার্তা মস্কোতে “কে।জি বি" র হেডকোয়ার্টার এসে পৌছায় যে “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব শীঘ্রই বঙ্গোপসাগরে তাদের রণতরী প্রেরন করবে"। তখন মস্কোতে “কে।জি বি”র প্রধান ছিলেন “লিওনিদ ভ্লাদিমিরবিচ সেবারসিন”। তিনি তৎক্ষনাত এই ব্যপারটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্র সচিব ভি।ভি কুজনেসবকে অবহিত করেন।

ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত নৌ-মহড়াঃ
পাঠক , আমাদের মিডিয়ার কল্যাণে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় নৌবহর যেমন “ইউ এস এন্টারপ্রাইস" সম্পর্কে সবাই জানি। আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেইসব সোভিয়েত নৌবহর , রণতরী এবং নৌসেনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া , যারা ভারত মহাসাগরে প্রতিরক্ষা ব্যূহ রচনা করে “টাস্কফোর্স ৭৪" সহ ইঙ্গ-মার্কিন রণতরীগুলিকে প্রতিরোধ করেছিল।



৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ , সোভিয়েত নৌবাহিনীর ১০ নং অপারেটিভ গ্রুপ ভারত মহাসাগরে টহল দিয়ে তাদের নৌঘাঁটি ভ্লাদিভস্তকে ফিরে যাচ্ছিল। এই অপারেটিভ গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাডমিরাল “ভি সি ক্রুগল্যাকভ”। তাঁর কম্যান্ডে ছিল ৩টি রণতরী - ১টি ভূমিতে নিক্ষেপন যোগ্য পরমাণু মিসাইল ক্যরিয়ার “ভযবুজদেননিখ” , একটি মাইন সুইপার এবং ১টি তেল বাহী নৌযান।



হঠাত মস্কোর সোভিয়েত নেভির সেন্ট্রাল হেডকোয়াটার থেকে অ্যাডমিরাল “ভি সি ক্রুগল্যাকভ” এর সাথে তৎকালীন সোভিয়েত নেভির চীফ অফ স্টাফের সহকারী “নাভোইস্তেভ পিটার নিকোলাইবিচ" কথা বলতে চান। তিনি অ্যাডমিরাল “ভি সি ক্রুগল্যাকভ” কে বলেন “তোমরা ভারত মহাসাগরে অবস্থান নাও এবং ব্রিটিশ রণতরী “ঈগল” যাতে ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি আসতে না পারে”। অ্যাডমিরাল “ভি সি ক্রুগল্যাকভ” তাঁকে বললেন “আমার মাত্র তিনটি রণতরী , এই অল্প সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে আমার এত বড় দায়িত্ন পালন করা সম্ভব নয়। প্রতিউত্তরে “অ্যাডমিরাল পিটার” তাঁকে বললেন “তোমরা এগিয়ে যাও” এবং তোমাদের সাহায্যার্থে খুব শীঘ্রই আরও রণতরী তোমাদের সাথে যুক্ত হতে যাচ্ছে”।



৭ই ডিসেম্বর ১৯৭১ , এই রণতরীগুলোর সাথে যুক্ত হয় আরও দুটি পারমানবিক মিসাইল ক্যারিয়ার – “PABLIN VINOGRADOV” , "PABLIN KHOKREYAKOV” এবং আর তিনটি ট্যাংকার। এই পাঁচটি রণতরী ৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রীলংকা থেকে ৫০০ মাইল দূরে অবস্থান করছিল।



১০ই ডিসেম্বর সোভিয়েত মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এর নির্দেশে সোভিয়েতের ভ্লাদিভস্তক নৌঘাঁটি থেকে আরও ১২ টি রণতরী ভারত মহাসাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পারমাণবিক রকেট ক্রুইসার “ PR 58 ভারিয়াগ” , “PR 61 স্ত্রগি” , “ PR 1134 ভ্লাদিভস্তক” এবং এই গ্রুপের সবচেয়ে চৌকস সাবমেরিন ক্যাটাগরি E.P 675 , এই গ্রুপে প্রায় ৬টি সাবমেরিন ছিল যা পরিপূর্ণভাবে পারমাণবিক টর্পেডোতে সজ্জিত।



১২ই ডিসেম্বর ব্রিটিশ রণতরী “ঈগল” ভারত মহাসাগরে প্রবেশের মুখে, হঠাত এতগুলো সোভিয়েত রণতরীর উপস্থিতি দেখে মাদাগাস্কারের দিকে পালিয়ে যায়।




ওদিকে ১৩ই ডিসেম্বর দিল্লীতে নিয়োজিত সোভিয়েত ডিফেন্স এটাচি মিঃ পাপোভ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে "এন্টারপ্রাইসকে আমাদের সামলাতে দাও , তোমরা তোমাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখ"।

১৪ই ডিসেম্বর ১০ নং সোভিয়েত নৌবাহিনীর অপারেটিভ গ্রুপ এর প্রধান “অ্যাডমিরাল ভি সি ক্রুগল্যাকভ” তাদের সবগুলো রণতরীকে আক্রমনের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুত করে রাখেন।

১৫ই ডিসেম্বর টাস্কফোর্স ৭৪ প্রায়ই ভারত মহাসাগরের কাছাকাছি এসে পড়ে । এই সময় সোভিয়েত “অ্যাডমিরাল ক্রুগল্যাকভ" তাদের সাবমেরিনগুলোকে পানির উপরে অবস্থান করার নির্দেশ দেন, যাতে মার্কিন রণতরিগুলো এদেরকে দেখতে পায় এবং নিজেদের রণতরীগুলোর মিসাইলগুলোকে মার্কিন রণতরীগুলোর ভারত মহাসাগরের প্রবেশ করার বিভিন্ন পথের দিকে তাক করে রাখেন।

অতঃপর পলায়নঃ পাঠক, আমার লেখার এই অংশে আমি সোভিয়েত ১০ নং অপারেটিভ গ্রুপের প্রধান , এই সামরিক অভিযানের মূল নায়ক বা নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি “অ্যাডমিরাল “ভি সি ক্রুগল্যাকভ” এর সাক্ষাৎকারটি সরাসরি মূল রুশ থেকে বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছিঃ

“আমার উপর সেন্ট্রাল কমান্ডের নির্দেশ ছিল যাতে আমি কোন ক্রমেই “টাস্কফোর্স ৭৪" কে করাচী কিংবা চট্টগ্রামে পৌঁছতে না দি। আমি আমার রণতরীগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখি এবং মিসাইলগুলোকে সম্ভাব্য দূরত্বের মধ্যে, মার্কিন রণতরীগুলোর আগমন পথের দিকে তাক করে রাখি। এর মধ্যেই একটি মার্কিন গোয়েন্দা বিমান দুর্ঘটনাবশত সমুদ্রে ধ্বংস হয়ে যায়।

১৬ই ডিসেম্বর সকালে আমরা আমদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকা, “টাস্কফোর্স ৭৪" কে গার্ড করে নিয়ে আসা মার্কিন রণতরী “USS Decatur” এর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হই। তারাও আমদের এতগুলো সোভিয়েত রণতরীর উপস্থিতি দেখে আর সামনে এগোতে ইতস্তত করতে থাকে।

১৮ই ডিসেম্বর আমারা আমদের স্পাই রেডিও ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে “USS Decatur” এর প্রধান নৌ কমান্ড চীফ “মিঃ গরডন ব্রাউন” এর মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড কে পাঠানো একটি ওয়ারলেস টক শুনে ফেলি যে “Sir, WE ARE ALREADY LATE” . “সোভিয়েতরা প্রচুর যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন সহ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নিয়েছে” ।

এর মধ্যে সোভিয়েত বিমান বাহিনীর একটি পর্যবেক্ষণ টিম আমদেরকে কেন্দ্র করে টহল গিতে থাকে। "

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৭২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত , ভারতের শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর অনুরধে, সোভিয়েত রণতরীগুলো ভারত মহাসাগরে অবস্থান করছিল।

অন্যদিকে টাস্কফোর্স ৭৪ বা ৭ম নৌবহর ১৯৭২ সালের ৭ই জানুয়ারী মলাক্কা প্রনালী হয়ে তাদের ভিয়েতনাম নেভাল বেসে ফিরে যায়।

এই অভিযানের নায়ক, অ্যাডমিরাল “ভি সি ক্রুগল্যাকভ” এখন বৃদ্ধ । ২০০২ সালে মস্কোতে তাঁর সাথে তাঁর ফ্লাটে , দেখা করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। অনেক কথাই সেদিন হয়েছিল। তাঁকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণও আমি জানিয়েছিলাম।

বাংলাদেশ খুব শীঘ্রই স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে। এই সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ১০ নং অপারেটিভ গ্রুপের সেইসব নৌসেনাদের সংবর্ধনা দেবে। বর্তমান রাশিয়ান সরকারের সাথে এই নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদিল কাজ করছে।

Reference:

1.https://www.academia.edu/12539940/Revisiting_the_1971_USS_Enterprise_Incident_Rhetoric_Reality_and_Pointers_for_the_Contemporary_Era?auto=download

2. Click This Link

3. https://warisboring.com/#.7qq1k04ii

4. Click This Link

5. Click This Link

6.http://avtonomka.org/literatura/1367-podvodnye-lodki-v-indo-pakistanskom-konflikte-1971-goda.html

7. https://www.youtube.com/watch?v=Er2E_PpVUYw

8. Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫
১৮টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×