somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুনি দরজা : ভারত বর্ষের রক্তাক্ত ইতিহাসের স্বাক্ষী

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শের শাহ সুরি হুমায়ুনকে পরাজিত করে লাল কেল্লা দখল করার পর তার বিজয়কে স্মরনীয় করে রাখার জন্য লাল কেল্লায় একটি শাহী দরজা স্থাপন করেন দরজাটির নাম রাখা হয় লাল দরজা যা পরবর্তীতে খুনি দরজা নামে পরিচিত হয় ।এই গেটটিকে অনেকে অভিশপ্ত দরজাও বলে থাকেন ।নামকরনের পেছনে রয়েছে ভারতবর্ষের রক্তাক্ত ইতিহাস যা এই গেটের সামনে মঞ্চায়িত হয়েছিল যুগে যুগে ।
পরামক্রমশালী সম্রাট আকবর বৃদ্ধ বয়সে অসুস্থ হওয়ার পর তার পুত্র সেলিম (পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীর ) তাকে বন্দী করে দিল্লীর সিংহাসন দখল করেন । আকবরের পরম আস্থাভাজন নবরত্নদের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিলনা । তারা প্রকাশ্যে সেলিমের বিরোধীতা করেন । এদের মধ্যে একজন ছিলেন আব্দুর রহিম খান ই খানা । তাকে হত্যা করে খুনি দরজার উপর টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় । এখানেই তার লাশ পঁচে গলে শেষ হয় , কিন্তু শুরু হয় খুনি দরজার রক্তাক্ত ইতিহাস ।
সম্রাট সেলিমের পুত্র শাহজাহান অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চার পুত্র আওরঙ্গজেব , শাহ সুজা, দারা শিকো ও মুরাদের মধ্যে শুরু হয় সিংহাসন দ্বন্দ যা পরবর্তীতে রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে । শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় আওরঙ্গজেব । আওরঙ্গজেব তার ভাই দারাশিকোর শিরোচ্ছেদ করে তার মস্তক একটি প্লেটে করে পিতা শাহজাহানের কাছে পাঠায় এবং দেহ খুনি দরজার সামনে ফেলে রাখে । এরপর ১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে নাদির শাহ ভারতবর্ষ আক্রমন করে দিল্লীতে ঢুকে পড়ে । তার সৈন্যরা নির্বিচারের হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে দিল্লির রাস্তাকে রক্তে রঞ্জিত করে । দিল্লির লাল কেল্লার রক্ষীদের হত্যা করে তাদের লাশ খুনি দরজায় ঝুলিয়ে দেয়া হয় । কিন্তু এখানে খুনি দরজার কাহিনী শেষ হয়না বরং শুরু হয় ।
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মোঘল সাম্রাজ্যের শক্তি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে এবং একসময় ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখল করে নেয় ।ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালে শেষ মোঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে প্রতীক করে সিপাহি বিদ্রোহের সূত্রপাত হয় । ইংরেজরা প্রথম পর্যায়ে পর্যদুস্ত হলেও পাঞ্জাবী ও পাঠানদের সাথে নিয়ে শেষ পর্যন্ত সিপাহি বিদ্রোহ দমন করে ও ব্রিটিশ কমান্ডার হডসন পুরো মোঘল কেল্লা ঘিরে ফেলে । সম্রাট এর তিন পুত্র মীর্জা মোঘল , খিজির সুলতান ও মীর্জা আবু বকর প্রথম দিন আত্নসমর্পন করেননি । তারা একহাজার বিদ্রোহি সৈন্য নিয়ে প্বার্শবর্তী হুমায়ুন এর গম্বুজে অবস্থান গ্রহন করেন । কিন্তু হডসন প্রতিটি সৈন্যকে হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের নিঃসর্ত আত্নসমর্পন করতে বলে । সৈন্যদের কথা ভেবে তারা শেষ পর্যন্ত আত্নসমর্পনের সিদ্ধান্ত নেন । কিন্তু হডসন সিপাহিদের প্রাণ ভিক্ষা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সবাইকে নির্বিচারে হত্যা করে ।অধিকাংশ সৈন্যের লাশ জনসম্মুখে প্রদর্শনের জন্য খুনি দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয় ।সম্রাটের তিনপুত্র মীর্জা মোঘল , খিজির সুলতান ও আবু বকর এর কাপড় খুলে নেওয়া হয় । তারপর তাদের বুকে বন্দুক লাগিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় । হত্যা করার পর তাদের মস্তক কেটে প্লেটে সাজিয়ে পিতা সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের কাছে পাঠানো হয় ঠিক যেভাবে আওরঙ্গজেব তার ভাইয়ের মস্তক কেটে পিতার কাছে পাঠিয়েছিল ।এভাবে সিপাহী বিপ্লব অধ্যায়ের করুন সমাপ্তি ঘটে ।
পুরান দিল্লির মানুষ এখনও বিশ্বাস করে যে তিন জনের আত্না এখনও খুনি দরজার আশে পাশে ঘোরাঘুরি করে । অনেক উতসাহী মানুষ আবার তাদের দেখতে পাওয়ার দাবি ও করেন ।আবার অনেক এর বিশ্বাস বর্ষাকালে এই দরজায় একবার বৃষ্টির পরিবর্তে রক্ত বর্ষিত হয়েছিল যা ছিল সিপাহী বিদ্রোহে যাদের হত্যা করে এই দরজায় ঝুলিয়ে রাখা হয় সেই সিপাহিদের রক্ত । বেশিরভাগ যুক্তিবাদী মানুষ এর পক্ষে তা বিশ্বাস করা কঠিন হলেও সবাই স্বীকার করেন এই দরজাটি ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে অভিশপ্ত স্থান । ২০০২ সালে পুরো ভারতে সারা ফেলে দেওয়া মেডিক্যাল ছাত্রীর ধর্ষনের কথা কে ভুলতে পারে । ধর্ষনের স্থানটি কিন্তু ছিল খুনী দরজা ।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×