সন্ধ্যা খুবই গম্ভীর।নিরবতায় যেন গ্রামের সন্ধ্যার ভাষা।সন্ধ্যা নামার পূর্বক্ষনে অমসৃয়মান সূর্যের রক্তিম আভা সত্যি নস্টালজিক।শহরে সন্ধ্যা নামার সাথে গ্রামের সন্ধ্যার পার্থক্য হলো, গ্রামে শহরের মতো কোলাহল নেই। শুধুই নির্জনতা।শহরে জ্বলমলে আলোয় হারিয়ে যায় গোধূলি লগ্নের আভা।যস্ত্রিক সভ্যতার ফলে নীড়ে ফেরা পাখির কলকাকলি শহরে কল্পনা পর্যন্ত করা যায়না।গ্রামে মৃদু শান্ত হেসে সন্ধ্যা পৃথিবীতে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। অম্বিকার মুখে যখন সন্ধ্যায় হারিকেনের আলো পড়ে, তখন মনে হয় এক অপূর্ব জ্যোতি তাকে নতুনরূপে অলংকৃত করেছে। কবি জীবনানন্দ লিখেনঃ 'দিনের ক্লান্তি শেষে শিশিরের শব্দের মতো সন্ধ্যা নামে'|
আলো ছড়ানো জোছনা আঙ্গিনা ভরে দিয়েছে। সন্ধ্যা নামার পর মৃদু অন্ধকার গাড় হচ্ছে। অম্বিকা সবে সাঁজের প্রদীপ জ্বলিয়েছে। মফস্বলের মেয়েরা নেচারালি বিউটি হয়। একটি উঁচু পিড়ির উপর বই রেখেছে আর শিতল পাঠিতে নিজে বসেছে। হারিকেনের মৃদু আলো তার প্রকৃতির মাধুরী দিয়ে গড়া মুখখানির উপর যখন পড়েছে, তখন কি অভিনব সৌন্দর্য্য তার মুখ থেকে বিকশিত হয়েছে তা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই।
মফস্বলের মেয়েদের একটা বৈশিষ্ট্য হলো এরা নয় অতি আধুনিক নয় অতি গ্রাম্য। আধুনিকতা আর গ্রম্য সরলতার সংমিশ্রনে চলনে বলনে মননে খুবই অনন্যা হয়ে ওঠে। আচরণে লজ্জা মিশ্রিত নম্রতা নারীদের অতুলনীয়া বানায়। জোছনা রং এর সাথে চন্দন মাখালে যেমন সৌন্দর্য ধারণ করে চাঁদের আলো পড়া অম্বিকার মুখখানি তেমনই। কিছু কিছু সৌন্দর্য রাতের ঝরনার সৌন্দর্যকেও হার মানায়। সে অমনি একটি সৌন্দর্য। অম্বিকা যখন অন্যায় হতে দেখে তখন রৌদ্র মূর্তি ধারণ করে।একই অম্বিকা সুন্দর মনের মানুষের ক্ষেত্রে শেষ বিকেলের রোদের মতো মিষ্টি। সে যেন গৌধুলী রঙে রাঙানো সোনালী আভা। অম্বিকার সৌন্দর্য আর নাদীর পাড়ে সন্ধ্যা নামার সৌন্দর্য্যের মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে আমাকে বেশ দ্বিধায় পড়তে হয়। ও কখনো নদীর মতো , কখনো অরন্যের মতো, কখনো তারাময় আকাশের মতো সুন্দর। তার নেচারালি রিবন্ডিং করা চুলগুলো যেন সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ সম্ভার।
অম্বিকাদের স্বপ্ন গুলো খুবই সরল ও সুন্দর। আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এখন থেকে ১৬ বছর আগের জীবনে ফিরে যেতে।সাঁজের বেলায় অম্বিকাদের চাঁদের কিরণ ছড়ানো উঠানে ওপাশের ছোট্ট আরেকটি কুড়ে ঘর থেকে হারিকেনের আলোয় অম্বিকার মুখের সৌন্দর্য আমাকে যতটুকু মোহিত করে তার চেয়ে বেশি মোহিত করে তাদের গ্রামের প্রকৃতি। শহুরে ব্যস্ত জীবন থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে ওদের বাড়ির চেয়ে আর সুন্দর কোন জায়গা নেই আমার কাছে।তাদের গ্রামের চেয়ে অনেক অনেক সুন্দর গ্রাম আছে নিঃসন্দেহে কিন্তু আমার কাছে অম্বিকার জন্য তাদের গ্রামই সেরা। পাহাড়, বন, ঝরনা, লেক, হাওর ও নদীবেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি । নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাওর তীরবর্তী গ্রামটি সত্যি ছবির মতো। মেঘালয়ের কোলবেয়ে নেমে আসা লাকমাছড়া ঝরনা অনেকে দেখেছেন। এই গ্রামে ঝরনা নেই , কিন্তু নদী আছে। তবে প্রশান্তি একই রকম। প্রতি বৃহস্পতিবার একটি বাড়িতে গানের আসর বসে ওদের গ্রামে। ঐতিহ্যবাহী বাউল, জারি সারি, মুর্শিদী, ভাটিয়ালিসহ মরমি সাধক হাসন রাজা ও বাউল আবদুল করিমের গান মনে করিয়ে দেয় আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের কথা।
গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সাথে অম্বিকার সৌন্দর্য মিলে একাকার হয়ে হিন্দু পুরাণে দেবালোকের জাদুকারিনী, সুন্দর নারী এবং অপ্সরার রাণী রম্ভার কথা মনে করিয়ে দেয়|