ঢাকায় বাসে উঠি। উঠলেই দেখি হাউকাউ। স্টুডেন্টদের সাথে হেলপারের হাউকাউ। মারামারি। ছাত্র চায় হাফ ভাড়া দিতে। কিন্তু হেলপার চায় ফুল ভাড়া। অনেক বুড়াধুরা ছাত্র সেজে উঠে হাফ ভাড়া দিয়ে কেটে পড়তে চায়। দেখতে দাড়িওয়ালা চাচা'র মতো। আমার বড়খালাম্মার থেকেও বয়সে বড়। তারা নাকি ছাত্র!
এই বিষয়ে ইতিহাস কী বলে? ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি চারটি বাস দিয়ে সরকারিভাবে সার্ভিস শুরু করে। তখন থেকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবা। পরবর্তীতে যখন সরকারি বাসের সাথে সাথে বেসরকারি বাস গণপরিবহনের সেবা দেয়া শুরু করে। তখন সরকারি বাসের নিয়মে বেসরকারি বাসেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও লিখিত নিয়ম নাই। এটা একটা প্রথা হয়ে দাঁড়ায়। বেসরকারি বাস কোম্পানি এই হাফ ভাড়া নিতে তারা বাধ্য নয়। news
একজন স্টুডেন্ট হাফ ভাড়া কেন দিবে? অতীতে আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে হাফভাড়া দেওয়াটা যৌক্তিক ছিল। কারণ বাংলাদেশের মানুষ তখন গরীব ছিল। কিন্তু এখন একেকজন স্টুডেন্ট-মিস্টুডেন্ট সবার হাতে ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকার স্যামসাঙ, আইফোন। কানে দুই-চার হাজার টাকার হেডফোন। হাজার হাজার টাকা মোবাইলের পিছনে খরচ করতে পারবা, রাত জেগে মোবাইলে প্রেমালাপ করে টাকা অপচয় করতে পারবা, আর হেলপার ফুল ভাড়া চাইলেই মাইর দিতে আসবা? গাইল দিবা?
ঢাকায় যে মানুষগুলা থাকে, তারা এখন আর ছোটলোক না। বড়লোক। কারণ ঢাকায় থাকতে হলে, খরচ কুলাতে হলে আজকের দিনে বিভিন্ন উপায়ে বড়লোক হতে হয়। বাসা থেকে একজন ছাত্র যে হাত খরচা নেয়, তাতে তার ফুল ভাড়া দিতে প্রবলেম কই? বাসা থেকে তো ঠিকই বাপ-মায়ের থেকে হাতখরচের আর বাসভাড়ার টাকা নাও। টিচারের বাসায় টাকা দিবা, এই বলেও টাকা নাও। কিন্তু টিচারকে টাকা দাওনা, হেলপারকেও দাওনা। টাকা কই দেও তাহলে? বাসায় আব্বা-আম্মা কী জানে যে, চার-পাঁচটা গার্লফ্রেণ্ডদের পিছনে টাকা খরচা করো? নাইলে ইয়াবা খাও? আর বাসে হেলপারদের সাথে খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করো?
একজন স্টুডেন্ট ফুল ভাড়া দিবে এটা একটা স্বাভাবিক ঘটনা। এই সুস্থ্য-সুন্দর কথাটা স্কুল কলেজের পাঠ্যপুস্তকে অনতিবিলম্বে অন্তর্ভুক্ত করা হোক - এই দাবী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ব্লগার, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, সুশীল সমাজ সবার কাছে রেখে গেলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:০২