somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট ঘর, বড় ঘর

২৩ শে এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৬:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“তোকে নিয়ে ঘর বাঁধবার স্বপ্ন আমার অন্তহীন/রাত্রিদিন/তবু বাঁধ সাধে আরেক আশা/ফুটপাতে যাদের বাসা/আগে তাদের জন্য একটা ঘর বানাই/তারপরে তোর সিঁথিতে/তারার সিঁদুর রাংগিয়ে দিতে/করবো ঋণ!”

নচি’দার এই গান যতবার শুনেছি ততবার ভেবেছি এই ‘অণির্বাণ’রা কি আসলে সত্য হতে পারে? এমনকি হতে পারে এইধরণের কিছু মানুষ আসলেই ছিল অথবা আছে? একসময় সমরেশ আর সুনীলের লেখা নকশাল ছেলে-মেয়েগুলোর কাহিনী পড়তে পড়তে চোখের সামনে যে সমাজ গড়ার স্বপ্নগুলো চোখ খোলা রেখেই ফকফকা আলোয় রংধনু’র মত দোল খেতো, ভাবতাম, এমন কি হওয়া সম্ভব?! ‘হাজার চুরাশির মা’ বা এই ধরনের কী যেন নাম মুভিটার, তাতে ছেলেটা বাবার সব সম্পত্তিকে পায়ে ঠেলে মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যোগ দিতে গিয়ে এমন কঠিন মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুধু একটা নাম্বার হয়ে যায়, একটা বেওয়ারিশ লাশ- ১০৮৪, এমন মানুষ কি হয়? অথবা সেই ছেলেটার মত যে সমাজটাকে ভেংগে আবার গড়বে বলে বেরিয়ে যাওয়ার আগে মা’কে লিখে যায়, ‘আবার জান্নাতে দেখা হবে মা’! অথবা সেই তুখোড় ব্রিলিয়ান্ট ছেলেটার মত, ঘুণে ধরা সমাজটাকে বদলাবে চায় বলে ইটের উপর যার মাথা রেখে আরেক ইট দিয়ে থেতলে মেরে ফেলে সমাজবিরোধীরা! ……… এদের আদর্শ ভিন্ন, এদের চিন্তার পদ্ধতি ভিন্ন, কিন্তু এদের স্বপ্ন একটাই- আশেপাশের মানুষগুলোর ভালভাবে বাঁচার জন্যে ভাল একটা সমাজ!

এরা আসলেই কেমন যেন হয়। জীবনের ছোটখাটো দুঃখ আর কষ্টে-ক্লেশে আমরা যারা নিত্যনৈমিত্তিক ঘৃণা আর বিরক্তিতে বসবাস করি, ওরা আমাদের মত না। ওরা টাকার পিছে ছুটেনা। ওরা সোশাল প্রেস্টিজ নিয়েও মাথা ঘামায় না। ওদের ব্যক্তি জীবন কীভাবে যেন এত বড় হয়ে যায় যে পুরো সমাজটাই কেমন করে যেন ওদের ব্যক্তিগত হয়ে যায়। সে বিশাল ব্যক্তি জীবনে ওদের চোখের সামনে একটাই স্বপ্ন, সমাজ বদলের স্বপ্ন! আর সে স্বপ্নের জন্যে কী নির্দ্বিধায় এরা সব জলাঞ্জলি দিয়ে ‘অনির্বাণ’ হয়ে যায়! আমরা যখন ছোট্ট একটা ঘর বাঁধার আপ্রাণ চেষ্টায় ঘর্মাক্ত, পুরো সমাজ, পুরো পৃথিবীটাই তখন ওদের ঘর হয়ে যায়। ওরা সে একটা মাত্র বড় ঘরের অন্ধকারের প্রহরী বনে যায়।

মানুষের জীবনে একটা সময়ে এসে দু’টো ভালবাসা পৃথিবীর একমাত্র সত্য হয়ে দাঁড়ায়। জন্মদাতা আর দাত্রী’র প্রতি ভালবাসা, আর ঘরবাঁধার মানুষটার প্রতি ভালবাসা। কিন্তু অণির্বানরা কী নির্দ্বিধায় শতরুপাদের মাথায় সিঁদুর পড়ার স্বপ্নকেও পাশ কাটিয়ে চলে যায় মানুষের মুক্তি’র খোঁজে। ওদের কী বুক ভাংগেনা? ভাংগে। ওদেরক কি কান্না পায়না? পায়। তারপরও ওরা যায়। হাজার হাজার শতরুপা’র মাথার সিঁদুর বাঁচাতে, হাজার হাজার মায়ের বুকের ঘরের ছেলেকে ঘরেই রাখতে, ওরা জানে- ওদের মত কিছু মানুষকে যেতে হয়। ওরা যাওয়ার সময় সবাই ওদের দিকে বিদ্রুপাত্নক দৃষ্টিতে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে,কিন্তু এই ভ্রু কুঁচকানো মানুষেরা জানেনা, পৃথিবীতে এই ‘অনির্বাণ-শতরুপা’রা আছে বলেই পৃথিবীতে এখনো ‘মানুষের মুক্তি’র স্বপ্ন বেঁচে আছে। ওদের আদর্শ যতই আলাদা হোক, ওদের স্বপ্ন একটাই। যখন এইরকম কোনো অণির্বানের কথা জানি, শুনি, নিজের কাছেই নিজে কেমন ক্ষুদ্র হয়ে যাই। লজ্জায় মাথা নুয়ে আসে। বড্ড স্বার্থপর লাগে নিজেকে। ওদের স্বপ্নের কাছে নিজেদের নিত্য-নৈমিত্তিক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রতা লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘশ্বাস আর দৈন্যতায় তখন প্রার্থণা করি, পৃথিবীতে যুগে যুগে সব অনির্বানেরা তাদের স্বপ্নের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকুক।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১০ ভোর ৬:৪৩
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×