প্রথম কিস্তির পর-
আমাদের মূল লক্ষ্য ছিলো পাহাড়ের উপর ‘বার-বি-কিউ’ করা। সেইমতে, আমাদের দুই বন্ধু অয়ন ও তন্ময়’কে পাঠালাম বান্দরবান বাজার থেকে মাংসসহ প্রয়োজনীয় রসদ আনার জন্যে। আমরা চলে গেলাম নীলাচল এর উদ্দেশ্যে।
বান্দরবান শহরের সন্নিকটে অবস্থিত উঁচু পাহাড়ের নাম ‘নীলাচল’। দূর থেকে দেখতে পাহাড়টি আকাশের নীলের সাথে মিশেছে মনে হওয়ায় এর স্থানীয় নামকরণ হয়েছে ‘নীলাচল’। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৬০০ ফুট। বান্দরবান শহর থেকে প্রায় ৬ কি: মি দূরে ‘টাইগার পাড়া’ এলাকায় এর অবস্থান। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে যে, একসময় বাঘের সচরাচর আনাগোনা ছিল বলেই এর নামকরণ ‘টাইগার পাড়া’। এ পাড়ার অধিকাংশই ‘তঞ্চঙ্গ্যা’ সম্প্রদায়ভুক্ত।
নীলাচল থেকে সমগ্র বান্দরবান শহরটি এক নজরে দেখা যায়। বিশেষত: রাতের আলোকিত শহরটি ছবির মত মনে হয়। অনেকেই এ এলাকাটিকে ‘বাংলার দার্জিলিং’ বলে থাকেন। নীলাচল থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য ও নির্মল বাতাস মনে এক স্বর্গীয় অনুভূতি আনে।
২০০৩ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মো: হাফিজুর রহমান ভুঁইয়া এই পাহাড়টিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যেগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১লা জানুয়ারী ২০০৬ তারিখে জেলা প্রশাসক জনাব শেখ আলাউদ্দিন বান্দরবান সদর উপজেলার ৩১৩ বান্দরবান মৌজার ১০০ একর জমির উপর “নীলাচল” পর্যটন কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর পর্যটকদের সুবিধার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০০৫-২০০৬ অর্থ বৎসরে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি রেষ্ট হাউজ নির্মাণ করেন।
অত:পর অদ্যাবধি, বাকিটুকু ইতিহাস..। কারণ, আমরা যখন পৌছুলাম তখনও জানিনি আসলে আমরা কোথায় এসেছি। শুধু বিস্ময়াভিভূত হয়ে দু’চোখ ভরে দেখেছি। আহ্। তর্কাতীতভাবেই বলছি, ‘অপরুপ সুন্দর’।
গ্রীষ্মের দুপুরে মাঠ। রোদে আসছে বয়সের জ্বালা
হে প্রান্তর, কে তোমাকে পড়ে?
ন্যাড়া গাছ। একটাও পাতা নেই। শিরা উপশিরার মতন
ডালপালা।
তার উপরে
এসে বসল সাদা একটা বক।
এতকাল ধরে, সে-ই প্রান্তরের অপার পাঠক।
[নিসর্গ # জয় গোস্বামী]
আজকে আমরাও এসেছি এ প্রান্তরের ‘অপার পাঠক’ হতে।
মাচান/মাচাঙ ঘরগুলোর সাথে বেশ কয়েকটি দোকানপাট উঠেছে। তঞ্চঙ্গ্যা দোকানি তরুনীরা বেশ সেজেগুজে পসরা সাজিয়ে বসেছে, নিজ বাগানে উৎপাদিত ফলমূল-শাকসবজি নিয়ে। হাঁক ডাকছে, “ভাই নিয়ে যান, এইগুলা খুব ভালো”। দেখলাম থরে থরে সাজানো জাম্বুরা, পেঁপে, কলার ছড়ি, কাচাকলা(কাচকলা), পাকাকলা, পেয়ারা, লেবু, কমলালেবু, ডাব, ভুট্টার ছড়ি, আমলকি, কচু ও আরো বিবিধ কিছু পাতা/সবজি (যাদের নাম জানি না)। আগ্ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করিনি, কারণ তরুণীরা আবার কি থেকে কি মনে করে! তবে, প্রথম প্রথম বেশ কৌতুহল জেগেছিলো- তরুণীদের এত্ত সাজগোছ দেখে!
যাক্, চা-বিস্কুটের দোকান দেখে ইন করলাম। সিলুটি হওয়ায় চায়ের সাথে একধরণের সখ্যতা আছে। তাছাড়া আমি একসময় চা বেচাকেনার সাথে জড়িত একটি ‘ব্রোকার হাউস’-এ ছিলাম। সে সময়েই আমার চা (চায়েরও অনেক প্রকরন, ওএফ, পিএফ, সিডি, ডাস্ট. ওবিপিএফ ইত্যাদি ইত্যাদি) এবং চা বাগান ঘুরার সাধ মিটে। শ্রীমঙ্গল, সিলেট, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ কোথাও বাদ দিই নি। শুধুমাত্র চট্টগ্রামের চা বাগান এবং পঞ্চগড়ে গড়ে ওঠা ‘অর্গানিক’ চা-বাগানগুলো ব্যতিত। সেইহেতু, দিনে অন্তত চার/পাঁচ কাপ কখনো কখনো আট/দশ কাপ চা গলাধ:করণের অভিজ্ঞতা আছে এবং হয়তোবা সেই ভাগ্যক্রমে, চায়ের স্বাদ আস্বাদনের এক ‘ঐশ্বরিক শক্তি’র অনুভব পাই। ব্রোকার হাউসের ভাষায় বলে, ‘টি-টেস্টার’। অর্থাৎ চা/চায়ের পরীক্ষক। ব্রোকার হাউসগুলোতে টি-টেস্টারের চাহিদা অনেক। বাংলাদেশে হাতে-গোণা মাত্র কয়েকজন। ৪/৫ জন হবে বৈকি। একসময় ভেবেছিলাম, টি-টেস্টার হবো কি না? সেই সুযোগও ছিলো। কিন্তু, হলো না। ওহ্, লতিয়ে পেচিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছি। মূল প্রসঙ্গে আসি। সেই সুন্দরী তঞ্চঙ্গ্যা তরুণীর দোকান থেকে ‘এক কাপ চা’ নিলাম। রংটা মোটেই সুবিধার নয়। তাও দিলাম ‘চুমুক’, ওহ্..!
নিজে তো পাখির কাছে যাইনি প্রথমে
পাখি
টেলিগ্রাফ তারে
দোল খেতে খেতে বলল: আসবে নাকি? এসোই না!
খুঁটি
ধরে ধরে অমনি আমি হাঁচড়পাঁচড় করে উঠে
দু’হাত বাড়ানো মাত্র,
সে বললো: ফুড়ুৎ!
ব্যস, পাখি ফসকে আমি দুহাতে তার ধরে ঝুলছি
হাত ছাড়তে ভয় করছে, যদি পুড়ে যাই!
মাথায় চক্কর মারছে পাখির বন্ধুরা- বলছে, ‘দারুণ, দারুণ!
গায়ে ইলেকট্রিক খেলছে, স্ফুলিঙ্গ বেরোচ্ছে, উফ,
চামড়া পুড়ছে, ধোঁয়া উঠছে
কী নিখুঁত, কী দারুণ, ইস, কী অদ্ভুত!’
[পাতার পোশাক -সাত # জয় গোস্বামী]
ঠিক যেন তাই, জিহ্বা পুড়ে ধোঁয়া উঠছে..!
নাহ্, এইটাকে ‘চা’ বললে নিতান্তই চায়ের অপমান হবে। এটি চা না, অন্য কিছু। মনের ক্রোধ চেপে রাখতে পারছিলাম না। একসময় বলেই ফেললাম, চা পাতা দিয়েছেন তো!
তরুণী আমার দিকে চেয়ে বললো, “হ্যাঁ দাদা, ভালো চা পাতা দিয়ে বানিয়েছি। চিনি লাগবে?”
প্রসঙ্গ না বাড়িয়ে বললাম, না ঠিক আছে! (চলবে..)
বন্ধুরা ক্রমাগত নেচে চলেছেন। টাইলস মোড়া সিড়ি, সু-প্রশস্ত উদ্যান, দ্বিতল বৈঠকী ঘর আর সিমেন্ট মোড়া রেলিঙ, সেই সাথে দিকে দিকে পরিপাটি, সাজানো-গোছানো বাগান..! ওয়াহ..! সেই চূড়া থেকে আবার নিচের দিকে নেমে গেছে ‘ইটসলিং’ করা আরেকটি পথ। কিছুদুর এগোলে দেখা যায়, আরো কিছু রেস্টহাউস নির্মিতব্য। আমরা তারও পরে, আরো অনেক এগিয়ে গেলাম। পাহাড়ী লতাপাতা গাছগাছালি কেবলি আমাদের আকৃষ্ট করছিলো। হু হু বাতাস বইছে। রোদ মেঘের কোলে খেলা করছে। কখনো হাসছে আবার কখনো ডুবসাঁতারে নিমেষেই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। একসময় উপরের দিকে তাকিয়ে শিউরে উঠি, বাপরে! উঠতে তো লাগবে একদিন..!
অনেক দূরে পুঞ্জিভূত মেঘের দল। দলা পাকিয়ে আছে কোন এক পাহাড়ের কোনে। সম্ভবত বান্দরবানের পূর্ব দিকে কোথাও ‘এক পশলা বৃষ্টি’ হয়েছে। পরক্ষণেই রঙধনু উঠল- দুই প্রান্তে, বাকিয়ে। কি দারুণ। অপরুপ সে দৃশ্য। শীতল বৃষ্টিবাতাস বইতে শুরু করল। বুঝে নিলাম, বৃষ্টি দেবী। যে যার মতো শুরু করলাম দৌড়..। পথিমধ্যেই মায়াবী বৃষ্টি দেবীর সাক্ষাৎ..
............ এখন আমি
মেঘ নই আর, সবাই এখন
বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়।”
বলেই হঠাৎ এক পশলায়-
চুল থেকে নখ- আমায় পুরো
ভিজিয়ে দিয়ে-
অন্য অন্য
বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে
মিলিয়ে গেল খরস্রোতায়
মিলিয়ে গেল দূরে কোথায়
দূরে দূরে....
...........................
আমি কেবল বসে রইলাম
ভিজে একশা কাপড়জামায়
গাছের তলায়
বসে রইলাম
বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্য..
[মেঘবালিকার জন্য রুপকথা # জয় গোস্বামী]
ততক্ষণে অন্যান্য দর্শনার্থীরাও জড়ো হয়েছেন সেই দ্বিতল বৈঠকী ঘরে। ঘরটি সমুদ্রে দিকভ্রান্ত হয়ে হারিয়ে যাওয়া যাত্রীদের দিক নির্দেশক ‘বাতিঘর’ এর মতো। এখান থেকে পুরো বান্দরবান শহরটি দেখা যায়, ছোট্ট আকারে। দর্শনার্থীদের আবার অনেকেই কপোত-কপোতীর মতো জোড়ায় জোড়ায়। দেখতে ভালোই লাগে। শুধু আফসোস, নিজের কিছুই হলো না..!
প্রায় আধা ঘন্টার মতো বৃষ্টি হলো। বৃষ্টি শেষে আমাদের দুই বন্ধুও চলে এলো মাংস নিয়ে। মোট ষোল পিস, খাজ খাজ করে কাটা। দশটি শিক, আটকানোর জন্যে। মাখানোর জন্যে ষ্টীলের বোল। সঙ্গে তেল, মসলা, লবন, জ্বালানি কাঠ, আরো বিবিধ। ওখানকার কেয়ারটেকার এর সাথে আগেই কথা হয়েছিলো, সেই মতো তাকে সবকিছুই দিলাম। তিনি মাংস ধুয়ে লবন-তেলসহ পুরো মসলা মিশিয়ে রেখে দিলেন। বললেন, ত্রিশ মিনিট রাখতে হবে।
আবার ফিরে এলাম, দ্বিতল বৈঠকী ঘরের সামনে। প্রশস্ত উদ্যান। খোলা আকাশের নিচে, সেখানে সুন্দর গানের আয়োজন চলছে। গায়ক স্থানীয়। চোখে দেখতে পান না। কিন্তু সুন্দর গলার কন্ঠ। গান গেয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন। সাথে ছোট্ট একটি ঢোল। সেই ঢোলের তালে তালে দেরাজ কন্ঠে সুর তোলে-
“এমন সাধ্য কার আছে ভাই এই ঘড়ি তৈয়ার করে
যে ঘড়ি তৈয়ার করে সে লুকায় ঘড়ির ভিতরে”
[দেহঘড়ি # আবদুর রহমান বয়াতি]
আধ্যাত্মিক-মরমী গান আগেও শুনেছি। কিন্তু এমন মুহুর্তে এই গান শুনতে পাওয়া সত্যি এক ভাগ্যের ব্যপার। তাছাড়া বয়াতী সবেমাত্র কিছুদিন আগে ‘গত’ হয়েছেন। পত্রিকায় দেখলাম তার ভারি ভারি স্তুতি (বাস্তবে দেখা হয়নি)। কখনো লাইভ পারফরম্যান্সও শুনিনি, বয়াতীর। শুধু, যান্ত্রিকি সিডিতে টুক-টাক শুনেছি। তবে, এখন কেনো যেন মনে হচ্ছে- সাক্ষাৎ বয়াতীর কন্ঠ..।
কিছুক্ষণ পরই বন্ধুরা চেঁচিয়ে উঠল। মেঘ আসছে, মেঘ। দেখি, ঝাঁকে ঝাঁকে মেঘ ভেসে আসছে। বিশ্বাসই হচ্ছিলো না। নীলাচল উঠার সময় স্তরে স্তরে অর্থাৎ কয়েক স্তরে মেঘ দেখেছিলাম। কিন্তু এতো কাছ থেকে মেঘ ছোঁব, ভাবতেই পারিনি। হাত বাড়ালাম, মেঘ ছুয়ে গেলো- দেহমন। আহ্। প্রশান্তি। সবাই ছোটাছুটি করছে। মেঘ ছোয়ার উল্লাসে ফেটে পড়ছে। একেকজনের বহি:প্রকাশ ছিলো একেকরকম। এতোক্ষণ ‘বৃষ্টিস্নাত’ হয়েছিলাম, এখন ‘মেঘস্নাত’। জীবনে গল্প করার মতো, উল্লেখ করার মতো ঘটনা বটে।
আমার কাছে যদি কোন ‘টাইমমেশিন’ থাকতো কিংবা কোন ‘ঐশ্বরিক’ ক্ষমতা, তাহলে নির্দ্বিধায় আমি এই মুহুর্তটুকু ধরে রাখতাম- আমার জন্যে, আগামীর জন্যে, আপনাদের জন্যে। আর সবাইকে দেখাতাম- মেঘ ছোঁয়ার সেই সুখানূভূতি..
আমি বৃষ্টিকে বলি
এই দুই তিন লেখো তো মেঘের গায়ে
আগুনের মেঘে ফেটে গেলে ফুলগুলি
বলি, ছন্দকে রাখো মৃত্যুর পায়ে!
আমি বৃষ্টিকে বিশ্বাস ক’রে বলি
আঁকো তো সরল লাবণ্যরেখা আঁকো!
--------------------
আমি বৃষ্টির কাছে গিয়ে তাকে বলি
যাও, বন্ধুকে ডাকো!
কেননা তোমার বন্ধুর চোখে ছিল
লাবণ্য, আর করতলে আমলকী-
বৃষ্টি, তোমার ঘুমোনোর পথে পথে
নতুন নতুন ভাইবোন, সখাসখী
কাকলি তুলেছে, কলরব ক’রে ক’রে
মিলে গেছে আর মিশে গেছে দেশগাঁয়ে..
মনে নেই বুঝি, আমি সে-গাঁয়ের সাঁকো?
দলবেঁধে আজ পার হয়ে যেতে যেতে
বৃষ্টি, তোমার বন্ধুকে মনে রাখো!
[আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে # জয় গোস্বামী]
ক্রমাগত অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। চারিদিকে কেমন যেনো একটা নিস্তব্ধতা। ভুতুড়ে ভুতুড়ে ভাব। অথচ কিছুক্ষণ আগেও এখানে লোক-লোকারণ্যে ভরপুর ছিলো। কেয়ারটেকার বললেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সন্ধ্যা হলে কোন দর্শনার্থীকে এখানে থাকতে দেয়া হয় না। কারণ কিছুদিন আগে ছাত্র নামধারী কিছু রাজনৈতিক কর্মী এখানে ‘গন্ডগোল’ পাকিয়ে গেছেন। সেই থেকে শুরু। যাক্, আমরা কোনোমতে কেয়ারটেকারকে ম্যানেজ করিয়েছিলাম বলে চান্স পাচ্ছি।
মসলা মিশ্রিত মাংস নিয়ে আমরা নেমে পড়লাম দ্বিতল বৈঠকী ঘরের অপর প্রান্তে। যেখানে নতুন করে রেস্টহাউজ নির্মিত হচ্ছে, তার পাশে ছোট্ট একটি সমতল জায়গা পেলাম। ওখানে আবার সুন্দর করে বসার জায়গা বানানো, পাকা। একটি নামফলকও রয়েছে। তারপাশেই আমরা শুরু করলাম- আমাদের সেই কাঙ্খিত মিশন। ‘বার-বি-কিউ মিশন’।
প্রথমে, বেশ কিছু ইট জড়ো করে চুলার মতো তৈরী করলাম। সেখানে জ্বালানি কাঠ দিয়ে আগুন ধরালাম। অত:পর মাংস খন্ডগুলো একে একে শিক দিয়ে গেঁথে আড়াআড়ি দিলাম- চুলোর উপর। কিন্তু কি আর বলবো! পাহাড়ের উপর আগুন ধরানো যে বিশাল দায়..!!! মনে মনে ভাবছি, স্বর্ণমন্দিরের মতো এখান থেকেও কি খালি হাতে ফিরতে হবে..? তা, আমি কখনোই চাই না।
প্রাণান্ত চেষ্টা- ফু দিচ্ছি, বাতাস করছি। এই জ্বলে তো এই নেভে। কিন্তু কোনোভাবেই ‘অগ্নিবাবু’র দেখা পাচ্ছিলাম না। শেষতক্, পুরো কেরোসিন ঢেলে দিলাম- দু’তিন টুকরো কাঠের উপর। তারপর জ্বালালাম। তাও- ঐ একই কান্ড! শেষে, দুই দিক থেকে আমরা সবাই মিলে বাতাস প্রবাহ শুরু করলাম। কেয়ারটেকার বাবু বড়সড় কয়েকটা কলাপাতা নিয়ে আসলেন। এক প্রান্তে কলাপাতা, অপর প্রান্তে স্টীলের বোল দিয়ে বাতাস সঞ্চালন চললো..। অবশেষে আরাধ্য অগ্নিবাবুর দেখা পেলাম। ওম্ শান্তি।
এরই মধ্যে কোল্ড ড্রিংকস, চিপসসহ বেশকিছু খাবার চলে এলো। ‘বার-বি-কিউ’ এর সাথে চললো সমান তালে। কেউ টু শব্দ করলো না। শুধু গোপ গোপ করে...
এবার সময় হয়েছে, আজকের মতো হোটেলে ফেরার। কখনো কখনো যান্ত্রিক জীবনের ফাঁকে এমন ট্যুর আপনার দেহমন চনমনে করে তুলবে। নির্ঘাত। দিনশেষে প্রাপ্তির খাতায় অনেক পাওয়া। তাই, কখনোই মনে হয়নি, পুনরায় ফিরে যায়- যান্ত্রিক শহরে।
ক্রমাগত চলবে.......
পূর্বের লেখা দেখার জন্য এইখানে ক্লিক করুন- Click This Link