বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ মুখে যতই কথার ফুলঝড়ি ছাড়–ক না কেন বাসÍবে আমরা অনেকেই গার্মেন্টসে যারা কর্মচারী হিসেবে কাজ করে তাদেরকে অশিক্ষিত ও অভদ্র ভেবে থাকি। এমনকি সামাজিক সাইটগুলোতেও দেখি সাকিব খানকে অবজ্ঞা করতে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয় তা হলো ”ওর ছবি সব গার্মেন্টস পার্টিদের।” যেহেতু আমি একটি ই, পি, জেড এলাকার খুব কাছে থাকি সেই সুবাদে আমার চারপাশে এর প্রখরতা যে কতটা ব্যাপক তা খুব ভাল করেই জানি। আমার এলাকায় এমনও মানুষ দেখেছি সে হয়তো খুবই ভদ্র এবং উচ্চ শিক্ষিত সে যদি আজ একটি শার্ট ক্রয় করে এবং তা পরিধান করার পর দেখে সাদৃশ একটি জামা একদিন তা পরিধান করে তার সামনে দিয়ে হেটে যায় তাহলে পরের দিন থেকে সে আর সেই জামা আর পরেনা পাছে তার সুনাম নষ্ট হয়ে যায়। এক রকমের প্রায় এক ঘরার মতই বাস করছে আদমজী ই, পি, জেড এর প্রায় ৩০,০০০ কর্মী। তবে তাদের মধ্যে এমন কিছু গুন বিদ্যমান যা আমাদের মত শিক্ষিত এই মানুষগুলোর মধ্যে বড়ই অভাব। এক ড্রাম দুধে যদি দুই ফোঁটা মদও থাকে তবে তা সম্পুর্ন দুধকে হারাম করতে যথেষ্ট। ঠিক আমাদের হাজারো ভালগুনের মধ্যে খারাপ ঐ গুটিকয়েক দোষই যথেষ্ট যার জন্য আমাদের শিক্ষিত বললে শিক্ষার অমর্যাদা হবে।
বিগত কয়েক মাস ধরেই আমার এলাকাটিতে আইন শৃংখলাজনিত কিছু অস্থিরতা বিরাজ করছে যা শুরু হয় রমজানের শুরুর দিকে এখনো যা বিদ্যমান। এখানে এখন প্রায় প্রতিটি মানুষই চরম আতংকে থাকে যে কখন ছিনতাইকারীদের হাতে পরবে। বিগত দুই মাসে খোদ নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১নং ওয়ার্ডেই অর্ধশতাধিকের বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে এবং এর সীমারেখা শুধু মাত্র ১নং ওয়ার্ডেই সীমাবদ্ধ। তবে এ নিয়ে এ পর্যন্ত এলাকার স্থানীয় কমিশনার এবং জনপ্রতিনিধিদের তেমন কোন উচ্চ-বাচ্চ দেখিনি। প্রশাসন সব সময়ই নাকে তেল দিয়ে ঘুমায় আমাদের দেশে। সুতরাং সাধারন মানুষ হিসেবে তাদের টনক নারাতে প্রয়োজন পরে মিডিয়াগুলোর অথবা মানবাধিকার সংস্থগুলোর সাহায্য। আর এই মিডিয়গুলো সবসময় পিছনে দৌড়ায় যে কোন আন্দোলন ও সংগ্রামের হোক না তা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক। কিন্তু আমাদের এই ভদ্র সমাজ এই দুই মাসেও পারলনা কোন রকমের প্রেস কনফারেন্স বা কোন রকমের আন্দোলন করতে। আর কারও অধিকার অন্য কেউ মামা বাড়ির আবদারের মত করে এমনি এমনি করেই ঘরে এনে দিয়ে যায় না। পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও লেখা নেই কেউ তাদের অধিকার এমনিতেই প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল। ভাল ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার সবারই আছে এবং তা দেয়ার দায়িত্ব্যয় নেয় সরকার। সরকারের পক্ষে বাড়ি বাড়ি বেডরুমে গিয়ে নিরাপত্তা দেয় যে সম্ভব নয় তা এর আগেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের জানিয়েছিলেন। সুতরাং এই অধিকার আদায় করতে হলে আমাদের বিশাল জনগনকেই প্রশাসনের ঘাড়ের উপর বসতে হবে যাতে তারা বাধ্য হয়। কিন্তু আমাদের এই এলাকার বিশাল জনসাধারন পারলনা কোন এমন একটা সংগ্রাম করতে যা তাদের ছিনতাইকারীদের হাত থেকে প্রশাসনকে বাধ্য করবে নিরাপত্তা দিতে।
গত ১৫-ই সেপ্টেম্বর সন্ধা ৭টা ৩০মিনিটের দিকে যখন আদমজী ই, পি, জেড বন্ধ হচ্ছিল সবাই যে যার মত বাড়ি ফিরছিল ঠিক সেই সময় নির্জন স্থানদিয়ে যাওয়ার সময় এক গার্মেন্টস কর্মীকে ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে এলমেলো ভাবে ছুড়িকাঘাত করতে থাকা হয়। কিন্তু কিছুদুর থেকে আশা তার সহকর্মীরা তা দেখে ফেলায় সে ভাগ্য জোরে খুন হওয়ার হাত থেকে রেহাই পান। পরে তাকে মূমুর্ষ অবস্থায় তার সহকর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখানেই শেষ নয়, সে রাতে একই এলাকায় আরো ২জন সাধারন মানুষ হতাহত হয় ২০মিনিটের ব্যবাধানে। এর আগেও ৪টি খুনের ঘটনা এলাকাতে ঘটেছিল এই ধরনের কারনেই। তা সত্বেও পরদিন স্থানীয় সুশীল সমাজ নীরব দর্শকই থেকেছে কেননা আন্দোলন চলাকলীন সময়ে পুলিশি লাঠির বারি খেতে হবে। কিন্তু গতকাল ১৬ তারিখে গার্মেন্টস কর্মীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। আর কোন সহকর্মীদের হেনস্থা বা মরতে দেয়া যায়না। প্রশাসনকে টনক নাড়াতে হলে এবার উপায় একটাই দাবী আদায়ে রাস্তায় নামতে হবে। ঠিক তারই প্রেক্ষিতে তারা গতকাল তাদের নিরাপত্তার দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করে। কিন্তু খুবই ব্যথিত হলাম যখন বিকাল বেলা দেখি কিছু বড় বড় সংবাদ সংস্থা এবারও সেই শ্রমীকদের বিপক্ষেই তাদের শিরোনাম করেছে উক্ত ঘটনাটির যদিও ভেতরের ঘটনা অনেকাংশেই সত্য কিন্তু তারা শুধু ফলোআপ করে গত কালের ঘটনা। জানতেও চায় যে এই এলাকায় গত দুই মাসের কি ধরনের আইন শৃংখলার অবনতি বিরাজ করছে। এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে মনে এরা আসলে কাদের হয়ে কাজ করে? কাদের খুশি করতে এদের এত লাফালাফি? গার্মেন্টস কর্মী বলে এরা কি মানুষ নয়? এদের কি কোন অধিকার নেই স¦ভাবিক ভাবে মৃত্যুবরন করার?
আমাদের এই সমাজের অবস্থা এখন এমন যে কেউ যদি ভাল কাজ না করে তবে সবাই খারাপ আর কেউ যদি সবার পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে দাড়াতে চায় তবে সবাই তার পা খামঁচে ধরে আবস্থা আরো খারাপ করে ফেলে। এভাবে চলতে থাকলে কখনই দেশের সামষ্টিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের সব পেশার সর্বোপরি সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষকে সম্মান দিতে হবে। যদি নিজে কাউকে সম্মান দিতে নাই জানি তবে কি করে আশা করবো যে আমি অন্যের কাছ থেকে তা পাব! কাল আমাদের এই ৩০,০০০ মেহনতি মানুষগুলো ঐ লোকটির আত্মীয় নন যিনি ছিনতায়ের কবলে পরেছিল। সুতরাং তারা যে এমনি এমনি আন্দোলনে এসেছিল তা নয়। তারা এসেছিল তাদের এক সহকর্মীদের নিরাপদ থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে। তারা এসেছিল মনুষত্ব্যের টানে। তাদের মনুষত্ব্যের এই শিক্ষা নিয়ে আমাদের আগামীকে আরো সুন্দর করতে হবে। তাদের কালকের ঘটনা আমাদের কাছে অনুকরনীয় হয়ে থাকতে হবে যে অধিকার আদায় করে নিতে হয় এবং তা শুধু নিজের ব্যক্তিগত অধিকার নয় বড়ং সমস্ত মানব জাতির অধিকার।
ধন্যবাদ সবাইকে
আশিকুর রহমান
০৯/১৭/২০১২
যা পারলনা আমাদের সুশীল সমাজ তাই করে দেখাল ঐ অশিক্ষিত গার্মেন্টস কর্মীরা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২২টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শিক্ষাঙ্গনে অপ্রীতিকর ঘটনার মুল দায় কুৎসিত দলীয় লেজুরভিত্তিক রাজনীতির
সোস্যাল মিডিয়ার এই যুগে সবাই কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবি সাজতে চায়। কিন্ত কেউ কোন দ্বায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে রাজী নয়। ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটা মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে । এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
কোমলমতিদের নিয়ে আমি কি বলেছিলাম?
আমি বলেছিলাম যে, এরা ভয়ংকর, এরা জাতিকে ধ্বংস করে দেবে।
ড: ইউনুসের সরকারকে, বিশেষ করে ড: ইউনুসকে এখন খুবই দরকার; উনাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, কোমলমতিদের থামাতে হবে; কিভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
পিটিয়ে মানুষ মারার জাস্টিফিকেশন!
এদেশে অনেক কিছুই সম্ভব।বর্তমান এলোমেলো সয়য়ে যা সম্ভব না বলে মনে করতাম তাও সম্ভব হতে দেখেছি।তবে মানুষকে কয়েক ঘন্টা ধরে পিটিয়ে মারাকে ইনিয়েবিনিয়ে জাস্টিফাই করা যায় এটা ভাবিনি।তাও মেরেছে কারা?
একদল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আসন্ন দুর্গাপূজা নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত গভীর ষরযন্ত্র লিপ্ত। মুর্তি ভাঙ্গা,আগুন বিস্ফোরণ ও বোমা হামলা হতে পারে তাই দেশবাসীর সর্তক থাকুন।
পিনাকী ভট্টাচার্য ও বললেন ভারত ভেঙ্গে ১০ টুকরা হওয়ার পথে। যাদের বিন্দুমাত্র ভূ-রাজনৈতিক জ্ঞান আছে তারা এই একই কথা বলবে৷ আমি সেটা পিনাকীর আগেই বলেছিলাম। যাদের দিল মে হিন্দুস্তান তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন
আহা তোফাজ্জল
মৃত্যু এখন এমনি সহজ
ভিডিও করতে করতে;
কথা বলতে বলতে
ভাত খেতে দিতে দিতে;
কনফিউজড করতে করতে
মেরে ফেলা যায়।
যার এই দুনিয়ায় কেউ অবশিষ্ট নাই
এমন একজনরে!
যে মানসিক ভারসাম্যহীন
এমন একজনরে!
যে ভবঘুরে দিক শূণ্য
এমন একজনরে!
যে... ...বাকিটুকু পড়ুন