somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাদিয়ানিদের এক ডজন ইসলাম বিরুধী আকীদা বিশ্বাস!

২৪ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কাদিয়ানিদের বই থেকেই তাদের চেপে রাখা অস্বাভাবিক ধর্মবিশ্বাসের একবিন্দু ছিঁটেফোঁটা তুলে ধরলাম।

একেবারে যেই কথাটি একদম কমন, সবাই জানে; তা হচ্ছে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদ (মৃত ১৯০৮ইং) নিজেকে সুস্পষ্ট রূপে "রাসূল" হবার দাবী করেছিল। (দেখুন, দাফেউল বালা - ১২; তারই বইয়ের বাংলা অনুবাদ)। স্কিনশর্ট দ্রষ্টব্য।

অতএব হিসেব সোজা, বুঝা গেল, কাদিয়ানিদের "শেষনবী" মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। তারা ভারতের কাদিয়ান গ্রামের নতুন একজনকে নবী মেনে নিজের অজান্তেই উম্মতে মুহাম্মদিয়া'র গণ্ডি থেকে খারিজ। হয়ে গেলেন 'উম্মতে কাদিয়ানী'! কবরে ফেরেশতা যখন এদের প্রশ্ন করবেন - বল! 'তোমার নবী কে ছিল'? তখন হয়ত এরা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বদলে কাদিয়ানের কাজ্জাব মির্যা গোলাম আহমদের নাম-ই বলবে!!

এই কাদিয়ানী সম্প্রদায় মির্যাকে নতুন একজন নবী স্বীকার করার মাধ্যমে প্রকারান্তরে পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাব, আয়াত নং ৪০ এর অস্বীকারকারী হয়ে যায়। কাদিয়ানিদের মূলধারার বই পড়ে দেখুন, ইসলামের আদিম ও সর্বসম্মত আকীদা বিশ্বাসের বিপরীতে তারা এরকম আরো বহু জটিল মতবাদের ফেরি করে চলেছে! প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে কাদিয়ানী জালে আটকে ফেলছে। এদের গুটিকয়েক মনগড়া ও ইসলাম পরিপন্থী মতবাদ নিচে দেখুন! যেমন,

১- ইসলামের কালেমা শরীফঃ একদম সত্যি যে, কাদিয়ানিরা মুহাম্মাদ (সাঃ) বলতে তাদের মির্যা গোলাম আহমদকে উদ্দেশ্য নেয়। (দেখুন, কালিমাতুল ফছল, মির্যা বশির আহমদ এম.এ রচিত; ১৪/১৫৮ দ্রষ্টব্য)।

২- মেরাজকে স্রেফ আধ্যাত্মিক স্বীকারকরাঃ তারা নবীজী'র মেরাজ শরীফ শারিরীকভাবে হওয়াকে অস্বীকার করে। অথচ উম্মতের ইজমা হচ্ছে, মেরাজ শারিরীকভাবেও হয়েছিল।

৩- জিহাদের বিরুদ্ধাচরণঃ এরা ইসলামের পবিত্র সশস্ত্র জিহাদের অস্বীকারী এবং মুজাহিদদের 'হারামী' আখ্যায়িতকারী।

৪- ঈসা (আঃ) এর দ্বিতীয়বার আগমনকে অস্বীকারঃ এরা ঈসা (আঃ)-এর আগমনকে অস্বীকার করে তদস্থলে কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদকে ঈসার স্থলাভিষিক্ত দাবীকারী।

৫- সকল মুসলমানকে "অমুসলিম" মনে করাঃ খুবই দুঃখের বিষয় হল, এদের মূলধারার বইতে পরিস্কারভাবে লিখা আছে, যারা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে স্বীকার করেনা তা অমুসলিম। (মির্যা কাদিয়ানীর রচিত "তাযকিরা" বইয়ের ৩৫ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য)।

৬ - ইমাম মাহদীর আত্মপ্রকাশ স্থল মক্কা নগরীর অস্বীকারঃ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে হযরত ইমাম মাহদীর প্রথম আত্মপ্রকাশ ও বাইয়াত দুইটি-ই সংঘটিত হবে পবিত্র মক্কায়। তারপর তিনি কালো পাতাকাধারী অশ্বারোহী এক বিরাট বাহিনীসহ খোরাসানের দিক থেকে সিরিয়াভিমুখে জিহাদের উদ্দেশ্যে রণযাত্রা করবেন। হাদীসে নির্দেশ আছে, তোমরা বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও সেই দলটিতে শরিক হয়ে যেও। কেননা কালো পাতাকাধারী সেই অশ্বারোহী দলটিতে আল্লাহর খলিফা ইমাম মাহদী রয়েছেন। কিন্তু কাদিয়ানিরা সম্পূর্ণ হাদীস বাদ দিয়ে শুধু শেষের খন্ডিত অংশ দ্বারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তারা এভাবে কাটছাঁট করে এবং সীমাহীন অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত তো করছেই; বরং মির্যা কাদিয়ানীকে ইমাম মাহদী সাজাতেও তৎপর রয়েছে।

৭- প্রথম মানুষ কেঃ মুসলমানদের বিশ্বাস, প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবী হযরত আদম (আঃ)। কিন্তু কাদিয়ানিদের বইতে হযরত আদম (আঃ) -কে প্রথম মানুষ অস্বীকার করা হয়। আবার এরা হযরত ঈসা (আঃ)-এরও পিতা ছিল বলে দাবী করে (দেখুন, রূহানী খাযায়েন ৩/২৫৪ দ্রষ্টব্য)। ইউসুফ নাজ্জার নাকি হযরত বিবি মরিয়মের স্বামী ছিল! নাউযুবিল্লাহ। কিন্তু কনভার্টেড নবীন আহমদীদের কয়জনেরই বা এই গোষ্ঠীটির ভেতরের ফুটোগুলো খোলাসা করে দেখার সাধ্য রাখে! কার এত সময় আছে যে, সব খোলাসা করে তবেই কাদিয়ানিয়তের উপর ঈমান নেবে! আল্লাহ তাদের রক্ষা করুন।

৮- জান্নাত জাহান্নাম রূপকঃ শুনে যে কেউ লাফিয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কাদিয়ানিদের মূলধারার বই পড়লে যে কেউই বুঝতে পারে যে, এরা কথিত 'রূহানী জামাত' এর অন্তরালে গোপনে কিসব ঈমান-বিধ্বংসী কুফুরী আকিদার ফেরি করে চলছে। ওদের বইতে লিখা, জান্নাত জাহান্নাম এগুলোও নাকি অবাস্তব তথা রূপক। হায় হায়, এবার এর কী হবে!

৯- সহীহ হাদীস অস্বীকারঃ এরা কতটা বোবা শয়তান ওদের সাথে যাদের ডিবেট হয়নি তারা তা কল্পনাতেও চিন্তা করতে পারবেনা। এরা যেখানে ঠেকায় পড়ে বিভিন্ন মনীষীদের উদ্ধৃতিও পেশ করতে দ্বিধা করেনা (যদিও তাদের উদ্ধৃতিগুলোর বেশিরভাগই চর্বিতচর্বন), সেখানে সময় সময় সহীহ হাদীসও তাদের নিকট মূল্যহীন হয়ে যায়! নির্দ্বিধায় বলে দেয় যে, এগুলো মুনাফিকদের বানানো ও কুরআন বিরুধী হাদীস!! তারা এই নিয়মেই পবিত্র সহীহ হাদীসগুলোর অবমাননা করে চলছে! অথচ সহীহ হাদীস কখনো কুরআন বিরুধী হয় না, হতে পারেই না; বরং সহীহ হাদীস কুরআনের সঠিক মর্মার্থ উদ্ধারে সহায়ক ও ব্যাখ্যাকারী হয়ে থাকে।

১০- ইয়াজুজ মাজুজকে অস্বীকারঃ হাদীসে উল্লেখ আছে যে, ইয়াজুজ মাজুজ নামীয় সম্প্রদায় হচ্ছে হযরত নূহ (আঃ) এর পুত্রদের অন্যতম ইয়াফাস এর বংশধর। কিন্তু এই কাদিয়ানিরা কতটা বেপরোয়া হলে সকল যুগ ইমাম ও সালফে-সালেহীনের বুঝের বিপরীতে ব্যাখ্যা দাঁড় করে বলতে পারে যে, বস্তুত ইয়াজুজ মাজুজ হচ্ছে পরাশক্তি চীন, রাশিয়া আর আমেরিকা-ই।

১১- দাব্বাতুল আরদ এর অপব্যাখ্যাঃ পবিত্র কুরআনে আছে, "ওয়া ইযা-ওয়াকা‘আল কাওলু‘আলাইহিম আখরাজনা-লাহুম দাব্বাতাম মিনাল আরদি তুকালিলমুহুম আন্নান্না-ছা কা-নূবিআ-য়া-তিনা-লা-ইঊকিনূন।" (আন নমল ৮২) অর্থাৎ আর যখন তাদের উপর ‘বাণী’ (আযাব) বাস্তবায়িত হবে তখন আমি যমীনের জন্তু (দাব্বাতুল আরদ)* বের করব, যে তাদের সাথে কথা বলবে। কারণ মানুষ আমার আয়াতসমূহে সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখত না। * কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হল ‘দাববাতুল আরদ’ বের হওয়া। ইমাম আহমদ (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দশটি নিদর্শন না দেখা পর্যন্ত কিয়ামত হবে না তন্মধ্যে অন্যতম হল, দাববাতুল আরদ বের হওয়া। ইমাম ইবন কাসীর বলেন, শেষ যামানায় যখন মানুষ সৎকাজের আদেশ দেবে না, অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে না, সত্য দীন পরিবর্তন করবে এবং চারদিকে ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়বে তখন ‘দাব্বাতুল আরদ’ বের হবে।

কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর বইতে "উলামায়ে ছূ" (অসাধু আলেম)-ই নাকি সেই দাব্বাতুল আরদ!! (রূহানী খাযায়েন খন্ড ৩)। আবার কোথাও প্লেগের প্রাদুর্ভাব আর মহামারী ব্যাধিকেও 'দাব্বাতুল আরদ' বলে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ।

১২- মানব আকৃতির দাজ্জালকে অস্বীকারঃ এই কাদিয়ানী গোষ্ঠী কতটা অপব্যাখ্যার জাল বিছিয়ে দাজ্জালকে রূপক আখ্যা দেয় তা যারাই তাদের বইগুলো পড়েছেন তাদের নিকট একদম সুস্পষ্ট। এরা দাজ্জালের অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় তৈরি করে মূলত জল ঘোলা করতে চেষ্টা করে। তারা জাল আর দুর্বল বর্ণনাগুলোর আশ্রিত যুক্তির গ্যাঁড়াকলে দাজ্জালকে আলাদিনের চেরাগের মত রূপক প্রমাণ করতে ব্যতিব্যস্ত। তাদের বইতে কখনো প্রতিশ্রুত দাজ্জাল বলতে শয়তানকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে (রূহানী খাযায়েন ৭/৩১৪ দ্রষ্টব্য) আবার কোথাও খ্রিস্টান পাদ্রীদেরও দাজ্জাল বলে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। এরই অপর নাম কাদিয়ানিয়ত!

এরা ইসলামের আদিম ও সহজ সরল দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ডকারী আধুনিক যামানার শ্রেষ্ঠ বাতিল গোষ্ঠী। এদের কাজই হল, মির্যা কাদিয়ানীর বইয়ের চর্বিতচর্বন করে ইসলামের মীমাংসিত বিষয়গুলো ঘোলাটে করে নিজের মত করে নতুন ধরণের ব্যাখ্যা দাঁড় করে মুসলিম উম্মাহার ভেতর নানা সন্দেহ সৃষ্টি করা ও দলে দলে বিভক্ত করে দেয়া।
এভাবে আরো বহু বলা যাবে। আজ এই পর্যন্ত।

তাই এরা উপরে উপরে নিজেদের যতই মুসলমান দাবী করুক; কিন্তু এরা অমুসলিম - তাতে বিন্দুমাত্র কোনো সন্দেহ নেই।

লিখক, প্রিন্সিপাল নুরুন্নবী।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×