হায় কপাল, আজকেও অফিসের গাড়িতে উঠতে পারলাম না। সকালে আমার ছোট্ট আম্মুটার সাথে খেলতে যেয়ে প্রায়ই এই বিপত্তিতে পড়তে হয়। যাই হোক, আমার বাবুটাকে সময় দেয়ার বদলে এই দুর্ভোগ আসলে কিছুই না !
ঠায় দাড়িয়ে আছি, গাড়ি যায় গাড়ি আসে, শেষ পর্যন্ত উঠতে পারলাম বিআরটিসির একটা বাসে। বাস চলছে থেমে থেমে, হেল্পার ভাই সমানে যাত্রী ঊঠাচ্ছে। ভিতরের উত্তেজিত যাত্রীরা থেমে থেমে রণহুংকার দিচ্ছে। আমি দর্শক হয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ করছি, সবমিলিয়ে বেশ জমজমাট পরিবেশ। একটা সিট ফাঁকা হতেই সুযোগ সন্ধানীদের মতন টুপ করে বসে পড়লাম।
পাশের ৩০ ছুঁই ছুঁই এক ভদ্রলোক মোবাইল ফোনে কথা বলছেন। শুদ্ধ ভাষা উচ্চারণে ব্যাপক কষ্ট হচ্ছে তার, কিন্তু চেষ্টার কমতি নেই। পাশেই যেহুত বসা তার কথকপোথন বেশ ভাল মতই শুনতে পাচ্ছি। আর ভদ্রলোকও মনে হয় তার কথাবার্তার গোপনীয়তার ব্যপারে বেশ উদাসীন। কথা শুনে মনে হচ্ছে তিনি কোন গ্রাম্য ললনাকে পটাবার চেষ্টা করছেন। ভদ্রলোক তার লক্ষ্যে বেশ অটুট, তিনি ক্রমাগত নিজের সুনাম এবং ললনার বিভিন্ন গুণগান করেই চলেছেন।
২০ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেল, পাল্লা দিয়ে ভদ্রলোকের রোমান্টিকতাও বেড়ে চললো। হিসেব কষে দেখলাম এই পিক আওয়ারে তিনি মিনিমাম ৪০-৫০ টাকার কথা বলে ফেলেছেন। হেল্পার এসে হাজির- " ভাড়া দেন"। ভাড়া দিলাম। পাশের ভদ্রলোকও দিলেন কিন্তু ১০ টাকার জায়গায় দিলেন ৫ টাকা। হেল্পার হেল্পলেস হয়ে গেল। বললো ভাই আর ৫ টাকা দেন। সাথে সাথে সেই ভদ্রলোক তার গালে একটা চড় মারলেন। এই ঘটনায় পুরাই হতভম্ব হয়ে গেলাম। প্রতিবাদ করলাম, তিনি আমাকে শাসালেন, বললেন " আপনাদের জন্যই এরা লাই পায় আর নাক গলাবেন না"। বিব্রত হয়ে স্থান পরিবর্তন করে অন্য সিটে গিয়ে বসলাম, আর লক্ষ্য করলাম হেল্পারের চোখে চিকচিকে পানির রেখা।
মোড়াল অফ দ্যা স্টোরিঃ ফালতু কাজে শতশত টাকা ব্যয় করি আর আপরদিকে সমাজের খেটে খাওয়া মানুষদের সাথে করি ২ টাকা ৫ টাকার মুলামুলি। " আবার তোরা মানুষ হ " ।