ইউনিজয়, মোস্তফা জব্বারের হুমকি ও আমাদের প্রযুক্তি ফোরামের পক্ষ থেকে নিন্দা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
আমি মনে করি, আমাদের প্রযুক্তি সাইটের সাথে জনাব মোস্তফা জব্বার যে অশোভন আচরন করেছেন তা সকলের দৃষ্টি গোচর হওয়া প্রয়োজন। তাই এই সম্পর্কিত পোস্টটি এখানে দিয়েছি
গত ১৯ অক্টোবর, ২০০৭ দৈনিক প্রথম আলো-তে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রথম অনলাইন ফোরাম আমাদের প্রযুক্তি সংক্রান্ত রিপোর্ট ‘আমাদের ভাষায় আমাদের প্রযুক্তি’ প্রকাশ হবার পর আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার জনাব মোস্তফা জব্বার আমাদের প্রযুক্তি টিমের সদস্যদের ফোন করে জানান, আমাদের সাইটে ওয়েবভিত্তিক ইউনিজয় কি-বোর্ডটি আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার বানিজ্যিক সফটওয়্যার বিজয়ের লে-আউটের হুবুহু নকল এবং কি-বোর্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য আহবান জানান এবং নাহলে উকিল নোটিশ পাঠানোর কথা বলেন। এর উত্তরে আমরা তাকে জানিয়েছিলাম, ২০০২ সাল থেকেই এই উন্মুক্ত ওয়েব ভিত্তিক কি-বোর্ডটি বিনামূল্যে বিতরন করছে ওপেন সোর্স প্রতিষ্ঠান একুশে এবং এরপরেও যদি তা বিজয়ের নকল হয় তবে তা আমরা দেখবো এবং এ দাবি সত্য হলে তা সরিয়ে নেয়া হবে। তবে পুজার ছূটিতে সাইটের ডেভোলাপার টিমের সদস্যগণ ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় এক সপ্তাহ সময় লাগবে এ কাজে। তিনি এ ব্যাপারে সম্মত হন। কিন্তু এর পরদিনই (২০ অক্টোবর, ২০০৭) আমরা দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করলাম, জনাব মোস্তফা জব্বার ফোরামে সদস্য হিসেবে নিবন্ধন করে একটি পোস্টের মাধ্যমে দাবি জানান, আমরা নাকি বিজয় সফটওয়্যারের পাইরেসির সাথে যুক্ত এবং আমরা আমাদের প্রযুক্তি সাইট বন্ধ না করলে বিষয়টি র্যাবকে জানাবেন।
ছবিঃ(পোস্টের সাথে সম্ভলিত) মোস্তফা জব্বারের হুমকি সম্বলিত পোস্ট যা এখন মডারেশন জোন থেকে সরিয়ে পুনরায় অভ্যর্থনা বিভাগে আনা হয়েছে।
ইতোমধ্যে দেশ এবং দেশের বাইরে অনেক বাংলা ভাষাভাষী মানুষ এই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এই কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হবার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন। মোস্তফা জব্বারের মতো একজন প্রবীণ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে আমাদের প্রযুক্তি-র মতো একটি কর্মকান্ডের প্রতি এ ধরনের অসহনশীল আচরণ বা হুমকি আমাদের ব্যাতীত ও হতাশ করেছে। তাছাড়া তিনি কি-বোর্ডটি সরিয়ে নেয়ার দাবি না জানিয়ে সরাসরি সাইট বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন যা আপত্তিকর এবং অশোভন। তার মতো একজন প্রবীন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কোনভাবেই কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, মাসিক টেকনোলজি টুডে অক্টোবর ২০০৭ সংখ্যায় একটি কলামে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও তিনি অভিযোগ এনেছেন, তারা ভোটার তালিকার কাজে বিজয় কি-বোর্ড লে-আউটের নকল কি-বোর্ড ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে তিনি কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি, কিন্তু আমাদের তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ইতিহাসে এর আগে এ ধরনের অশোভন হুমকি আগে কোথাও দেয়া হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। যেখানেই বাংলা কম্পিউটিং বা কি-বোর্ড সংক্রান্ত কাজ হয়েছে সেখানেই জনাব মোস্তফা জব্বার অভিযোগ জানান তা বিজয়ের নকল এবং সেই কাজের ডেভোলপারকে হয়রানি করার চেষ্টা করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি বিশেষজ্ঞ কলামের নামে বিভিন্ন আইটি পত্রিকায় রাজনৈতিক কলাম লেখেন। এসব কলামে অনেক সময় দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতিও তার অশোভন উক্তি থেকে রক্ষা পান না। অর্থ্যাৎ এক বিজয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছেন যা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে যথাযথ কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মোস্তফা জব্বার আমাদের বিরুদ্ধে পাইরেসির অভিযোগ করেছেন যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারন, আমরা কোন লাইসেন্সবিহীন বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করিনি, ব্যবহার করেছি একুশের ইউনিজয় ওপেনওয়্যার। যদি একুশের ইউনিজয়ে বিজয়ের লে-আউট ব্যবহার করা হয় তবে এর সকল দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ বিতরনকারী হিসেবে একুশে বহন করবে, ব্যবহারকারীরা নয়। ইউনিজয়/ইউনিবিজয় এ বিজয়ের কপিরাইট প্রযোজ্য নয়। আমরা মনে করি আমাদের সাইটে বিজয় বাংলা সফটওয়্যার, প্রিন্টেড কী-বোর্ড, বিজয় লে-আউট কোথাও কপি করা হয়নি। কারন, একুশে বাংলার অফিসিয়াল সাইটে স্পষ্ট লেখা রয়েছে-এই স্ক্রিপ্টের সাথে মোস্তফা জব্বার বা আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এছাড়া সুপরিচিত বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার অভ্রতেও ইউনিবিজয় নামে একটি কি-বোর্ড রয়েছে। তাছাড়া আমরা একুশের ইউনিজয় লে-আউটের সাথে বিজয়ের বেশ কিছু পার্থক্যও দেখেছি। যেমনঃ
১। একাধিক কি ভিন্ন। যেমন x চাপলে আসে ো।
২। এ-কার, ই-কার, ও-কার এগুলো ভিন্ন। ইউনিজয়ে অক্ষরের পরে চাপতে হয়। এতে করে প্রায় সমগ্র লে-আউট টাই বদলে যায়।
এসব পার্থ্যকের কারনে আমাদের প্রযুক্তি টিম মনে করে না ইউনিজয় কি-বোর্ডটি কোনভাবেই অবৈধ। তাই আমরা এ ব্যাপারে একুশের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানাচ্ছি।
ছবিঃ(পোস্টের সাথে যুক্ত ২য়) ইউনিজয়ের সাথে মোস্তফা জব্বারের কোন সম্পৃক্ততা নেই (সূত্রঃ একুশে)
জনাব মোস্তফা জব্বার প্যাটেন্ট ভঙ্গের কথা বলেছেন। তবে এ ব্যাপারে আমরা কিছু কথা বলতে চাই-
১. ্+া=আ, ক+্+ক=ক্ক । বিজয়ে যুক্তাক্ষর লেখার নিয়ম ইউনিকোডে র সাথে হুবহু মিলে যায়। ইউনিকোড একটা চলমান স্ট্যান্ডার্ড, এর কোন খন্ডাংশের পেটেন্ট বাংলাদেশের পেটেন্ট অফিস যদি না জেনে তাকে দিয়েও দেয়, সেটার বৈধতা নিয়ে অবশ্যই যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন।
২. বিজয় লে-আউটঃ g+f = আ, j+g+j = ক্ক। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের জাতীয় কীবোর্ড লেআউটের বিরুদ্ধেই পেটেন্ট না মানার অভিযোগ আসে। এখন পর্যন্ত এই কি-বোর্ডটিও বৈধ হিসেবে বিবেচিত।
৩. যেহেতু, মোস্তফা জব্বার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে তার কি-বোর্ড লে-আউট ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন(অভিযোগের তালিকায় নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানও আছে) সেহেতু বিষয়টি কিছুটা হলেও বিতর্কিত। এ বিতর্কের অবসান না করে প্যাটেন্ট কেন দেয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।
৪. আমরা মনে করি, কি-বোর্ডের লে-আউট প্যাটেন্ট করার প্রবণতা দেশের সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ এবং ওপেন সোর্স ও বাংলা কম্পিউটিং –এর অগ্রযাত্রাকে স্থিমিত করে দেবে। এ ধরনের প্যাটেন্ট করায় আমাদের মতো দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী কয়েকজন মুনাফাখোর ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে। সারা বিশ্ব যখন সফটওয়্যার প্যাটেন্টের বিরুদ্ধে সোচ্চার তখন আমাদের দেশে একটি কি-বোর্ড লে-আউটকে এভাবে প্যাটেন্ট করে এমন একটি অসুস্থ প্রবণতাকে উৎসাহিত করার বিষয়টি দুঃখজনক।
তিনি জানিয়েছেন, আমরাই নাকি তার চোখে এই লে-আউটের প্রথম ব্যবহারকারী যা সম্পূর্ণ ভূল। এখন পর্যন্ত স্যামহোয়ারইনব্লগ, সচলায়তন, প্রজন্ম ফোরাম সহ বাংলা ভাষার বেশ কিছু জনপ্রিয় ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা ওয়েব সাইটে বেশ কিছুদিন ধরেই এই লে-আউট ব্যবহার হয়ে আসছে। একজন প্রবীণ আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার তা দৃষ্টিগোচর হবার কথা। তাছাড়া একুশে নামক ওপেন সোর্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও তার না জানার কথা নয়। এরপরেও তিনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে সে সম্পর্কে আমরা তাকে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিনীত অনুরোধ করবো।
আজ পর্যন্ত একুশে সাইটে ইউনিজয়ের বিনামূল্যে বিতরন সম্পর্কে জনাব মোস্তফা জব্বার কোন ধরনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেননি বা প্যাটেন্ট ভঙ্গ হয়েছে এ অভিযোগে কোন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ আনা হয়নি ততোক্ষণ পর্যন্ত ইউনিজয়ের বিতরণ ও ব্যবহার বৈধ। তাই ইউনিজয় কি-বোর্ডের ব্যবহারকারী হিসেবে আমরা মনে করি, এতোদিন বৈধভাবেই আমরা ইউনিজয় লে-আউটটি ব্যবহার করে আসছি এবং ওপেন সোর্স হিসেবে এটি ব্যবহারে আমাদের নৈতিক অধিকার আছে। তবে আমাদের প্রযুক্তি সবসময়ই দেশের প্রচলিত কপিরাইট এবং মেধাস্বত্ত্ব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ইউনিজয় কি-বোর্ড সম্পর্কে কোন চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া আমরা এই লে-আউটটি আমাদের প্রযুক্তি সাইট থেকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করছি। জনাব মোস্তফা জব্বার যদি একুশে –এর বিরুদ্ধে কোন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না করেন বা তিনি যদি প্রমান করতে না পারেন যে /৭ইউনিজয় কি-বোর্ডের মাধ্যমে বিজয় কি-বোর্ডের লে-আউট প্যাটেন্ট ভঙ্গ হয়েছে (বিষয়টি কিভাবে নিস্পত্তি হবে তা নির্ভর করছে একুশে এবং আনন্দ মাল্টিমিডিয়ার উপর) তবে আগামী ১ জানুয়ারি, ২০০৮ তারিখ থেকে এই কি-বোর্ডটি পুনরায় এই সাইটে ব্যবহার করা হবে।
আমরা আশা করি, আমাদের প্রযুক্তি’র মতো একটি উদ্যোগের সাথে একজন প্রবীণ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ হিসেবে জনাব মোস্তফা জব্বার এর সাথে একাত্মতা ঘোষনা করবেন এবং এর প্রতি সহনশীলতা বজায় রেখে যেকোন ধরনের হুমকি প্রদান থেকে বিরত থাকবেন এবং এর অগ্রযাত্রায় পূর্নাঙ্গ সহায়তা করবেন।
ধন্যবাদান্তে,
আমাদের প্রযুক্তি টিম
http://www.amaderprojukti.com
১৭৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
ছবির গল্প, গল্পের ছবি
সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন