শুধু আমেরিকা নয় বর্ণবাদ ছড়িয়ে আছে পুরো ইউরোপ জুড়ে। শুধুই কি ইউরোপে? আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ও এর আওতা মুক্ত নয়।
~সাদা কালোর পার্থক্যই যদি বর্ণবাদের মৌলিক ভিত্তি হতো তাহলে যে কোনো দেশের সাদা চামড়ার নাগরিকরাই পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে রাজকীয় সম্মাননা পেতো, কালোরা আরো নিগৃহীত হতো।
জর্জ ফ্লয়েডের মতো কালোরা পুলিশে আসার সুযোগ পেতো না। নিগ্রো কেউ আমেরিকার বিমানবাহিনীর প্রধান হতে পারতো না। বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পার তো না।
কালো বলেই যদি মানুষ নিগৃহীত হতো তাহলে কালো পুলিশের সামনে এসে সাদা চামড়ার কাউকে এভাবে প্রতিবাদ করতে হতো না। সেই রাস্তাটাই ওরা বন্ধ করে দিতো।
~ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার সাথে এশীয় কিংবা আফ্রিকার বিস্তর ফারাক রয়েছে। বিশ্বের একেক প্রান্তে অবস্থিত ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের মানুষ একই মনস্তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের কিভাবে হলো? আমেরিকাকে নির্মাণ করেছে ইউরোপীয়রা।অস্ট্রেলিয়াকেও নির্মাণ করেছে ইউরোপীয়রা, তবে অস্ট্রেলিয়া যেহেতু সাম্প্রতিক সময়ে নির্মীত হয়েছে তাই কম বেশ ইউরোপীয়দের সাথে তাল মিলিয়ে অন্যান্য মহাদেশ থেকে মানুষ সেখানে বসতি গড়েছে। তাই ইউরোপের মতো আমেরিকায় বর্ণবাদ যেমন প্রকট আকার ধারণ করেছে, অস্ট্রেলিয়ায় তেমনটি হতে পারে নি, অন্যান্য মহাদেশের নাগরিক ভারসাম্যের কারণে।
চায়নারা চামড়ায় সাদা হওয়ার পরও পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে যেয়ে তাদের দৈহিক গঠনের পার্থক্যের কারণে এশীয় বলে গালি শুনতে হয়। আমাদের দেশের ধবধবে সাদা কেউ পাশ্চাত্যের দেশে তাদের এক্সেন্টের কারণে থার্ড ক্লাস জাতি বলে গালি শুনে।
~কালো মেয়ে হইছে কথাটা শুনে বাবার মন ভেঙ্গে যায়, ছেলে প্রাইভেট জব করে শুনে হবু শ্বশুর নাক ছিটকায়, মেয়ের গায়ের রং কালো বলে তাকে দেখতে পর্যন্ত যাওয়া হয় না তার কোনো যোগ্যতা আছে কিনা সেটা দেখার প্রয়োজন ও কেউ বোধ করে না-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া নিয়ে কোনো ছেলের পোস্টে লাইক কমেন্টের সংখ্যার আকাশ পাতাল পার্থক্য দেখলেই আমাদের মানসিকতা বুঝা যায়, আপনি এডমিন হওয়ার কারণে আপনার বিরোধী মতের কোনো মানুষের যৌক্তিক সমালোচনা গ্রুপে সহ্যই করতে পারেন না ....
আমরা কি কম রেসিস্ট? আমাদের মতো রেসিজম কি পৃথিবীর অন্য কোথাও চর্চা হয়? ও দেখতে অসুন্দর ওর সাথে মিশবানা। ভুলেও রাজনীতির ছত্রছায়ায় যাবা না কারণ রাজনীতি মানেই খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে? ছেলেটা তো নাস্তিক হয়ে গেছে।
ফেমিনিস্টরা ধর্মের বাণী শুনতেই পারে না, ইকোনমিস্টরা সোশ্যালিজম সহ্য করতে পারে না, সুন্নীরা ওহাবিদের, আওয়ামীলীগ বিএনপিকে আরো কত শত পার্থক্য
~পাশ্চাত্যে এই মতবিরোধ আছে তবে সেটা তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে, বিতর্কের মাধ্যমে ভালো কোনো জীবনব্যবস্থা তৈরির উদ্দেশ্যে। আমরা ব্যবহারিক জীবনে যেভাবে এগুলোর চর্চা করছি সেটা পৃথিবীর কোনো জাতিই করছে না।
~রেসিজমের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়ে থাকি পরিবার থেকে, তারপরের শিক্ষা পাই প্রতিষ্ঠান থেকে। আমার কলেজ দেশের প্রথম বিদ্যাপীঠ, আমার বিশ্ববিদ্যালয় না হলে তো বাংলাদেশেরই জন্ম হতো না, আমার বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য, আমার ক্যাম্পাস উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাস, প্রাইভেট হওয়ার পরও আমার ক্যাম্পাস থেকেই বিশ্বের টেক জায়ান্টরা লোক হায়ার করে, সুতরাং আমি ই সেরা।
এই সেরার মনোভাবটাই খারাপ, এটাই আপনাকে আর সামনে এগুতে দিবে না। প্রথম স্থান অর্জন করার পর আর কোন স্থান প্রত্যাশার জন্য মানুষ চেষ্টা করতে পারে!?
~পার্থক্যটা সাদা কালোর। সাদা মানে যে ফর্সা, আর কালো মানেই যে ময়লা এমনটা পুরোপুরি ফ্যাসিজম। তাদের ভাষাতেই বলছি, ফর্সা মেয়েকে আপনি বিয়ে করতেই পারেন তাতে দোষের কিছু না। এজন্য গায়ের রং ময়লা বলে যে অপরকে অবজ্ঞা করবেন এটা পুরোটাই পাগলামি। আপনার পছন্দ আপনার রুচিবোধ যে কোনো রকমেরই হতে পারে, তাতে দোষের কিছু নেই, কিন্তু সেটা যদি অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে যান তাহলে কঠোর ভাষায় এটার বিরোধিতা করতে হয়। প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে পছন্দ করার ক্ষমতা আছে। কিন্তু সামাজিকভাবে যদি এমন কিছু ফ্যাক্টর তৈরি করে দেই যাতে সবার পছন্দ একপেশে হয়ে যায় সেটা মানসিক অসুস্থতাকে নির্দেশ করে।
~প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় বাহবা কুড়াচ্ছে, কিন্তু ফেয়ার এন্ড লাভলীর সাথে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততায় উনি যেভাবে বর্ণবাদকে উসকে দিচ্ছে তাতে করে বর্ণবাদের প্রকৃত রূপ জাতীয়তাবাদ না হয়ে যদি বর্ণবাদই হতো তাহলে উনার এবং ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিরুদ্ধে মামলা হতো। সাদা প্রত্যেকের আলকাতরা মেখে কালো হওয়ার অধিকার আছে, কালো প্রত্যেকের আটা ময়দা মেখে সাদা হওয়ার অধিকার আছে। সাদা কালো হতে চাইলে কিংবা কালো সাদা হতে চাইলে আপনি সেখানে বাধা দিতে পারবেন না, বাধা দিলে যেভাবে বর্ণবাদী হয়ে যাবেন ঠিক তেমনি ভাবে সাদাকেই সৌন্দর্যের একমাত্র মাপকাঠি বলে প্রচারণা করাও বর্ণবাদী আচরণের প্রকাশ।
বর্ণবিদ্বেষীর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে দীপিকা পাড়ুকোন বলেন, নিজের শরীরের চামড়ার বর্ণ লুকানোর কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। এমনকি, ওই ধরনের সামগ্রীর প্রচারে বর্ণবিদ্বেষী মনোভাবের সৃষ্টি করে। আর তাই এমন পন্যের বিজ্ঞাপন থেকে নিজেকে সরে নেওয়া এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন অভিনেত্রী। ~শেষ সময়ে হলেও উনার ভুলটা বুঝতে পারার জন্য সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এতোদিন স্রেফ টাকার জন্য যেভাবে বর্ণবিদ্বেষ ছড়িয়েছেন সেটার বিরুদ্ধে কেউ যদি আদালতে মামলা করে তাহলে কি সে ফ্যাসিস্ট হয়ে যাবে?
~প্রাচ্যের যত বড় শিক্ষিত হোক কিংবা ধনী পাশ্চাত্যের রিক্সাওয়ালার কাছেও তাকে শুনতে হয়, 'ও তুমি ইন্ডিয়ান! তোমাদেরকে আমরা শাসন করেছিলাম, অসভ্য থেকে আমরাই তোমাদেরকে সভ্য করেছিলাম।' (ইন্ডিয়ান দিয়ে উদাহরণ দিলাম।) তাদের এই আচরণ বর্ণবাদী ধারণার জন্য হয় না এটা হয় জাতীয়তাবাদ ধারণা থেকে।
~জাতীয়তাবাদের ধারণাকে বর্ণবাদের মুখোশ পড়ানোয় একটা সূক্ষ্ম ব্রেইনওয়াশের কাজ করে। সমগ্র মুসলিম জাতিকে আল্লাহ একটা দেহের সাথে তুলনা করে নবীর মাধ্যমে আমাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যাতে, পৃথিবীর যেখানেই কোনো মুসলিম ভাইকে আঘাত করা হলে সেটার ব্যাথা আমরা অনুভব করতে পারি। আমাদের সেই মাত্রার জাতীয়তাবোধ থাকতে হবে। আজ যদি সেটা থাকতো তাহলে পৃথিবীতে শুধু মুসলিমরাই নিগৃহীত হতো না। মুসলিম জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে সবাই হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারতো। পাশ্চাত্য নিজেদের বর্ণবাদী আচরণকে সাদা কালোর পার্থক্যের মুখোশে আড়াল করে নিজেদের জাতীয়তাবাদী ধারণাকে গোপন রাখে এজন্য যাতে মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তারা যেভাবে সোচ্চার তাদের জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সেভাবে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।
তারা ঠিক সেটাই চর্চা করছে যেটা আমাদের চর্চা করতে বাধা দিচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:০২