somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোঃ খুরশীদ আলম
যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

বিভ্রান্তির নিরসন : কোরবানির টাকা কুরবানি না দিয়ে দান করা যাবে কি না ?

৩০ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভ্রান্তির নিরসন : কোরবানির টাকা কুরবানি না দিয়ে দান করা যাবে কি না ?

দেশে ফেতনা ফাসাদের অভাব নাই। একটা ফেতনা ঘুচায় তো আর একটা নতুন ফেতনা (বিশৃঙ্খলা) তৈরি হয়। নিত্য নতুন ফেতনার বিভ্রান্তিতে সহজ-সরল মানুষের ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায়, বিশুদ্ধ জীবনাচারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ইলমে দ্বীন শিক্ষার কোন বিকল্প নাই-অন্তত যারা সুস্থ মানবিক জীবনবোধ প্রত্যাশা করেন তাদের জন্য।

পৃথিবী ব্যাপি কভিড-19 বা করোনা ভাইরাস নামক মহামারিতে বিপর্যস্ত সর্বস্তরের মানুষ। মানব সৃষ্টির ইতিহাসে এমন পরিস্থিতির শিকার কোন মানুষ না হয়েছে, না কোন অন্তর এমন ভয়াবহতার কথা চিন্তা করেছে। এই রূপ পরিস্থিতিতে অসহায় দরিদ্র মানুষের অসহায়তা গুছাতে আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে দানশীল কতিপয় মানুষের মনে প্রশ্ন উদয় হয়েছে যে, কুরবানির টাকা দান করা যাবে কি না? উদ্ভুত প্রশ্নকে সম্মুখে রেখেই আলোচনার অবতারনা। আশা করি ভ্রান্তি ও ত্রুটি নিরাময়ে এই আলোচনা সহায়ক হবে, ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্নটির ভাববোধ 02 রকমের হতে পারে।
1) নিজের জন্য নির্ধারিত কোন সুবিধা নিজে গ্রহণ না করে তার অর্থ অভাবগ্রস্থকে দান করা যাবে কি না? (নিজে সুবিধা না নিয়ে তা অন্যকে দান করাও এক অর্থে কুরবানি)
2) কুরবানির পশুর দাম (পশু জবাই অর্থে কুরবানি) অভাবগ্রস্থকে দান করা যাবে কি না?

প্রথমোক্ত ধারণাটি অত্যন্ত সাদামাটা এবং এর উত্তরও সহজেই বোধগম্য। কেউ যদি তার মালিকানায় থাকা কোন পরিমাণের অর্থ বা কোন বস্তু হতে সুবিধা গ্রহণ না করে তা এমন কাউকে দান করেন যার দরকার, তাহলে সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। দান-খয়রাত ও পশু কুরবানি দুটি সতন্ত্র বিষয়। দান করার বিষয়ে হাদীসে তাগিদ এসেছে এবং এর বরকতও প্রকাশিত বেসুমার। রাসুল (স) বলেন- “তোমরা খোরমার একটি টুকরা দান করিয়া হইলেও তাদ্দারা দোযখের আগুন হইতে রক্ষা পাইবার চেষ্টা কর।” অপর হাদীসে বলেন, “তোমরা ছদকা খয়রাত দ্বারা আল্লাহর নিকট রুযির বরকত তালাশ কর।” অপর হাদীসে বলেন, “ নিশ্চয়ই দান খয়রাত কবরের আযাব হইতে রক্ষা করিবে। নিশ্চয় হাশরের ময়দানে দানশীল মুসলমান দান খয়রাতের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করিবেন।”


[দান করা যায় প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে, সবাই আল্লাহ জানেন ও দেখেন]
যার অর্থ-সামর্থ্য আছে তিনি দান করবেন, দান যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতিতে করা যায়। এর জন্য কোন দিন-ক্ষণ-মৌসুম লাগে না। যা লাগে তা হলো দান করার মানসিকতা। পক্ষান্তরে কুরবানি (পশু কুরবানি) করা হয় আরবী জিলহজ্জ মাসের 10 তারিখ হতে 12 তারিখের সন্ধ্যার মধ্যে।

কে কুরবানি করবে?

যার উপর ছদকা ফেতর ওয়াজিব তার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব।
কে দান করবে ? দান ছদকা যে কোন বয়সের যে কোন ব্যাক্তি যে কোন সময়ে যে কোন পরিমাণে করতে পারবেন।

কে কুরবানি করবে না ?


যে ব্যক্তি মালদার নয় অর্থাৎ নেছাব পরিমাণ মালের মালিক নন তার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব নয়। আর্থিক সঙ্গতিহীন ব্যক্তি জিলহজ্জ মাসের নির্দিষ্টি দিনগুলোতে শরীরের নক ইত্যদি অংশ না কেটে বরং তা ঈদুল আযহার সালাতের পরে কাটলে কুরবানির সওয়াব হাসিল করার কথা কিতাবে উল্লেখ আছে।
মহান আল্লাহ পাক অসামর্থবানকে কুরবানির হুকুম চাপিয়ে দেননি। কিন্তু কুরবানি দিতে অসামর্থবান মানুষও দান করতে পারে। কিছুদিন আগে ঢাকায় একজন ভিক্ষুককে দেখা গেছে করোনায় গরীবদেরকে ত্রান সাহায্য দিতে। এমনি ভাবে একজন গরীব-দুখি-মিসকিন যিনি দিনে এনে দিনে খান তিনিও দান করতে পারেন তার সামর্থ্য অনুযায়ী কিন্তু তিনি কুরবানি দিতে পারেন না। অর্থ-কড়ি দান করা আর পশু কুরবানি করা (পশু কুরবানির গোশতের একটা অংশও দান করা হয়- উৎসাহীরা চাইলে পূর্ণ অংশ দান করে দিতে পারেন) র তাৎপর্য ও পার্থক্য জ্ঞান না বুঝলে সিদ্ধান্তহীনতার গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক খেতে পারেন-সন্দেহ নেই। মন দিয়ে একটু ভাবলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়।



[কুরবানির পশু যতদূর সম্ভব মোটা তাজা ও সুস্থ সবল হওয়া চাই]
যারা চাচ্ছেন এমনটি তাদের জন্য পরামর্শ :

যাদের মননে কুরবানি না করে কুরবানির টাকা দান করার চিন্তা এসেছে তাদের জন্য পরামর্শ এই- যে অর্থ কুরবানির জন্য বাজেট করবেন তা দিয়ে কুরবানি দিন এবং কুরবানির গোশত পুরোটাই গরীবদেরকে দিয়ে দিন। এতে করে আপনার কুরবানির হুকুমও আদায় হবে আর পালন করা হবে একই সাথে দানও করা হবে। এখন আবার প্রশ্ন করবেন না- তাহলেতো গরীবদেরকে টাকা দান করা হলো না। টাকাই দান করতে হবে এমন কোন নির্দিষ্টতা শরিয়তে নাই। টাকা, খেজুর, ব্যবহারর্য জিনিসপত্র যেকোন কিছুই মুক্ত হস্তে দিলে তা দান বলেই গণ্য হবে।

কুরবানিতে রয়েছে মুসলমানের জন্য শিক্ষনীয় ছবক :


সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাতের মতো কুরবানিও একটি নির্ধারিত সময়ের নির্ধারিত এবাদত। সালাতের পরিবর্তে যেমন রোযা রাখলে হয়না, রোযার পরিবর্তে যেমন হজ্জ করলে হয়না, যাকাতের পরিবর্তে যেমন হজ্জ বা সাওম আদায় করলে হয় না তেমনি কুরবানির টাকা দিয়ে কুরবানি না দিয়ে তা দান করলে কুরবানি আদায় হবে না। পক্ষান্তরে জিলহজ্জ মাসের কুরবানিতে রয়েছে মানবজাতির জন্য শিক্ষনীয় ছবক। ইব্রাহিম (আ) মহান আল্লাহর নির্দেশে পুত্র ইসমাইলকে জবাহ করার যে তৎপরতা তাতে শিক্ষনীয় এই যে, মহান আল্লাহর হুকুম হলে স্বীয় জান-মাল-প্রিয় বস্তু এমনকি সন্তানকেও কুরবানি দিতে হবে। এতে কোন দ্বিধা করা যাবে না। এই ধরণের কর্মতৎপরতা শুধুমাত্র ঈমানওয়ালা আল্লাহ প্রেমিকের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। সুতরাং কুরবানির যে শিক্ষা ও ফজিলত তা কুরবানির পরিবর্তে দান করাতে নয় বরং কুরবানিতেই পাওয়া সম্ভব। অপরদিকে দুনীয়ার মোহে পড়ে আমরা ইসলামের মহান শিক্ষা ভুলে যেন না যাই সেই গুরত্ব থেকেই প্রতি বছর কুরবানির নির্দিষ্ট ক্ষণ উপস্থিত হয় এবং জরুরী আমলের অনুশীলনে উৎসাহ যোগায়।

পুনশ্চ : কুরবানির অর্থ দিয়ে কুরবানির পরিবর্তে দান করলে দানের সাওয়াব পাওয়া যাবে কিন্তু কুরবানি না করায় কুরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না, গুণাহগার হবে।

আল্লাহ সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুন।


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:৫৫
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×