কাল সারা রাত ঘুম হয়নি। বিছানায় এপাশ ওপাশ করেছি শুধু। ঘুম আনার অনেক চেষ্টা করেছ, কাজ হয়নি কিচ্ছু। নিজের ভবিষ্যৎ আর বর্তমান নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিভোর ছিলাম। দুশ্চিন্তা দূরে ঠেলে ঘুমোবার ব্যর্থ চেষ্টা।
ঘন ঘন টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ছে। প্রতিবার বের হয়ে এক গ্লাস করে পানি খেলাম। বিছানায় যেতে যেতে বারটা বেজে গিয়েছিল। শেষ যখন উঠেছি দেড়টা বাজে। জানালাগুলো খুলে দিলাম। রুমের মধ্যে কেমন একটা ভ্যাবসা গন্ধ আটকে আছে। শেষ রাতের দিকে যখন হালকা ঘুম এল। সুন্দর স্বপ্নটি তখনই দেখলাম।
-আমি দু’বছরের পিচ্চি হয়ে গিয়েছি। দাদি আমাকে কোলে করে দোল দিচ্ছেন। দুটো দাঁত নিয়ে আমি গাল ভরে হাসছি। দোল খেয়ে আমার ছোট্ট হাতে দাদির চুল ও শাড়ি মুট করে ধরছি ভয়ে যাবার ভয়ে। কিন্তু হাসছি। হঠাৎ দাদির কোল ভিজিয়ে দিলাম। দাদি ইয়ার্কির ছলে ঘুষি দেখিয়ে বললেন, দেব একটা ঘুষি? নাক ফাটিয়ে দেবো? আমি আবারও হাসলাম। দাদি মাকে ডাকলেন, ও বউ! ওর প্যান পাল্টিয়ে দাও। মা এসে আমাকে কোলে নিয়ে চুমু খেলেন। ঘুমটা তখনই ভেঙ্গে গেল।
আমি নিজেকে আমার বিছানায় আবিস্কার করলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম আমি বোধ হয় বাড়িতে আছি। মশার কয়েলটা কখন যেন নিভে গেছে। এক ঝাক মশা আমার কানের কাছে বুনবুন করে চলে গেল। চারিদিকে সলক সলক লাগছে কেন? সকাল হল নাকি। না। শেষ বার ঘুমোবার আগে বাতি অফ করতে ভুলে গেছি। মোবাইলটা হাতে নিলাম ক’টা বাজে দেখার জন্য। ফোনের চার্জ নেই ভুলে গেছিলাম। ফোন বন্ধ হয়ে আছে। চার্জ হওয়ার পর ফোন খুলে দেখি তিনটে সাতাশ বাজে।
শেষ রাতের এই সময়টা লেখার জন্য খুব উপকারি।ভীষণ লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এখন লিখতে বসলেই সকালে ঘুম আসবে। কাজ করতে পারবো না। নিজের ইচ্ছেটুকু বিসর্জন দিয়ে বিছানায় পড়ে রইলাম।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি কয়েল জ্বালাবো। মশারা খুব উপদ্রব সহ্য করা যায় না। কিন্তু মন চাইছে বিছানা ছেড়ে উঠি। কাঁথাটা ভাল করে মুড়িয়ে নিলাম। আবার সেই দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাইনি।
সকালে যখন ঘুম ভাঙে দেখি আমার কলিগ দরজায় ঠক ঠক করছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি মা চার বার কল দিয়েছেন। বেলা দশটা বাজে। ফজরের নামাজের কথা মনে পড়ল। আগেই বুঝতে পেরেছিলাম আজকের নামাজটা কাজা হবে। তাই হল। ভাবছি আম্মুকে ফোন দিবো। ভাবতে ভাবতে আবারও ফোনটা বেজে উঠল। এবার আম্মু ফোন করেনি। একটা রং নাম্বার। অনিচ্ছা সত্বেও ফোনটি রিসিভ করলাম। ফোনের ওপাশ থেকে একজন ভদ্রলোকের কণ্ঠ ভেসে এল। স্যার আপনি আমাদের কম্পানিতে চাকরির জন্য যে এপ্লাই করেছিলেন, আপনি সিলেকটেড। ভদ্রলোক কংগ্রেচুশেন বলতে ভুললেন না। একটুকরো শীতলতা যেন আমার সর্বসত্তায় মুড়িয়ে গেল। আমি কাঁথা গায়ে নীবর বসে রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৪