করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের প্রচুর 'আতঙ্কিত' হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার দরকার ছিলো। মৃত্যুভয়ে 'আতঙ্কিত' হয়ে দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভিতর ঘাপটি মেরে বসে থাকার প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু আমরা একটুও 'ভীত' কিংবা 'আতঙ্কিত' হই নাই। কারণ আমাদের বারবার 'আতঙ্কিত' না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সরকার, মিডিয়া, বিশেষজ্ঞগণ সবাই তারস্বরে বলেছে, 'আতঙ্কিত' হবেন না, সতর্ক হোন।
আমরা 'সতর্ক' হয়ে সবার আগে ব্যাংক থেকে প্রচুর নগদ অর্থ তুলে নিলাম, তারপর সেই টাকা নিয়ে ছুঁটলাম সুপার শপ কিংবা কাঁচা বাজারে। প্রচুর নিত্যপণ্য এক সঙ্গে কিনে ফ্রীজ, ডিপ ফ্রীজ, কিচেন কেবিনেট সব ভরে ফেললাম। পরিবারের অন্তত একমাসের 'খাদ্য নিরাপত্তা' নিশ্চিত করে বাজারে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে ফেললাম।
তারপরও আমরা ঘরে বসে থাকিনি। 'আতঙ্কিত' না হয়ে 'লক ডাউন' উপেক্ষা করে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিয়েছি। চায়ের দোকানে গায়ে গা লাগিয়ে বসে গুলতানি মেরেছি। রাস্তায় আর্মি নেমেছে কিনা দেখতে গিয়েছি। বিয়ে বাড়িতে বিয়ে খেতে গিয়েছি। সমুদ্রের বাতাস খেতে কক্সবাজারেও গিয়েছি। অপ্রত্যাশিত ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য 'ঈদের আনন্দ' নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুঁটে গিয়েছি।
বিশ্বাস করুন আমরা একটুও 'আতঙ্কিত' হইনি। কারণ আমাদেরকে বার বার 'আতঙ্কিত' না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে, বলা হয়েছে সতর্ক হতে। কিন্তু বাঙালি কবে 'আতঙ্কিত' না হয়ে আগে সতর্ক হয়েছে! এই জাতিকে একমাত্র মৃত্যু ভয়ই সতর্ক করতে পারে।
কিন্তু 'বীর' বাঙালির মনে মৃত্যুভয় জাগিয়ে তুলতেও রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। করোনা জনিত মৃত্যু যে কতো ভয়ঙ্কর ! আত্মীয়-স্বজন বিহীন অসহায় করুণ মৃত্যু। এই নিষ্ঠুর বাস্তবতাকেও বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে 'অকুতোভয়' বাঙালি কারণে-অকারণে বাইরে ঘোরাফেরা অব্যাহত রেখেছে। এতে প্রায় ব্যর্থ হয়ে গেছে গত দেড়সপ্তাহের বিরতী হীন অঘোষিত 'লকডাউন'।
ফলাফল ঢাকার ২৯টি এলাকা সহ দেশের ১১টি জেলায় করোনা ভাইরাসের বিস্তার। বাড়ছে সংক্রমণ, বাড়ছে মৃত্যু। কিন্তু তবুও আমরা এখনো আতঙ্কহীন, অসতর্ক, নিরুদ্বেগ।
বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। তবুও আমরা উদাসীন, অসতর্ক, অসচেতন। আমাদের হুস হবে আর কবে? (মনে হয়...মৃত্যুর পরও বাঙালির হুস হবে না, এরা বেহেস্তে গেলেও এক সময় বোর হয়ে দলে দলে দোজখ দেখতে যাবে। )
পুনশ্চঃ দেশে নাকি ছাগলের বাম্পার ফলন হৈছে। কিন্তু করোনা ঝুঁকি উপেক্ষা করে চরেবরে খাওয়া এই ছাগল গুলো আগামি বকরি ঈদ পর্যন্ত বেঁচে থাকবেতো !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২০