somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভদ্রতা কি আদৌ কোন দুর্বলতা?

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইদানীং কালে আমার আচরণকে অনেকেই দুর্বলতা ভাবছেন। এটা ভাবার কোনই কারণ নাই। আমি একজন মানুষ আর সেই মানুষের গুণ এবং দোষ দুটোই আমার মধ্যে আছে। গুণসমূহ যারা দেখেন তারা আমাকে ভদ্র ভাবেন আর দোষসমূহ যারা দেখেন তারা আমাকে অভদ্র ভেবে থাকেন। অনেকে আবার মনে মনে ধারনা পোষণ করে রাখেন অর্থাৎ দূর থেকে ধারনা তৈরি করেন। কেউ মনে করেন আমি ধার্মিক আর কেউ মনে করেন আমি বক ধার্মিক। কেউ ভাবেন আস্তিক আর কেউ ভাবেন আমি নাস্তিক। অনেকে তাদের মত করে ভাবেন। যারা ইতিবাচক তারা আমার ইতিবাচক দিকটাকে দেখে থাকেন আর যারা নেতিবাচক তারা আমার নেতিবাচক দিকটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসেন। আমি কি ধরনের মানুষ তা আমি নিজে নির্ধারন করতে পারিনা। সমাজ যদি আমাকে পাগল ভাবে তাহলে কিন্তু আমি পাগল হয়ে যাই।
আমি কিন্তু সর্বদাই নিজেকে একজন মার্জিত ভদ্রলোক হিসাবে তৈরি করতে চেয়েছি। তাই আজকে আমি সেই ভদ্রতা সম্পর্কে আমার ধারনা প্রকাশ করলাম, যাতে করে সবাই আমাকে যাচাই করতে পারেন। নিজেদের অবস্থান যাচাই করতে পারেন, চাইলে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারেন, আমাকে পরিবর্তনের উপদেশ দিতে পারেন।
আমি মনে করি, “ভদ্রতা" একজন মানুষের মূল্যবোধ ও বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক। সাধারণতঃ সহানুভূতিশীল, সদয়চিত্ত, সুবিবেচক, নম্র ও সৌহার্দশীল মানুষকে “ভদ্র" কিংবা “সজ্জন" বলা হয়ে থাকে। এরিস্টটল উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন “ভদ্র" হচ্ছেন সেই ব্যাক্তি যিনি “রাগ" এর ব্যাপারে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেন অর্থাৎ অল্পতে রাগান্বিত যেমন হয়ে যাননা ঠিক তেমনি একদম রাগ-দুঃখবিহীন ও না। ন্যায্য ও যুক্তি সংগত রাগের নাম হচ্ছে “ভদ্রতা"।
অনেকে ভদ্রতা নামক বৈশিষ্ট্যকে দুর্বলতা মনে করেন। এব্যাপারে কাহলীল জিব্রান বলেছিলেন, “কোমলতা কিংবা সৌহার্দশীলতা কোন দুর্বলতা কিংবা হতাশা নয় বরং এগুলো হচ্ছে দৃঢ় সংকল্পতা ও শক্তির পরিচায়ক।”
ভদ্রতা হচ্ছে একটি শক্তিশালী হাতের কোমল ও স্নিগ্ধ স্পর্শ; অন্যজনের দুর্বলতা আর সীমাবদ্ধতায় সহানুভূতিশীল, সুবিবেচক ও সৌহার্দশীল আচরণ। একজন ভদ্র মানুষ সর্বদাই স্পষ্ট কথা বলেন। অন্যদের জন্য কখনও তা হয়ে পড়ে বেদনাদায়ক কিন্তু ভদ্রজন তার স্পষ্ট কথার প্রকাশকে সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন যাতে করে অন্যরা সত্য ও স্পষ্টতাকে দ্রুত উপলব্ধি করতে সক্ষম হতে পারেন।
"আমার বড় মেয়ে যখন ছোট ছিল তখন মাঝে মাঝে সে আমার হাতকে সজোরে চেপে ধরে ব্যাথা দেবার চেষ্টা করত। সে তার সকল শক্তি দিয়ে ব্যাথা দেবার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হত। তখন তার ভদ্র হওয়ার প্রয়োজন ছিলোনা, আমাকে ব্যাথা দেবার মত শক্তি তার মোটেও ছিলোনা। তখন তামাশা করেই, আমি তার হাতে ধীরে ধীরে চাপ দিতাম যতক্ষণ না সে চীৎকার করে উঠত। এটা কোমল হাত ছিলোনা, ছিল শক্ত হাত যা শিখত আর শিখাত ভদ্রতা কাকে বলে।”
ভদ্রতা একজন বিদুষী মানুষের সৎ গুণ। ভদ্রমহিলারা একজন ভদ্রলোকের সাহচর্য্য পছন্দ করেন; সন্তানরা ভালবাসেন ভদ্র পিতামাতার সৌহার্দ আর স্নেহমমতা; একজন ভদ্র বন্ধু সর্বদাই পাশে থেকে সাহস ও শক্তি যোগান এবং একজন ভদ্র নেতা শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন।
ভদ্রলোক তিনি, যিনি আত্ন-ত্যাগী, বিনয়ী, সহানুভূতিশীল, দয়ালু, ন্যায়পরায়ণ, স্নেহশীল, শান্তিকামী, ক্ষমাশীল, হর্ষোৎফুল্ল আর সহমর্মী। একজন ভদ্রলোক কখনই স্বার্থপর, অহংকারী, অমার্জিত, রুঢ়, অন্যায়কারী, উদ্ধত, সহিংস, আত্নবিশ্বাসহীন আর অজ্ঞ হতে পারেন না। তাই বলা যায় যে, একটি নয় বরং বেশ কয়েকটি ভালো গুনের সমন্বয় একজন মানুষকে সমাজে ভদ্র হিসাবে পরিচিতি দিতে পারে।
ভদ্রতা শুধুমাত্র কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয় এ কথাটি সঠিক নয়। ভদ্রতা তার উদ্দেশ্য, চিন্তায় ও ভাষায় প্রকাশিত করা যায় কেননা ভদ্রতা তার অন্তরে বসবাস করে। সত্যিকার ভদ্রলোকের ভিত্তি ও শিকড় মার্জিত হয়ে থাকে আর তিনি ভদ্রতার ফলাফল ভোগ করে থাকেন কৃতজ্ঞ, আনন্দিত, সুখী ও পরিতৃপ্ত থেকে।
ভদ্রতা নামক বৈশিষ্ট্য অর্জনের জন্য প্রচণ্ড মানসিক শক্তির প্রয়োজন। ভদ্রতা এমন এক শক্তি যা দিয়ে আরও বিভিন্ন শক্তিকে ইতিবাচক পথে রূপান্তর করা যায়। এই প্রচণ্ড শক্তি নিজস্ব শক্তিকে সঠিক পথে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। নিজের আবেগকে সংযত করে আত্নশাসন করতে সক্ষম হয়। এক কথায় নিজের অন্তরের স্বত্বাকে প্রকাশিত স্বত্বার সাথে একীভূত করে দিয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
অন্তরের স্বত্বাকে চিনতে হলে আগে বিশদ্ধ সত্তা সম্পর্কে জ্ঞানের প্রয়োজন। সত্ত্বা ততক্ষণ বিশুদ্ধ থাকে যতক্ষণ এই বিশ্বের নেতিবাচক শক্তিসমূহ দ্বারা তা বিকৃত না হয়। এই নেতিবাচক শক্তিসমূহ হচ্ছে অহংকার, ক্রোধ, মর্মযন্ত্রনা, আত্নবিশ্বাসহীনতা আর নিরাপত্তাহীনতা। তাই নিজেকে বিশুদ্ধ করার মাধ্যমে মননে, হৃদয়ে, কথায় ও কাজে ভদ্রতা অর্জনের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন হচ্ছে নিজের অন্তর থেকে ঐ সকল কলুষিত নেতিবাচক ত্রুটিসমূহকে দূরীভূত করা যা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণের পর আমাদের চরিত্রে প্রবেশ করেছে।
এমনি শুনতে “ভদ্রতা' খুব সহজ কিন্তু ভদ্র হওয়া, ভদ্র থাকা ততটা সহজ নয়। ভদ্র হওয়ার জন্য শক্তির প্রয়োজন। অন্তরের কলুষ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রামের নাম ভদ্রতা। তাই ভদ্রতা একটি মানসিক ব্যাপার, আত্নস্থ হওয়ার ব্যাপার আর এই ব্যাপারটা আসে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস থেকে আর তার দেখানো পথ অনুসরণের মাধ্যমে। সৃষ্টিকর্তায় অপরিসীম বিশ্বাস মানুষকে ভদ্রতার সব উপাদান সমূহকে অর্জন করতে শিক্ষা দেয়। আর এই সকল উপাদান একই সাথে অর্জনের জন্য চাই ভালোবাসা।
ভদ্রতার একটি অনন্য উপদান হচ্ছে ভালোবাসা। এই ভালোবাসা অনুশীলন আর অভ্যাসে রূপান্তর করা অত্যন্ত কঠিন কাজ কিন্তু ভদ্রতায় উচ্চমাত্রা অর্জনের জন্য ভালোবাসা আত্নস্থ করা অতীব জরুরী। কেউ যদি অনন্দ, কৃতজ্ঞতাবোধ, প্রশান্তি, সমবেদনা এবং ধৈর্য্য এসকল গুণাবলী অর্জন করে ভালোবাসার গ্রন্থিতে তা বেধে নিতে সক্ষম হয় তাহলে সম্ভবতঃ সে ভদ্রতার মাত্রায় উত্তীর্ন হয়ে যেতে পারে। অমার্জিত আর রূঢ় হওয়ার চেয়ে ভদ্র হওয়া উত্তম। সহিংস কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হওয়া সহজ কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রাখা অত্যন্ত কঠিন, ভালোবাসা আরও কঠিন। তাই বলা যায় ভদ্র হিসাবে যারা নিজেকে পরিচালিত করতে পারেন তারা সম্মানিত আর মর্য্যাদাসম্পন্ন মানুষ। সম্মান আর মর্য্যাদা নিয়ে জীবন যাপন করার জন্য ভদ্র হওয়া আবশ্যিক। তাই কেউ সম্মানিত ও মর্য্যদাসম্পন্ন হতে চাইলে আগে তাকে ভদ্র হতে হবে।
বাংলাদেশে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বন্যা বইছে। সেখানে ভদ্রতার মানদণ্ড সমাজ বদলে ফেলতে চাইছে, তাই বলে সত্যিকারের ভদ্রলোক তার ভদ্রতার মানদণ্ড বদলায়নি আর কখনো বদলাবে না। ভদ্রলোক হয়তবা সমাজে নেতার আসনে আসীন হতে পারছেন না, কেননা জনগণ সত্যিকার ভদ্রলোকের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে এখনো প্রস্তুত হতে পারেনি। সৎ ও ভদ্র নেতৃত্ব পেতে হলে জনগণকে যেমন আরও পরিশালীত হতে হবে ঠিক একইভাবে নেতাদের আরও বলিষ্ঠ, সৎ ও ভদ্র হওয়া আবশ্যিক। পরিশেষে বলতে চাই যে, ব্যাক্তি আমার মধ্যে এসকল গুনের অভাব যেমন আছে ঠিক তেমনি দোষ সমূহের কোনই কমতি নেই। ভদ্রলোক হিসাবে পরিগণিত হওয়ার জন্য আমার চরিত্রে কি কি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে আপনারা মনে করেন, তা এখানে লিখে জানালে আমি কৃতজ্ঞ হবো। মনে রাখতে হবে ভদ্রতা কিন্তু দুর্বলতা নয় এটা সবলতা আর ভদ্রজন সত্য প্রকাশে কখনো পিছপা হয়না। নিজের মনের নিকট যা সঠিক মনে হবে সেটাই সত্যি আর নিজের মন যেটাকে সত্যি ভাবছেনা সেটাকে সত্য হিসাবে প্রকাশের নাম হচ্ছে মিথ্যা। একজন ভদ্রলোক সত্যের প্রকাশকে শুধুমাত্র সমাজের জন্য বোধগম্য করে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে প্রকাশ করে। এতে করে অনেকের মনোকষ্টের কারণ হয় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই সত্যের প্রকাশ যতই বেদনাক্লিষ্ট হয়ে থাকুক না কেন বয়ে আনে সমাজ ও ব্যাক্তির জন্য দীর্ঘমেয়াদী আনন্দ আর সুখ। আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে ভদ্রলোক হিসাবে বসবাসের শক্তি প্রদান করুন। আমীন!!
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×