গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে...একটু পর থেকে কুকুর-বিড়াল বৃষ্টি শুরু হতে পারে..তাই না ভিজে কলেজে পৌছানোর জন্য একটু তাড়াতাড়ি হাটছিলাম। এমন সময় হঠাৎ করে আমার সামনে একটা মোটরসাইকেল থামল। মোটর সাইকেল আরোহী লোকটা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আমাকে ডাক দিল...
-এই ছেলে, দাড়াও!
:-জ্বী আংকেল!
-তুমি রাইফেলসে পড়ো???
:-জ্বী আংকেল!
-মোটরসাইকেলে উঠো!
:- জ্বী! মানে?
-আরে মোটরসাইকেলে উঠো...আমিও যাব!
বাহ! এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! আমি উঠে পেছনে বসলাম। মানুষের যখন বয়স বেড়ে যায়, তখন তার মধ্যে মৃত্যু ভয় কাজ করে বেশি...একারনেই বোধহয় আংকেল তার মোটরসাইকেলটাকে ধীরে ধীরে চালিয়ে এগুতে লাগল...অবশ্য এমনও হতে পারে যে উনার মোটরসাইকেলটাই এমন...মুড়ির টিন মার্কা!
-কোন ক্লাশে পড়ো তুমি??
:- সেকেন্ড ইয়ারে আংকেল!
-সেকেন্ড ইয়ারে!! আমি তো ভেবেছি তুমি স্কুলের ছাত্র।
কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে গেলাম। সেকেন্ড ইয়ারে পড়ুয়া কাউকে স্কুলের ছাত্র ভাবলে লজ্জা তো লাগবেই। আচ্ছা, উনার কে পড়ে আমাদের কলেজে?? ছেলে না মেয়ে??
:-আংকেল আপনার ছেলে পড়ে এখানে??
- নাহ, আমার মেয়ে।
ক্লাশ জিজ্ঞেশ করাটা ঠিক হবে না তাই আর জিজ্ঞেশ করলাম নাহ...মেয়েদের বাবারা খুবই সন্দেহপ্রবন প্রানী...যে কাউকে সন্দেহ করে...আর বেশি কিছু জিজ্ঞেশ করলে মাঝ পথেও নামিয়ে দিতে পারে। তাই চুপ করে রইলাম।
পিলখানায় ঢুকার সময় আমাকে একটা হেলমেট দিলেন...তারপর বললেন,
-শক্ত হয়ে বসে থাকবা। নড়বা না একদম। রাস্তায় কাদা আছে, যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট ঘটতে পারে।
শক্ত করে বসে রইলাম একদম। মোটরসাইকেলটা ধীরে ধীরে যাচ্ছে...বৃষ্টি আরো বাড়ছে...একটা মেয়ে ফুটপাত ধরে এগুচ্ছে...অনেকটাই ভিজে গেছে...বাতাসের ঝাপটায় চুলগুলো উড়ছে...ওহ, মেয়েটা চশমাও পরে মনে হচ্ছে...নিশ্চয়ই চশমার গ্লাসে ছোট ছোট পানির কনা জমে আছে...চশমা পরা মেয়েরা দেখতে কিউট হয়...এই মেয়েটাও কিউট...কিউট মেয়েরা বাবা-মায়ের আদুরে সন্তান...একটু বৃষ্টিতে ভিজলেই তাদের জ্বর উঠে যায় কিংবা সারাদিন বসুন্ধরা টিস্যু নিয়ে রেডি থাকতে হয়...এই মেয়েটার সাথেও এমন কিছু ঘটতে পারে সম্ভবত!
আচ্ছা, আংকেলকে কি বলব এই মেয়েটাকেও লিফট দিতে?? তিনজন আরামসেই বসতে পারবে...আর মেয়েটা আমার মতো চিকন...বসতে অসুবিধেও হবে নাহ...নাকি আমি নেমে গিয়ে মেয়েটাকে লিফট দিব! উহু, লিফট দেওয়া যাবে না। চ্যারিটি বিগিনস এট হোম বলে একটা কথা আছে...
মোটরসাইকেলের গতি বাড়িয়ে দিল আংকেল, ডানে বাক নেওয়ার পরই মেয়েটা হারিয়ে গেলো। চোখের সীমানা থেকে হারিয়ে গেলো বৃষ্টি বালিকা। একসময় আমিও পৌছে গেলাম ক্যাম্পাসে...মেয়েটার কথাও ভুলে গেলাম!
জীবনে কিছু মানুষ আসে যাদেরকে অল্প কিছু মূহুর্তের জন্য প্রয়োজন হয়...নিজের বিরক্তিকর সময়টাকে কোনোমতে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য এসব মানুষের আবির্ভাব ঘটে...এই বৃষ্টিবালিকার ক্ষেত্রেও একই কথা বলা যায়...বৃষ্টিবালিকার কথা ভেবে গম্ভীর আংকেল এর সাথে বসে থাকা সময়টা কোনোমতে পার করার জন্যই হয়তো আবির্ভাব ঘটেছিল বৃষ্টিবালিকার...
আচ্ছা, এই বৃষ্টিবালিকাও কি মাঝে মাঝে কোনো বৃষ্টিবালকের কথা ভেবে তার মন খারাপের সময়টা পার করে দেয়?? জানালার কাঁচ ঘেষে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হেটে যাওয়া কোনো বৃষ্টিবালকের অসহায় অবস্থা নিয়ে চিন্তা করতে করতে কি বেমালুম ভুলে যায় তার মন খারাপের কারনগুলো??