somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের স্রোতে, রঙ লাগা ক্রোধে

০৩ রা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

বেড়ে ওঠা স্বপ্ন গুলোকে পদদলিত করে রেখে গেছে কিছু মানুষ । আর আমাদের জন্য বরাদ্দ কিছু মুখোশ, একটা সেমিকোলনের পাশে ঢেকে রাখা প্রথম বন্ধনী নির্দেশ করে আমরা হাসি । কোনো মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে না, আর মানুষের বুকে কোনো ভালোবাসাও রচিত হয় না। মুখের কুতসিত দাগগুলো বেশুমার ঢেকে দিচ্ছে ... মুখোশ । কষ্টের সাথে মুখোশ বিনামূল্যে, মানসিক যুদ্ধে জোর করে যোদ্ধা সাজা ... লালসার সাথে আড়াআড়ি।

.... আমরা জোর করেও হাসি, পর করেও হাসি ।

২.

বয়সটা ছিলো নাকের নিচে সূক্ষ্ন গোঁফের সহাবস্থানের । লোকের চোখে বেয়াড়া দেখানো বয়স। ছুঁয়ে দিলে কেঁপে উঠতো পুরো শরীর । দেবতার সংষ্কার আর শয়তানের সরলতা ... পেরিয়ে আসা অনেক রাতেই, চোখের সাথে নুন-তরলের কোনো সন্ধি হতো না । বয়সটা ছিলো আধিপত্য বিস্তারের ... কাউকে ছাড় দিতো না । ছিলো ভালোবাসা নামক প্রাচীন অনুভূতির নিয়ণ্ত্রনহীন রেনেসা।

সাদা শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্টে ল্যাপ্টানো ক্লাস টেন । চিরকুটে বন্দী কত স্বপ্নের মৃত্যু। সামনের বেঞ্চের ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ বইগুলো ছিলো শুধুই অসার জ্ঞানের । কিন্তু পেছনের বেঞ্চের বইগুলোর ফাঁকে ফাঁকে কিছু, স্বপ্ন, কান্না, দীর্ঘশ্বাস, খুনসুটি আর প্রতিজ্ঞা চিরদিনের জন্য অভিমানে আঁটকে গিয়েছে।

..... অনেকদিন হয়ে গিয়েছে .. তারপর সত্যি সত্যি আর কখনো, ভালোবাসা তার পড়শীবাড়ি বেড়াতে আসেনি । প্রকৃতি আমাকে ভাবতে শেখায় নি । ভাবিয়েছে আর ভাবতে শিখিয়েছে .... সাদা কাগজে কালিজ্বলা চিরকুট গুলো।

৩.

সব কিছুর যেমন একটা শুরু থাকে, ধরে নিই সেটার ও একটা শুরু ছিলো। যেহেতু পরম স্থিতি বলে কিছু নিই, হাইপোথিসিস ছাড়াই বলে দেয়া যায়, সেটা এগুচছিলোও বটে…গতিসূত্র মেনে .. পরম কিমবা কোনো স্থির দর্শকের চোখের আপেক্ষিক গতিতেই । একটা ব্যপার বুঝতে ভুল হয়েছিলো, হয়তো ভুলেও গিয়েছিলো .. সবকিছুর মতো সেটার ও একটা শেষ আছে । থাকা তো উচিত , তাই না ? হয়েছেও তাই ।

ছেড়ে যাবার প্রাক্কালে আকাশ থেকে একটা তারা খসে পড়েছিলো। কোনো ইচ্ছেই করতে পারিনি। ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিলাম আকাশের দিকে । ওটা আমার মতোই একা । আর আমি তার পার্থিব শত্রু।

৪.

ঘুম ঘুম চোখ মেলে নিতান্ত অনিচ্ছাতে টুথব্রাশে পেস্ট লাগানো হচ্ছে । কাঁধের উপর অত্যাচারে জর্জরিত তোয়ালে টাকে ফেলে হেটে যাচ্ছে বেসিনের দিকে - একজোড়া পা । কলটা ছেড়ে মনে মনে প্রচন্ড ঘৃণায় শুভ সকাল বলে নিজেকেই। চোখে মুখে প্রচুর পানির ঝাপটা লাগানোর পর উজ্জীবিত যুবক আয়নার দিকে চেয়ে থাকে ....

মানুষটা কি একটু খানি বদলালো ??

৫.
দেহ গুলো পচে যাচ্ছে ... উল্লাসে মেতে ওঠা দেহ থেকে চামড়া খসে খসে পড়ছে। কিছু দিন পর আত্না খসে খসে পড়বে । আমরা তখনো উল্লাস করে যাবো আমাদের কবরের উপর । এপিটাফ গুলো চুরি হয়ে যাবে । সাহসের অভাবে বোবা মুখ .. ট্রানজিট করে দেবে কালোবাজারিদের । এখানে সুলভ মূ্ল্যে এপিটাফ বিক্রি করা হয়। আত্না ব্যবসায়ীদের কাছে, আত্নবিশ্বাস জিম্মি।

গোপন ক্যামেরা ব্যবসা করছে আমার দেহ নিয়ে । কুতসিত মন দিয়ে আঁচড়ে, কামড়ে ছিড়ে ফেলছে ... আমার দিকে তাকিয়ে তারা পশু হচ্ছে মাদকতায়....মানুষের জন্য সেটাই নাকি স্বাভাবিক। যারা মানুষকে বিকিকিনি করছে, তারাই মানুষের স্ট্যান্ডার্ড ঠিক করে দিচ্ছে । ... ওরা বলে

৩৬-২৪-৩৬ আজ মানুষের স্ট্যান্ডার্ড ... অসভ্যতা কোনো পাপ না, পশুত্ব ধারণ করাটা পাপ। ..... আর আমাদের ইচ্ছে মেশানো অভিশাপগুলো লোয়ার ক্লাসড সেন্টিমেন্ট।

৬.

শহরটার উপর আমরা প্রচুর অবিচার করে ফেলেছি। দেশের চৌষট্টি জেলা থেকে চৌষট্টি পদের মানুষ এসে ঢাকা কে কলোনি বানিয়ে ফেলেছি আমরা। বলতে গেলে ঐতিহ্যবাহী ঢাকার আদি অধিবাসীদের আমরা একঘরে ফেলে দিয়েছি। আমাদের চুড়ান্ত কলোনিয়াল রুপের প্রকাশ ঘটেছে এই শহরটাতে এসে। থাকছি, ফিরছি, ঘুরছি, চলছি। কিন্তু শহরটার উপর আমাদের এতোটা মায়া নেই। নিজে না শুধরিয়ে দোষ চাপাচ্ছি বোবা শহটার ঘাড়ে। নিজের ছোট্ট গ্রামখানি বা মফস্বল কে সাজিয়ে রেখেছি আদরে । শহরটাকে পাঠিয়ে দিয়েছি বাইজি ঘরে। পদ্মা মেঘনা যমুনা কর্ণফুলী আাঁড়িয়াল খা মধুমতির জন্য আমাদের এতোটা টান .....আর বুড়িগঙ্গা আমাদের ব্যবসায়িক পণ্য ... অতএব ফ্যালো আমাদের যত বর্জ্য। আমরা শহরটাকে টাকায় ভাসিয়ে দিয়েছি। আদর দেই নি একফোটা। যেখানে ইচ্ছে যতভাবে সম্ভব শহরটাকে ধর্ষিত রেখে দিয়েছি আমরা ভালোমানুষের দল। লো ভোল্টেজে নিয়ন বাতিগুলো মেকাপ মেখে প্রতিবাদ করে। শহরের লেক গুলো দূষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। আমরা ওগুলো দেখি না। ভালোবাসা ঠাই নিয়েছে কিছু গুল্ম জাতীয় গাছের ছায়ায়। সেখানে দুপুর আর সন্ধ্যা এক রকম। ব্যানার না হলে কোনো আন্দোলন হয় কি ??

প্রতিদিন এতো এতো আবর্জনা বয়ে নিয়ে চলছে প্রিয় বুড়িগঙ্গা। ও এতটা কালো না হলে বুঝতেই পারতাম না আমাদের ভেতরে অ্যাতোটা অন্ধকার আর দূর্গন্ধের আবর্জনা আছে। এই লোকদেখানো ভালোমানুষির ভিড়ে, বুড়িগঙ্গা সমস্ত কালো ধারণ করে, একা প্রতিবাদ করে চলেছে ..

৭.

ভেবে চিন্তে কিছু করতে গেলেই মাথায় মাইগ্রেন চেপে বসে ... নিজের কিছু বলতে না চাওয়া বিচ্যুতির নাম কৈফিয়ত .. মুখ বুজে দেখে যাওয়ার নাম সরলতা .. রক্তলাল চোখে জমে থাকা তরলের নাম আকুতি .. সেভেন এ.এম. এ কর্কশ এলার্ম এর নাম ভোর ... সব কিছু কেড়ে নেয়ার নাম প্রতিদান ..

.... তোর আর আমার বিচ্ছেদ মানে ভালোবাসা ।
……. তোকেই ভালোবাসি...এর নাম প্রতিশোধ ।

৮.

কাঁধে একটা রাইফেল নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাও তোমরা। কখনো সীমান্তে, কখনো সভ্যতার পাহারায়। তোমাদের রাতগুলো উতসর্গ আমাদের সুনিদ্রায়। গুরুত্বপূর্ন রাঘব বোয়ালদের নিরাপত্তায়।

ঘরে অনেকদিন না দেখা প্রেয়সীর মুখ, আর আশায় বেড়ে চলা সন্তানের মুখ চেয়ে থাকা ... সব বাদ দিয়ে কর্তব্যের টান

অপেক্ষার প্রহরগুলো কেমন তা তোমাদের চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না .. পিঠে বয়ে বেড়ানো গোটা কতক বুলেট আর বুকের সামনের দিকটায় জমানো ভালোবাসা।

৯.

সময়টা খুব দ্রুত পার হয়ে যাচ্ছে । টেকনোলজি যেমন দ্রুত বদলাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি দ্রুত বদলাচ্ছে তোমার আমার আচরণ। কিছু অসভ্য ব্যক্তিগত আচরণের প্রভাব দিয়ে গ্রাস করে ফেলছি, প্রজন্মকে। ইজারা দিয়ে ব্যবসা করছি .. শব্দের আর কাজের। আজ দেয়া কথা গুলোর সাথে একবছর পরের কথা গুলোর কোনো মিল থাকছে না। হরিণীরা রুপান্তরিত হচ্ছে হায়েনায়। সিংহহৃদয় গুলোকে চকচকে করে দিচ্ছে শৃগালবৃত্তি । বোকারা পুড়ে মরছে শোকজ্বরে।

- তোমার সাথে আমার কোনো চুক্তি নেই যে আমি বদলে যাব না। আমার বদলানো সময়টা তোমার জন্য পীড়াদায়ক যন্ত্রণা হয়ে আসুক । শুভকামনা।

১০.

প্রতিক্ষীত বৃষ্টিরা সব সময় নামে না। মেঘ হয়ে ঘুড়ে বেড়াতে চায় তারা। মর্জি হলে ভিজিয়ে দিয়ে যায়। যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষা গুলো গুরুত্বপূর্ন করে তোলে তোমাকে।

- যে যাই ভাবুক, আদিখ্যেতা বলুক, ছেলেমানুষী বলুক, ঢং বলুক, উচ্ছন্নে যাওয়া গোয়ার বলুক, আর মন থেকে হিংসেয় জ্বলুক।তুমি জেনে রেখো, আমি তোমার চুলের গন্ধ, বুকে লেপ্টে থাকা আদর ..... তোমার কোলে মাথা রাখা বিকেল আর রাতের কাঙাল।

২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×