somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈশ্বরচিন্তা -৩

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈশ্বরচিন্তা -২

ঈশ্বরচিন্তা - ১


নিয়ন্ত্রন, শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ন । কারন সবাই নিয়ন্ত্রন করে অথবা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়ন্ত্রন হতে পারে জাগতিক অথবা ঐশ্বরিক অলৌকিকতা পূর্ন। আমরা যেকোন স্বাভাবিক সিস্টেমের মতই নিয়ন্ত্রন চাই। নিজের দায়িত্ব কারো ঘাড়ে দিতে পারলে আশ্বস্ত হই। স্থুলবুদ্ধিরা পীর ফকির ধরে থাকে, পরলৌকিক দায়ত্ব নেবার জন্যে। এজন্যেই যুগে যুগে মানুষ এবসোলিউট অসম্ভব কথা শুনিয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। এখনও যুক্তরাষ্ট্রে আছে মোর্মেন ধর্মালম্বীরা, সায়ান্টোলজির অনুসারীরা। এই মহাবিশ্ব জটিল এবং বিভ্রান্তকারী। যখন ছোট অবস্থায় ভাবতাম এই আকাশের কোন শেষ নেই তখন শরীর কেপে উঠত। ভেবে পেতাম না কিভাবে অসীম কে চিন্তা করা যায়। তাই আমরা দুর্বল। আমাদের বৌদ্ধিক এবং দার্শনিক দায়িত্ব অনেক ভারী মনে হয় আমাদের কাছে। তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে আমরা সদাসর্বদা প্রস্তুত।

নিয়ন্ত্রন মানব সমাজের প্রধান বিল্ডিং ব্লক। মানব সমাজ তৈরী হয় ব্যাক্তি মানুষ কে অস্বীকার করার মধ্য দিয়েই। সামাজিক সম্পর্ক সেখানে ব্যাক্তি মানুষের চেয়ে বেশী গুরুত্বের অধিকারী। একারনেই তৈরী হয় গাবদা সাইজের আইনের বই। যদিও এটা সাধারন ধারনা যে সমাজ ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব, কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ধারনাটি সমাজের প্রতি অতিপক্ষপাতে আক্রান্ত। যেখানে আমজনতা নানা নিয়ন্ত্রনের চক্করে পরে অন্ধকার দেখার পরেও ভেবে নেয় ননসেন্স নিয়মকানুন তার ভালোর জন্যেই তৈরী করা, সেখানে আমরা দেখতে পাই ব্যাক্তি মানুষের করুন মৃত্যু। এই শতাব্দীতে সমাজের প্রথম কাজ মানুষ কে সার্ভ করা নয়, তার নিজের পেট ভরা। এবং তার সুফল ছোট্ট একটি দলকে প্রদান করা। কিছু মানুষ বুঝে যেতে পেরেছে মানুষের সমাজ কে যারপরনাই বিশ্বাস করে, তাই সমাজের নাম ধরেই নিয়ন্ত্রনের জাল বসানো সম্ভব। এই কতিপয় মানুষরাই যুগে যুগে দেখা দিয়েছে কখোনো রাজনৈতিক নেতা, কখোনো ধর্মবেত্তা রুপে।

মানব সমাজে ঈশ্বরের নামে নিয়ন্ত্রন অনেক পুরোনো ইতিহাস। সেই পুরাতন যুগের গ্রাম্য পুরোহিত থেকে যার শুরু। সকল আধুনিক ধর্মই যখন মুলধারায় মাথা তুলে দাড়িয়েছে তখন তীব্রভাবে রাজনৈতিক হয়ে গিয়েছে। আমরা দেখতে পাই কিভাবে গীর্জাগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্লজ্জভাবে দখল করে নিত, কিংবা আধুনা হিজবুত তাহরীর কিংবা জামাত যা চায়। ইসলাম শুরু থেকেই পলিটিক্যাল ছিল। কারন মুলধারায় এটি অনেক দ্রুত আসতে পেরেছে। অন্যদিকে ক্রিশচিয়ান ধর্ম দীর্ঘদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের আগে। এটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় কিভাবে ঈশ্বর মানব রাজনীতির এত বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠেন। তিনি একের পর এক ওহী পাঠাতে থেকেন রাষ্ট্র পরিচালানার উপর। যদি ওহী না পাঠান তাহলে তার প্রতিনিধিত্বকারী যাযকেরা জিওর্দানো ব্রুনো পুড়িয়ে মেরে রাজনৈতিক ক্ষমতার ষোলকলা পূর্ন করে। মধ্যযুগের ইনকিউজিশনের কথা মনে হয় মানব ইতিহাসে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবচেয়ে কুৎসিত প্রচেষ্টার একটি। হিটলার বাবাজী যেটি জাতীয়তাবাদের ধুয়ো ধরে ৪০০ বছর পর আবার করে দেখিয়েছে।

ধর্মের মানবিক হতে গিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক হয়ে জিজিয়া কর উৎপাদনে উৎসাহী হয়ে পরে এটির বিশ্লেষনে গেলে সমাজের নিয়ন্তা হবার যে সুপ্ত বাসনা মানব মনে লুকিয়ে থাকে, অথবা অসংখ্য ব্যাক্তিস্বত্তাকে হত্যা করে যে আমোদ লাভ করা যায়, সেদিকেই দৃষ্টি যায়। সকল ধর্মই শুরু হয় আধ্যাত্নিক মুখোশে। কিন্তু একজন চতুর রাজনীতিবিদের মত ধর্মের কাঠামোও নিয়ন্ত্রন লোভী হয়ে উঠে। প্রকারান্তে ঈশ্বর হয়ে উঠেন "পাওয়ার হাঙ্গরী"। সর্বশক্তিমানের এরকম শক্তির লোভ কেন যেন বেমানান দেখায়।

কোন ধর্মের মাঝে সত্যিকার সাম্যের কথা থাকে না, বিভেদ বিভাজন, বর্নবাদ প্রত্যেক ধর্মের সুন্দর অনুশাসনের নীচে লুকিয়ে থাকে। কারন যে সমাজে মানুষের ব্যাক্তিতার মূল্য আছে সে সমাজকে নিয়ন্ত্রন করাও কঠিন। এজন্যেই ধর্ম দেয় বিভাজনের রুপরেখা, নিয়ন্ত্রনের প্রধান হাতিয়ার যে বিভাজন। ধর্ম মানুষে ধার্মিক এবং বিধর্মী এই দুইভাগে বিভক্ত করে দেয়। ঈশ্বর বিশ্বাসের পুরস্কার স্বরুপ ধার্মিকদের হাতে পরে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার। তারা নিয়ন্ত্রন করবে বিধর্মীদের। কারন তারা বিশ্বাস করে ভিন্ন কোন ঈশ্বরকে।

মানুষ ব্যাক্তিস্বত্তা কে সামাজিক চাপে অস্বীকার করে অনেক সময়। কিন্তু সকল নিয়ন্ত্রনের প্রধান শত্রু এই ব্যাক্তি মানুষটি। যারা সম্মান করে নিজস্ব চিন্তাকে তারা নিয়ন্ত্রকের চোখে অপরাধী। টুকরা টুকরা করা হয়েছিল মনসুর হাল্লাজকে। কোপানো হয়েছিল হুমায়ুন আজাদকে। সকল পত্রিকায় কমিউনিস্ট পার্টির জয়জয়কার ছাপানো হত লেলিনের রাশিয়ায়। বিরোধী দলের পার্থীদের নির্বাচনে প্রচারনা করতে দেয়া হত না বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্সিটিউশন সম্ভবত ডানপন্থী লোকদের তৈরী। ধর্মের সাথে জাতীয়তাবাদ মিশিয়ে নতুন নতুন বিভাজনের খসড়া আর নিয়ন্ত্রনের নীলনকশা প্রতিনিয়তই তৈরী হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রিত হতে চাই না আমি। সুন্দর তম হোক আর কুৎসিততম হোক, ছোট্ট পৃথিবীতে দু-চারটে কথা ভাবতে চাই, বলতে চাই। কারো উপকার না করতে পারি, কারো ক্ষতি না করে থাকতে চাই। নিজের ব্যাক্তিগত স্বত্তাকে একটু সম্মান করতে চাই। মাথা একটু কম নোয়াতে চাই।

বিজ্ঞান ঈশ্বর সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেয় নি, তাই ঈশ্বর আছেন কি নেই সেটা সম্পর্কে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেই। তবে আমি ব্যাক্তিস্বত্তা কে সম্মানের জন্যে অনন্ত নরকই যদি সেই স্বৈরাচারী স্কাইড্যাডি আমার জন্যে বরাদ্দ করেন তাহলে আমি বলব ব্রিং ইট অন।
৮টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×