১।
ছোটবেলায়, মাঝেমধ্যে মাঝরাতে 'চোর চোর' 'ধর.. ধর'... চিৎকার, চেচামিছিতে ঘুম ভাঙ্গলে মা- চাচীর বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে দৌড় দিতাম। গ্রামের জোয়ান বৃদ্ধ সবাই মিলে ন্যাড়ার মাঠ-বন জংগল একাকার করে চোরকে ধরে উত্তমমধ্যম দিয়ে বেধে রাখাতো। এবং সিদ্ধান্ত নিতো, ভোরে গলায় জুতোর মালা পরিয়ে বাজার ঘুরিয়ে থানায় হস্তান্তর করবে।
কিন্তু ভোর হলে দেখতাম, চোরের শরীরে থেকে রক্ত থোকা দাগ। ক্লান্ত শ্রান্ত শুকনো মুখ। কিংবা খবর পেয়ে চোরে বউ বাচ্চা এসে কান্নাকাটি করছে। আর গ্রামের মানুষ রাত্রের সিদ্ধান্ত থেকে আস্তে আস্তে সরে আসছে। এবং শেষে চোরের মুছলেখা নিয়ে - শাসিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে৷
জীবনে এমন বহু ঘটনা নিজ চোখে দেখেছি। এখনো দেখছি। এইতো বছরতিনেক আগের এক দুপুরে, কলেজ থেকে রিকশা করে গ্রামের বাজারে নেমে দেখি- দুজন যুবক মিলে এক ছেলেকে পেটাচ্ছে এবং কয়েকজন তাদের থামানোর চেস্টা করছেন। লক্ষ করলাম, ওখনাকার উপস্তিত অধিকাংশ মানুষই মারখাওয়া ছেলেটার হয়ে কথা বলছে। তারা বলতে চাইছে, মেয়েটাকে উত্যক্ত করে ছেলেটা অন্যায় করেছে। এবং ছেলেটা একটা বেয়াদব, বখাটে... জানি। তাই বলে এভাবে পেটাবে ?! এলাকায় কি বিচারসালিশ নেই?! আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের মেক্সিমাম মানুষই এমন। যারা চোখেরজল, করুণ চেহারা, অসহায়ত্ব দেখলে অন্যায়কারীর অন্যায় হালকা করে দেখে। এবং নিজের অজান্তেই ক্ষমা করে দেয়। এমন কি ঘটনাক্রমে তারা অন্যায়কারী, খারাপের পক্ষে অবস্থান নিতেও খুব একটা ভাবে না।
২।
নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় পুলিশের সামনে বিরোধীজোটের নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী-কর্মী সমর্থকদের হামলার বেশ কয়েকটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। বিরোধীদের উপর হামলা মামলার এইসব ভিডিও, নিউজ হোয়াটসআপ, ইমু, ম্যাসেঞ্জারে মুহূর্তেই দেশের আনাচেকানাচে পৌছে যাচ্ছে। মানুষ দেখছে- পুলিশের সামনে সরকারদলীয় মানুষ দলবেঁধে বিরোধীদের পেটাচ্ছে। পুলিশ দর্শকের ভূমিকায় দেখছে। এবং শেষে ঐ মারখাওয়া অসহায় মানুষগুলোকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাচ্ছে। শান্তিপূর্ণ সভায় মুজিবকোট পরে, নৌকা নৌকা স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি প্রার্থীদের গাড়িতে হামলা করছে। পেশির জোরে প্রকাশ্যে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বিনা মামলায় বিরোধীদের গণহারে গ্রেফতার করছে। -- সরকারদলের এসব অপকর্ম গ্রামের সাধাসিধে সাধারণ মানুষদের সমর্থন বিরোধীদের পক্ষে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপারটা সরকারদল অনুধাবন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা ভাবছেন, তাদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে ভয়ে মানুষ ভোট দিতে যাবে না। তারা খালি মাঠে গোল দিয়ে দেবে। প্রথমদিকে আমারও এমনটা মনে হয়েছিলো। কিন্তু এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন। কোথাও কোথাও মানুষ গণহারে লাঠিসোটা নিয়ে বিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। পুলিশ ভয়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা পুলিশের চোখ ফাকি দিয়ে ৩০ তারিখের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। সুতরাং এবার কেন্দ্র দখল মোটেও সহজ হবে না।
(চিত্রঃ ধানের শীষের প্রার্থী রেজা কিবরিয়ার বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালাতে গেলে, লাঠিসোটা নিয়ে তাড়া করে গ্রামবাসী)