দ্যা হাউস অফ সিল্ক
এন্থনি হরোউইৎজ'এর শার্লক হোমস সিরিজ এর প্রথম বই
১২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত "দি আর্থার কোনান ডয়েল এস্টেট" অনুমোদন দিল শার্লক হোমসের নতুন উপন্যাসের৷
অনুবাদ : শোভন নবী
হাউস অফ সিল্ক পড়লাম৷
স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস লিগ্যাসি শেষ হবার পর নতুন যুগের কিন্তু সেই পুরানো আবহের শার্লক ফিরে এল আবার !! স্বমহিমায় !!! রুদ্ধশ্বাস একটা উপন্যাস !!
প্রথম দুই ভাগ ধীরে ধীরে সময় নিয়ে পড়লেও শেষ ভাগ দম বন্ধ করে শেষ করেছি এক বসায় ! (বাচ্চাকাচ্চা, বউ, চাকরি ইত্যাদির ভেজালে এক বসায় কিছু করতে পারাটা বিশাল ক্রেডিট !)
মুগ্ধতা আর বিষণ্নতার এক বিরল যুগপত অনুভূতি নিয়ে গল্পটা ভেবেছি অনেকক্ষন৷ বইটা শেষ হলেও এই অনুভূতিটা মনের মাঝে চেপে থাকবে অনেকদিন৷
গল্পের শুরুটা টিপিক্যাল শার্লকীয় স্টাইলেই৷ হুট করেই চিত্র বিক্রেতা এক অদ্ভুত মক্কেলের আগমন৷ সাথে তার এক অদ্ভুত গল্প! দূর্লভ কিছু পেইন্টিং এর সাথে কিভাবে জড়িয়ে গেল দুর্ধর্ষ ট্রেন ডাকাতি আর চ্যাপ্টা টুপি পড়া ভয়ংকর এক আইরিশ গ্যাং, খুন, পাল্টা প্রতিশোধ আর ব্ল্যাকমেইল !
চিরায়ত শার্লক আর ওয়াটসন তদন্তে নামল সেই চিরায়ত স্টাইলেই৷ কিন্তু এই আপাত সহজ কেসটা অহংকারী শার্লকের মনস্তত্বে এমনভাবে ধাক্কা দিয়ে যাবে সে হয়ত স্বপ্নেও ভাবেনি৷ ততকালিন লন্ডনের সামাজিক আর অর্থনৈতিক দুরবস্থা আর ভয়ংকর বৈষম্যের চিত্র ফুটে উঠছিল শার্লক আর ওয়াটসনের তদন্তের প্রতি মুহুর্তে৷ ভবঘুরে শিশু কিশোর উইগনিস, রস, স্যালী - যাদের শৈশব আর কৈশোর কেড়ে নিয়েছে নির্মম দারিদ্র - তারা প্রত্যক্ষ কিম্বা পরোক্ষভাবে জুড়ে ছিল পুরো গল্পটাতেই৷
এই কেসে কেচো খুড়তে গিয়ে শার্লক হাত দিয়ে বসল যেন টাইটানোবোয়ার লেজেই৷ ফুসে উঠল ভয়ংকর কোন এক অজ্ঞাত শত্রু৷ খুনের দায়ে ফেসে গেল শার্লক, আটক হোল দুর্ভেদ্য কারাগারে, ফাসীর মঞ্চে উঠা শুধু সময়ের ব্যাপার৷ এবং শার্লকের শেষ অস্ত্র রহস্যময় এক প্রভাবশালী সরকারি আমলা বড় ভাই মাইক্রফট হোমস পর্যন্ত বাধ্য হোল অজ্ঞাত এই শত্রুর মুখোমুখি হওয়া থেকে পিছিয়ে যেতে !!
অসহায় এবং বিভ্রান্ত ওয়াটসন কে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গেল আরেক ভয়ংকর কুখ্যাত এক অপশক্তি৷
শেষ পর্যন্ত কি হোল এই কেসটার? ডাকাতির এই কেস শেষ পর্যন্ত কি উম্মোচন করলো? কিছু কিছু নির্মম সত্য আছে যা প্রকাশ না পাওয়াই কি সবার জন্য মঙ্গলজনক? সত্যিই কি মানুষের আদালতে সব অপরাধের বিচার হয়না?
হাউস অফ সিল্ক - আত্মম্ভরী শার্লক হোমস কে এমন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছিল যা চিরতরে বদলে দিয়েছিল এই চরম প্রতিভাবান গোয়েন্দার আত্মবিশ্বাসের অহংকার কে৷
এন্থনী হরউইতজ অসাধারন লিখেছেন৷ সে'ই যোগ্য উত্তরসূরী শার্লকের লিগ্যাসি কন্টিনিউ করার৷ তবে শার্লকের সিগনেচার ডিডাকশন টা বেশ ভালই মিস করেছি৷ আর গল্পের টাইমলাইন টা আমি বুঝতে পারিনি৷ এটাকি রাইকেনবার্গ ফলের আগের না পরের ঘটনা !!
বইটার অনুবাদ ছিল অসম্ভব সাবলীল৷ শোভন নবীকে হ্যাটস অফ৷ দারুন কষ্টকর ছিল অনুবাদের কাজটা বোঝাই যায় উপন্যাস টা পড়লে৷
শার্লক আর থ্রিলারপ্রেমীদের অবশ্য পাঠ্য৷
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১২:০৭