somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

০১ লা জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুক এখন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবছর উদযাপনের ছবিতে সয়লাব। বন্ধুরা নানা রঙে, নানা সাজে ঢাবি'র ছবি দিয়ে প্রোফাইল পরিবর্তন করেছে। দেখতে ভালাই লাগে। আরো ভালো লাগে যখন শ্রদ্ধেয় আবুল মাকসুদ সাহেব বলেন- বাংলাদেশের ইতিহাস মানেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের রাজনীতির সূতিকাগার হিসাবে বললে শরীরে আরো তেজ আসে। কিন্তু ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো ইস্ট বেঙ্গলে একটা নলেজ বেইসড সোসাইটি গড়ে তোলা। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক ভাবে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তা পূরণে শতবছরে শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৯ সালের মে মাসের ২৪ তারিখ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যর্থতা শীর্ষক এক সেমিনারে -ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলেন। জানা আর গবেষনায় ছাত্রদের সময় কোথায়। যেখানে শিক্ষকরাও পর্যন্ত বেসিক কোনো গবেষণায় নাই। নানা রকমের চাকুরি পাওয়ার প্রতিযোগিতামুলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই ছাত্রদের সময় চলে যায়। আর শিক্ষকদের সময় চলে যায় বিভিন্ন লোভনীয় পদগুলো দখলে রাখতে। আর ছাত্ররাই বা কেন অযথা গবেষণায় সময় বের করবে- যেখানে একজন গবেষককে কিংবা একজন অধ্যাপককে বিসিএস পাশ ডিসি সাহেবের সাক্ষাৎ পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। যদিও বা দুজনেই একই সালে পাশ করা বিসিএস ক্যাডার। তাই, রসায়নের গবেষণা বাদ দিয়ে ছাত্ররা ডিসি , এসপি হয়। অন্য দেশের মেধাবী ছাত্ররা যখন বিশ্বের নামি দামি সব কোম্পানির সিইও হয় -আমরা তখন তাদের নাম আর সাল মুখস্ত করে বিসিএসের প্রিপারেশন নেই।

কানাডার ছাত্রটি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে বসে ফুয়েল সেল ভিহিকল নিয়ে কাজ করে। আমেরিকার ছাত্রটি নাসার গবেষনা সেন্টারে বসে দূর গ্রহে রোবটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। রাশিয়ান ছাত্রটি সোরাটনিক রোবট নিয়ে সাফল্যের একেবারে শেষ পর্যায়ে । তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রটি ড্রাগ ডিসকভারীর জন্য হিউম্যান সেল নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে । টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেভেন ডি পার্ক বানিয়ে বিশ্বকে অবাক করে দেয়। জার্মানীর মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ড্রাইভার বিহীন গাড়ি বানিয়ে বিশ্ব অটো বিপ্লব ঘটিয়ে দেয়। তখন আমরা হয় গণরুমে বসে ছারপোকার কামড় খাই না হয় ছারপোকার কামড় খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে গাইড বই খুলে বেকারত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার লড়াই করি। কাজেই একচেটিয়া দোষ শিক্ষার্থীদের দেয়া যায়না। যতটা না দোষ পুরো সিস্টেমের।


ইতিহাসের একটি ঘটনা মনে পড়ে। আয়ুব খান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সেই সময়ের ভিসি ডঃ ওসমান গণির কাঁধে হাত রেখে ইয়ার দোস্তি আলাপ করে ভিসিকে বাগে আনতে চাইলে- ভিসি বলেছিলেন- আপনি কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে কথা বলুন। আপনি একটা দেশের প্রেসিডেন্ট হলেও ভুলে যাবেন না- আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। এটা তাঁর দম্ভ ছিলোনা। নিজের যোগ্যতার প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো। শত বছরে শত শত টকশো সেলিব্রেটি পেয়েছি কিন্তু সেই দিনের সেই ডঃ ওসমান গণির মতো শিরদাঁড়া সোজা করে রাখার মতো হিম্মতওয়ালা সত্যিকারের একজন বুদ্ধিজীবীও আর পাইনি। শুনে অবাক হবেন ৫৬ টি রিসার্চ ব্যুরো থাকার পরও - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বেসিক রিসার্চ নেই। আরো অবাক হবেন- ২০১৯-২০২০ সালে গবেষণা খাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বরাদ্দ নিয়েছে ৮১০ কোটি টাকা। আরো অবাক হবেন-DU Publications Bureau'র তথ্য অনুযায়ী গত দশ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাত্র দশটি বই। আরো তাজ্জব হবেন শুনে-ডেইলি স্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী- গত বই মেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান মিলে মোট ৪ হাজার ৯১৯টি বই প্রকাশ করলেও প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা থেকে একটা বইও প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু মারদাঙ্গা, রক্তপাত হয়েছে অহরহ। রক্তাক্ত হয়ে ছাত্ররা হাসপাতালে গেছে। আধা চিকিৎসা নিয়ে- হাসপাতাল ছাড়তে হয়েছে- এমন খবরও এসেছে। শিক্ষকরা আহত ছাত্রদের হাসপাতালে দেখতে গেছেন। সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। অথচ, এইসময় ছাত্র শিক্ষকদের থাকার কথা ছিলো- হয় ক্লাসরুমে না হয় লাইব্রেরিতে। ইউরোপ আমেরিকার ছাত্ররা যখন Class এ আছে, আমরা Clash এ আছি। যখন ওরা ল্যাবে আছে, আমরা নানা পদের লোভে আছি।

ফলে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং আমাদের ঘটেছে লজ্জাজনক অবনতি। CWUR.ORG Center for world university rankings এর তথ্য অনুযায়ী- ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং আমাদের অবস্থান ছিলো১৩০০ আর বর্তমানে ১৬৮৪। আমাদের মাননীয় ভিসি স্যার খুব সহজ ভাবেই বিষয়টির সমাধান করে দিয়ে বলেছেন- এটা যারা র‌্যাংকিং করে তাদেরই ব্যর্থতা। কারণ- ওরা সঠিক ডাটা সংগ্রহ করতে পারেনি। কিন্তু সঠিক ডাটা কেন সরবরাহ করা হলোনা- সেই কথাটি অবশ্য ভিসি স্যার বলেন নি। সুতরাং সবক্ষেত্রে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে আসুন বিজয়ী হই । একটি দেশের উচ্চতর শিক্ষাব্যবস্থা দেখলে সেই দেশ বুঝা যায়। আর দেশ বুঝা গেলে সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বুঝা যায়। কাজেই, আবুল মাকসুদ সাহেব যখন বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস মানে দেশেরই ইতিহাস। কথাটি এক দিয়ে খারাপ বলেন নি। তাই, অযথা আর সমোলোচনা না করে বরং সেলিব্রেশনই করি।
শুভ শতবর্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২০ রাত ১:৫৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×