somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রীক পুরাণের দেব-দেবীদের মানব সভ্যতায় প্রভাব। পর্ব-১

১২ ই নভেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে বসবাসকারী প্রাচীন গ্রীসের লোকজন তাদের দেব-দেবীদের পূজা করতো, গড়ে তোলেছিলো অনেক উপাসনালয়। সে সময় তাদের জীবন ব্যবস্থা ছিলো অন্যরকম, যা মিথ অপেক্ষা কোন অংশে কম নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া সে সময় ধ্বংসাবশেষের ভেতর দিয়ে দেখতেই আজকের এই প্রয়াস।



খ্রীষ্টপূর্ব ৪৮০-৩২৩ এর ক্লাসিক্যাল যুগ হচ্ছে প্রাচীন গ্রীসের সবচেয়ে বিখ্যাত সময়। এ সময়ই গ্রীকরা উন্নতীর চরম শিখরে পৌঁছায়, আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও অনেক এগিয়ে যায়। এ সময় কোন রাজা দিয়ে শাসিত হয়নি, কারণ দেব-দেবীদের প্রভাব ছিলো সবচেয়ে বেশী। খ্রীষ্টপূর্ব ১৪৬ সালে গ্রীসের শহরাঞ্চল রোমানরা দখল করে নেয়। পরবর্তীতে খ্রীষ্ট উত্তর ৪র্থ শতাব্দীতে রোম ভাগ হয়ে গেলে প্রাচীন গ্রীসের পূর্বাঞ্চলের অর্ধেক ভাগ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের হাতে চলে যায়। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের পর ১৪৫৩ সালে তা অটোমেন সাম্রাজ্যের দখলে আসে। রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হারানোর পরেই প্রাচীন গ্রীসে জন্ম নিতে শুরু করে অনেক দার্শনিক, লেখক, শিল্পী, চিন্তাবিদ প্রভৃতি। প্রাচীন গ্রীস হয়ে উঠে পশ্চিমাদের সভ্যতার সূতিকাগার।



হাজারো পুরাণ, গল্প ও লোককাহিনী নির্ভর ছিলো প্রাচীন গ্রীসের ধর্ম। গড়ে উঠে পুরাণের বিভিন্ন দেব-দেবীদের উপাসনালয়। কারণ তারা মনে করতো দেব-দেবীরা মানুষের মতো অনুভূতিপ্রবণ, সম্মান দিলে কৃপা পাওয়া যায় নয়তো তারা রুষ্ট হন। দেব-দেবীদের জন্য পশু, খাদ্য ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করতো প্রাচীন গ্রীকবাসী।



গ্রীসের লোকজন সে সময় বিশ্বাস করতো মাটির নিচে মৃতের জন্য আলাদা জগৎ আছে, যেখানে একজন মৃত্যুর খেয়াদেবতা চারোন তাদের ঐ জগতে পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়। প্রাচীন গ্রীক পুরাণ ও ধর্ম অনুসারে সে জগতে ভাল ও মন্দ কর্মকৃতদের জন্য ছিলো আলাদা ব্যবস্থা। সে পাতাল জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতো দেবতা হেডেজ, আর তার রানী পার্সেফোন এ কাজে সাহায্য করতো তাকে। পাতাল একটি রাজ্যের মতো, যা বিভক্ত ছিলো কয়েকটি অঞ্চলে। যারা খারাপ কাজ করতো তাদের শাস্তি ও অত্যাচারের জন্য ছিলো একটি অঞ্চল। ইলিজিয়ান ফিল্ড বা স্বর্গ উদ্যান নামে একটি অঞ্চল ছিলো যারা ভালো কাজ করেছে তাদের জন্য। এই অঞ্চল দ্বয়ের ভাগ মূলত অন্য ধর্মের স্বর্গ-নরকের মতো, তফাৎ শুধু তাদের অবস্থানে - আকাশ ও পাতালে।







প্রাচীন গ্রীসের অধিবাসীরা তাদের ধর্ম মতে মৃতের জন্য কিছু প্রথাগত অনুষ্ঠান পালন করতো, যাতে করে মৃত সহজে পাতাল যাত্রার ভেতর দিয়ে পাতালে পৌঁছতে পারে। মৃত্যুর খেয়াদেবতা চারোন মৃতকে পাঁচটি নদীর ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতো। নদীগুলো ছিলো - ঘৃণার নদী, দুঃখের নদী, বিস্মরণ প্রবণতার নদী, কান্নার নদী ও আগুনের নদী। এই পাঁচটি নদী পার হয়ে মৃতটি পাতালে তার জীবন শুরু করতে পারতো। বিষয়টি হিন্দু পূরাণের বৈতরনী নদী পার হয়ে নরকে পৌঁছার মতো, সেখানে শুধু কলুষিত আত্মারা বৈতরনী নদী পার হয়ে নরকে যায়।



মৃতের আত্মাকে চারোনের নৌকার ভাড়া বাবদ দিতে হয় একটি পয়সা। এ কারণে প্রাচীন গ্রীসের লোকেরা মৃতের সাথে বা তার মুখের উপর পয়সা রেখে দিতো। যারা চারোনকে এই পয়সা দিতে পারতো না সে সকল নতুন আত্মাকে নদী তীরে একশো বছর অপেক্ষা করতে হতো। হেডেজের এই পাতাল মাঝি অন্য সকল দেব-দেবীদেরকে পাতালে আনা নেয়ার কাজটি করতো।











সময়ের সাথে মানুষ বিভিন্ন রকম পূরাণের সৃষ্টি করেছে, কেউ সে পুরাণের সাথে থেকেছে আবার কেউ ধর্ম বা তার সমগোত্রের সাথে জীবনাচার পালন করেছে। যা কারো কাছে পুরাণ তা কারো কাছে ধর্ম, আবার কারো পুরাণ অন্য কারোর কাছে সত্য। কারো বিশ্বাস অন্যকারো কাছে হয়তো কল্পিত কিছু। পৃথিবীর সব অঞ্চল জুড়েই ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন রকম পুরাণ - ভারতীয়, গ্রীসিয়, জাপানীজ, চায়নীজ, মিশরীয় ইত্যাদি পুরাণ। দেবতাদের সাথে মানুষের পার্থক্য হলো - মানুষ মরণশীল, কিন্তু দেবতারা মরে না। আবার দেবতা হয়ে জন্মেও পুরাণ অনুসারে অনেক দেবতার মৃত্যু হতে দেখা যায়। মানুষ মনের মাধুরি মিশিয়ে কল্পনায় এঁকেছে দেব-দেবীর মুখ; তারপর গড়েছে তার রূপ বিশ্বাস, গল্প কিংবা অবকাঠামোয়।







দৈববাণী ও বিসর্জনেরও বিরাট ভূমিকা ছিলো প্রাচীন গ্রিসে। যা পুরাণের পাশাপাশি মানুষের জীবনেও অর্পিত হয়। ডেলফির দৈববাণী বিভিন্ন কাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডেলফির সে সব দৈববাণী প্রাচীন গ্রিসের মানুষকে প্রভাবিত করেছে নানাভাবে। দৈবজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিদেরও সে সময় গ্রীকবাসীরা বিশ্বাস করতো, দৈবজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিরা দেবতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ আছে বলে প্রচার করতো। লোককথা অনুসারে তারা উপাসনালয়ে যেয়ে দেবতাদের সাথে যোগাযোগ করতো ও ভবিষ্যৎ বলতে পারতো, যা নিঃসন্দেহে গ্রীক বাসিদের সাহায্য করতো।







গ্রীক পুরাণ ও লোককাহিনী অনুসারে প্রচুর ভয়ংকর দৈত্যের কথা শুনা যায়। ঐ সকল প্রাণীর ভেতর ড্রাগন, পিচাশ, দানব, ভূত ও মাথাওয়ালা স্ফিংক্স, অর্ধমানব, গ্রিফিন প্রভৃতি ছিলো।





















গ্রীকদের ছিলো মোট ২৪ বর্ণের বর্ণমালা। সাইন্সের ছাত্ররা এসব অনেক বর্ণের সাথে ইতোমধ্যেই পরিচিত হয়েছেন, যেমন - পাই, আলফা, বিটা, গামা, সিগমা, টাউ প্রভৃতি।






চলমান পোস্ট..........
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৩:৫৭
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×