গতবছর এক ভাইয়ার এইচএসসি রেজাল্ট দেখে দিলাম। এসএসসি তে গোল্ডেন এ+ পেয়েছিলেন, কিন্তু এইচএসসিতে পেয়েছেন ৪.২০! রেজাল্ট শুনে উনি নিজেই তব্দা খেয়ে গেলেন। আমাকে বললেন, কাউকে উনার রেজাল্ট না বলতে...যদি কেউ রেজাল্ট জিজ্ঞেশ করে তাহলে ৪.৮০ বলতে! আমি উনার কথামতো কাজ করলাম। কাউকেই উনার রেজাল্ট বললাম নাহ, আর যারা গায়ে পড়ে জিজ্ঞেশ করল তাদেরকে বললাম ৪.৮০!
কদিন পর উনার ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা! আমি কি ভেবে যেন জিজ্ঞেশ করলাম, "মারুফ,তোমার ভাইয়ার রেজাল্ট কী??" মারুফ দাঁত কেলিয়ে জবাব দিল, "৪.৮০!" আমি দাঁত দিয়ে জিহবা কামড়ে কোনোমতে হাসি থামিয়ে চলে আসলাম!
তারও কিছুদিন পরের কথা, সেই ভাইয়া ফোন দিলেন। জানালেন তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। উনি মেডিকেলে চান্স পাবেন তা আমার চিন্তার বাইরে ছিল। গাধা আমি উনার এইচএসসি রেজাল্ট দিয়েই উনাকে বিচার করে ফেলেছিলাম। কিন্তু উনি ঠিকই পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে এমন একটা দুর্দান্ত ফলাফল করে দেখিয়েছিলেন যা কিনা দুটো গোল্ডেন পাওয়া ছাত্রও করতে পারে না।
যেই ছেলেটা এসএসসিতে গোল্ডেন পাওয়ার পর দু বছরের ব্যবধানে যখন এইচএসসিতে ৪.২০ পেয়েছিল তখন তার মনের অবস্থা কি হয়েছিল তা বুঝতে হলে কোনো মহামানব হওয়া লাগে নাহ। অন্য কেউ হলে হয়তো ভেঙ্গে পড়তেন। কিন্তু নিজের সাথে তা হতে দেননি তিনি। না পাওয়ার কষ্টকে শক্তি হিসেবে নিয়েছিলেন আর বুঝতে পেরেছিলেন এখানেই জীবনের শেষ নয়...এই একটা পরীক্ষার বাজে ফলাফল কখনোই তার জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না!
বছর ঘুরে আবারও এইচএসসি রেজাল্ট দিয়েছে। এবারও হয়তো গতবছরের সেই ভাইয়াটির মতো অনেকের রেজাল্টই মন মতো হয়নি! অনেকেই হয়তো ভেঙ্গে পড়েছেন। হয়তো এখানেই জীবনের শেষ দেখে ফেলেছেন।
কিন্তু আমি বলব, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এক মাস পর থেকেই ভর্তি যুদ্ধ শুরু হবে। এইচএসসির ফলাফল নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই এখন। কারন এইচএসসির রেজাল্টের উপর নির্ভর করবে না যে আপনি কতদূর যাচ্ছেন, নির্ভর করবে ভর্তি যুদ্ধে আপনি কতোটুকু বীরত্ব দেখালেন তার উপর।
কেউ কেউ ভাবতে পারে যে, জিপিএ কম তাই কোথাও চান্স পাবে নাহ...ধারনাটি একদমই ভুল কারন হাজার হাজার ছেলে আপনার মতো সাধারন জিপিএ নিয়েই ভর্তি যুদ্ধের বৈতরনী পেরিয়ে যাচ্ছে...ইনশাল্লাহ, আপনিও পারবেন।
পিছনের দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই আর, আমি জানি আপনি সময় নষ্ট করতেও যাচ্ছেন নাহ। ভর্তি পরীক্ষার জন্য শুভকামনা রইল। আশা করি সামনের বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসে আমাদেরকে অনুপ্রেরনা দেওয়ার কাজটি আপনারাই করবেন।