"Die Religion ... ist das Opium des Volkes" ধর্মকে অপিয়ামের সাথে তুলনা করেছিলেন জার্মান ইকোনমিষ্ট কার্ল মার্ক্স। তার মতে, "Religion is the sigh of the oppressed creature, the heart of a heartless world, and the soul of soulless conditions. It is the opium of the people". শ্রমজীবি মানুষের মনে মিথ্যা আশা জাগানোর অপরাধে তিনি ধর্মকে প্রত্যাখান করেছিলেন। এর বোধগম্য কারনও ছিলো; ততকালিন ইউরোপের রুলিং শ্রেনির ব্যাকআপ ছিল চার্চগুলো এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বের ফারাকটা ছিল বড়ই সংকীর্ণ। রাশান বিপ্লবী ভ্লাদিমির লেলিনও হেটেঁছিলেন একই পথে। ধর্মকে তিনি দেখেছেন মানুষের ডেভেলপমেন্টের পথে বড় নেগেটিভ হিসেবে। তাইতো মার্ক্সিষ্ট-লেলিনিষ্ট মতবাদে বিশ্বাসী রা্ষ্ট্রগুলো ছিল হয় নিরিশ্বরবাদী/এথিয়েষ্ট অথবা ধর্মবিরোধী/এন্টি-রিলিজিয়াস। তথাপি বাংলাদেশের মত দেশগুলোর পরগাছা সমাজতন্ত্রীরা ক্ষমতার লোভে কিংবা লোক দেখানোর প্রয়োজনে যদি একেবারে পবিত্র হজ্জ্ব সেরে ফেলার মত ধার্মিকতাও অর্জন করে ফেলেন, তখন অবাক হবেন না। কারন কমিউনিজমের বেসিক (Das Kapital and the Communist Manifesto) কিন্তু ধর্মের ব্যাপারে কিচ্চু বলে নাই- এই অজুহাত তো তাদের হাতে রয়েছেই।
কিন্তু যারা ধর্মে বিশ্বাসী, তারা কোন অজুহাতে সমকামীতা সমর্থন করেন তা বোধগম্য নয়। এইখানে আমি সমকামীতা ভালো নাকি মন্দ- সে তর্কে যাচ্ছি না। এ বিষয়ে তর্ক চলছে যুগের পর যুগ এবং এই তর্কে কাউকে জয়ী বা বিজয়ীও ঘোষনা করছি না আমি। আমি শুধু বলছি ধর্মবিশ্বাসের কথা। এবং তাদের কথা যারা ধর্মকে বিশ্বাস করে, মানে, যতটুকু সম্ভব পালন করে বা করার চেষ্টা করে। আমি তাদের কথাও বলছি না যারা ধর্মকে আধুনিকতার বিরুদ্ধে দাড়াঁ করায় বা স্রোতের অভিমুখে গা ভাসানোকে প্রগতীশীলতা মনে করে। কারন তারা হয়তো জেনে বা না জেনে, বুঝে বা না বুঝে স্রোতে ভাসে, নিজের ধর্ম, কৃষ্টি বা সংস্কৃতিকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। অনেকটা অজপাড়াগায়েঁর মদনঠাকুর বিলাতে এসে নিজেকে "আমি কি হনু রে" ভাবে সেই রকমই। তাদের কথাও বলছি না যারা পারিপাশ্বির্কতায় খুবই স্পর্শকাতরতায় ভোগে এবং সমাজে নিজেকে ইনসিকিউর ভাবে। এধরনের লোকেরা একধরনের হীনমন্যতায় ভোগে এবং কিভাবে সমাজে/গ্রুপে নিজের অস্থিত্ব প্রকাশ করা যায়- ভেবে অস্থির হয়। এরা তাই নতুন কোন ইস্যু পেলেই লাফ দিয়ে নৌকোয় উঠে বসে। আর মনে মনে ভাবে, "এইতো আমিও এসে পড়লাম তোমাদের মাঝে- প্রগতীশীলতার কাতারে; তোমরা আমায় দেখতে পাওনা, আসলে আমিও তোমাদেরই একজন।" এদের নিজস্ব পরিচয় নেই, ভাড়া নৌকোয় জীবন পার। এরা খুব ঘনঘন "বি ইউরসেল্প বি ইউরসেল্ফ" বুলি আউড়ায়- আসলে নিজেকে মনে করিয়ে দিতেই এ প্রচেষ্ঠা।
পৃথিবীর অধিকাংশ ধর্মের বড় বড় মতবাদগুলোই সমকামীতাকে বর্জন করেছে। আমি তাই তাদের কথা বলছি যারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে-নিজেকে এখনো ধর্মীয় অনুশাসনে দেখতে চায়-ধর্মকে এখনো পুরনো মতবাদ বলে ছুড়েঁ ফেলেনি। এরা নামাজে-রোজায় বিশ্বাসী, এক আল্লাহতে বিশ্বাসী- আবার সমকামীতার দিকে সহনশীলতার দৃষ্টিতে তাকায়। ভালোবাসার কোন লিঙ্গ নেই ভেবে বসে। তাই পুরুষ-পুরুষ বা নারী-নারীতে ভালোবাসার সর্ম্পকে ধর্মে আপত্তি থাকলেও ইনাদের আপত্তি নাই। ইনাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, "পিতা-কন্যা কিংবা ভাই-বোন সর্ম্পকে আপত্তি আছে কি?" ইনারা আসতাগফিরুল্লাহ/নাউযুবিল্লাহ বলে মুখ ফিরিয়ে নেন। কারন এটা বড়ই খারাপ আর বাজে শোনায়। হে ভ্রাতা, ভগ্নিগন, সমকামীতাও একসময় খুব বাজে শোনাত। যুগ যুগ আলোচনা সমালোচনার মোড়ে তা তেমন বাজে লাগে না। আধুনিকতা আর প্রগতীশীলতার নামে যত অশ্লীলতা এখন সমাজে চলছে কোনটাই আমাদের এখন ততটা বাজে লাগে না। কারন চিবাতে চিবাতে তেতোও একসময় ততটা তেতো লাগে না। তাই আজ থেকে শখানেক বছর পর যদি রক্তের সর্ম্পকের মাঝে বিয়ে করার আইন প্রনয়ন করা হয়- খুব বাজে লাগবে না কিন্তু। "ভালোবাসার সম্পর্কের আবার রক্ত সম্পর্ক কী?" এমন প্রশ্ন অহরহই শোনা যাবে। সেদিনের বীজ যে আপনারা আজকেই বপন করে গেলেন- ভেবেছেন কী!
কঠোর সত্য তো এই যে, আপনি হয় ধর্মে আছেন কিংবা নাই। আপনি হয় ইশ্বরে বিশ্বাসী কিংবা নন। এর মাঝামাঝি কোন পথ নাই। ব্যক্তিস্বাধীনতায় আপনি চলতে পারেন আপনার পথ- কোন বাধা নেই। যেকোন মতবাদে আপনি বিশ্বাসী হতে পারেন- সর্ম্পুন আপনার ইচ্ছা। কিন্তু দুই নৌকায় পা দিয়ে না পাওয়া যায় ইশ্বরের সন্ধান না মিলবে প্রগতীশীলতার নামে স্বান্তনা। আত্বতুষ্টি অর্জনে প্রয়োজন কঠিন বিশ্বাস, দৃঢ ব্যক্তিত্ব আর আত্ব বিশ্বাস। রংধনুর ছয় রঙ চোখের দৃষ্টিকে রঙীন করে কেবল - বিশ্বাসকে মজবুত করতে চাই মনের দৃঢতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:৩৮