somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

একান্ত নিনাদ
জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

কিশোর বেলা।

১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস সেভেন-এর অলস দুপুর। সম্ভবত তখন বের হয়েছে প্রথম বা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফল, হাতে অফুরন্ত অবসর। দিনমান কেটে যেত এদিক সেদিক ঘুরে বেরিয়ে। টো টো করে অকারনে ঘুরলে যা হয়, বেরসিক জ্বর এসে কাবু করলো হঠাৎ। প্রথম কয়েকদিন তো জ্বরের প্রকোপ কমেই না। ছুটি হওয়া সত্যেও স্কুলের মাঠে যখন বন্ধুরা সকাল বিকাল ছক্কা পিটিয়ে যাচ্ছে তখন আমি কিনা শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছি। কেমনটা লাগে? এমনই একদিন বাসার বুক শেল্ফে আবিষ্কার করলাম পেপারব্যাকের কয়েকটি বই। মনে পড়লো চাচাতো ভাইয়ের বাসা থেকে সেবার পড়বো বলে এনেছিলাম কয়টা বই। একটার ওপর নীল তিমির ছবি, বড় বড় হরফে লেখা-তিন গোয়েন্দা , ভলিউম তিন এর এক। এর আগে থ্রিলার টাইপ কিছু বই পড়েছিলাম বটে, কিন্তু সেভাবে বুঁদ হইনি তখনো। বইটা যেন আমার জগৎটাকে হঠাৎই এলোমেলো করে দিল। নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়ে ফেললাম বেশ কয়টা বই। কখনো কিশোর, মুসা, রবিনদের নিয়ে চলে যাচ্ছি শ্বাপদসংকুল ভীষণ অরণ্যে, কখনো এনথনি শোঁপাকে তাড়া করতে করতে খুলতে হয়েছে সাতটি কাকাতুয়ার দুর্বোধ্য সব রহস্যের গেরো। আবার কখনো খুলতে হয়েছে রাইমিং স্ল্যাঙের জট। কয়েকটি দিন যেন স্রেফ উড়ে গেল । কিশোর, মুসা আর রবিনরা কখন যে সবাইকে ভুলিয়ে আমার একমাত্র আর কাছের বন্ধু হয়ে গেল টেরই পেলামনা।

বুঝতে পারলাম মায়াবী এক রহস্যের চাবি দিয়ে কোথায় যেন প্রবেশ করেছি, যে দরজা দিয়ে একবার ঢুকলে বের হয় কার সাধ্যি? এর পর থেকে ওদের বাসায় গেলেই হাতে করে নিয়ে আসতাম নিত্যনতুন সব সেবার বই। ট্রেজার আইল্যান্ড, টোয়েনটি থাউজ্যান্ড লিগ আন্ডার দ্য সির মতো বইগুলো ওঁর কাছ থেকেই পড়া। ঈদের সময় পাওয়া সালামির টাকা আম্মুর কাছে জমা রাখতাম। বই মেলা হলেই যেয়ে কিনলাম তিন গোয়েন্দা ছাড়াও সেবার আরও বই - রবিন্সন ক্রুসো, সুইস ফ্যামিলি রবিন্সন, হাকল বেরি ফিন। সারা বছরের টাকা জমিয়েও যেন অল্প কয়টার বেশি বই কিনতে পারতাম না বই মেলা এলেও। বাসায় নিয়ে আসতাম সেবার বুক ক্যাটালগ আর মার্ক করে রাখতাম আগামিবার কি কি বই কিনবো, আর কতো টাকা আমাকে জমাতে হবে ঐ বইগুলোর জন্য।
বইপড়ার পাঠটা আরো আগে পেয়েছিলাম মামাদের কাছ থেকে। আরও যখন ছোটো ছিলাম, মনে পড়ে, বড় মামা আমাদের একবার জন্মদিনে একসাথে মনে হয় গোটা বিশেক বই একবারে গিফট করেছিলেন। ছোট মামা, ছোট খালা যখন নিজেরাই স্টুডেন্ট ছিল, মনে আছে ইউনিভার্সিটি থেকে আসার সময় প্রায়ই নীলক্ষেত বা শাহবাগ থেকে গল্পের বই নিয়ে আসতো আমাদের জন্য। ছোট মামার কাছেই প্রথম শুনেছিলাম ব্রাম স্ট্রোকারের ড্রাকুলা আর বাস্কার ভিলের হাউন্ডের কথা, সম্ভবত তাঁর হাত ধরেই প্রথম বই মেলাতেও গিয়েছিলাম।
আব্বুর কাজের কারনে অনেকদিন ঢাকার বাহিরে থাকতে হয়েছিল বলে সবসময় নতুন বই পড়া হতোনা আমাদের। ক্লাস সেভেনে ঢাকায় পুরোপুরি চলে আসার পর বন্ধুরা বলত মাসুদ রানার কথা। শুনেছিলাম এটা নাকি "বড়দের বই"। বড়দের বই,সেটা আবার কী জিনিস? ভেতরে ভেতরে পড়ার জন্য দুর্মর আগ্রহ হত, কিন্তু তখনো আমি তিন গোয়েন্দাতেই ডুবে ছিলাম।কতো কতো বিকেল আর দিন যে গড়িয়ে গিয়েছিল রকি বিচের স্যাল্ভেজ ইয়ার্ডটার কথা ভাবতে ভাবতে। অনেক ইচ্ছা আমার, যদি কোনোদিন পারি, একবার, একদিনের জন্য হলেও ক্যালিফরনিয়ার রকি বিচে যাবো স্যাল্ভেজ ইয়ার্ডটার খোঁজে।
তিন গোয়েন্দার পর ভাইয়া পড়তে দিয়েছিল সত্যজিতের ফেলুদা।এ যেন আরেক জগত।কল্পনাতেই নিজেকে ভাবতে শুরু করলাম তোপসে! মাঝে আরও পড়লাম শাহরিয়ার কবিরের হারিয়ে যাওয়ার ঠিকানা, নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়, পাথারিয়ার খনি রহস্য এসব। এরি মাঝে পরিচয় হলো জাফর ইকবাল স্যারের আমার বন্ধু রাশেদ আর সাইন্স ফিকশন গল্পগুলোর সাথেও। ও বলাই হয়নি, আমার বন্ধু রাশেদ যখন প্রথম বড় পর্দায় এলো ছোট মামাই প্রথম নিয়ে গিয়েছিল সিনেমা হলে। মনে আছে সেই যে কি কি দিনটা ছিল। দেখতে দেখতে উত্তেজিত হয়ে উঠছিলাম, এর পরে কি হবে, কাহিনী আমি জানি! সেদিনই ছিল হলে গিয়ে প্রথম কোনো ছবি দেখা।
আম্মুকেও দেখতাম সবসময় বই কিনতো বই মেলা থেকে। ইন্ডিয়ান রাইটারদের বই সম্ভবত আম্মুর খুব ভালো লাগতো। আব্বুকে ব্যস্ততার কারনে তেমন পড়তে দেখিনি কিন্তু বাসায় ডেল কার্নেগীর বেশ কিছু বই ছিল, শুনেছিলাম আব্বুই একসময় পড়ত ঐ বইগুলো। সম্ভবত আব্বুর কাছে থেকেই পাওয়া এখন বড় বেলায় আমার ফিকশনের চেয়ে নন-ফিকশন বই পড়তেই বেশি ভালো লাগে।
অন্যদের বা এখনকার সবার ছেলেবেলা কেমন আমি ঠিক জানিনা। আমরা ছোটবেলায় ফোন, আইপ্যাড বা কম্পিউটার পাইনি কখনো। পাইনি ভিডিও গেম বা এক্সবক্সও। বই পড়া আর মাঝে মাঝে বিকালবেলায় বিটিভিতে দেখানো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট আর স্পোর্টস ওয়ারল্ডে দেখানো পুরনো ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা গুলোই ছিল ছোট্ট একটা জগত।
আরো একটু বড় হতে হতে বুঝলাম নিজের মাঝেই লুকিয়ে থাকতে ভালো লাগতো বেশি। ব্যাপারটা আরও বাড়লো যখন আরও একটু বড় হলাম আর পড়তে শুরু করলাম হুমায়ূন আহমেদ আর সুনীল। আমি মনে করি এই জীবনে খুব বেশি বই পড়া আমার আসলেও হয়নি। এক জীবনে কটা বই-ই বা পড়া যায় ? শুধুই মনে হয় কতকিছু বাকি রয়ে গেল। তবে কিছু বই পড়ার পর মনে হয় এটা না পড়লে বড় একটা অতৃপ্তিই থেকে যেত। সুনীলের পূর্ব পশ্চিম ঠিক সেরকম একটা উপন্যাস আমার কাছে। এমনিতেই সুনীলের কাছে আমার ঋণ অনেক। তাঁর বই পড়েই কাঁদতে শিখেছিলাম। ছাপার কালো অক্ষরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কীভাবে বুঁদ হয়ে থাকা যায় সেটা তো সুনীলই শিখিয়েছিলেন। আমার কৈশোর তছনছ করে দেওয়া লোকটা তো আর কম লেখেননি জীবনে! কিন্তু পূর্ব পশ্চিম পড়ার পর কেবলই মনে হচ্ছে এই ঋণের পাহাড়সম বোঝা বুঝি আমাকে সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হবে। শোধ করার উপায় খোঁজাও বুঝি নিরর্থক।এক সময় সমরেশও পড়া হলো। মনে আছে বাসা থেকে বিকাল বেলা হেঁটে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের লাইব্রেরি চলে গিয়েছিলাম কতদিন। বিদেশি অনুবাদ গুলোই বেশি পড়া হয় ঐখানে। সুনীলের কথা যেভাবে বললাম হুমায়ূন আহমেদের কথা সেভাবে কেন বলিনি অবাক হলেন তো? হুমায়ূনের কোনো বই আমি কখনো কিনে পড়েছি বলে মনে পড়েনা। আমাদের তখন বাসা কলাবাগানে। বাসার কাছেই সোবহান বাগে আহসানিয়া মিশেনের একটা বুকশপ। ওখান থেকে কতো বই যে চুরি করে এনে পড়েছিলাম মনে পড়েনা। খুব যত্ন করেই বইগুলো পড়তাম, পড়া শেষ হলে যেভাবে আনতাম আবার সেভাবেই বইগুলো গুছিয়ে রেখে অন্য আরেকটা বই এনে পড়তাম। সুনীলের মতো না হলেও আমার এই ছোট্ট জীবনে হুমায়ূন আহমেদের লিখাগুলোর অনেক প্রভাব। সব প্রভাব আসলে লিখাও যায়না।

আচ্ছা ভালো কথা, এই লেখার তেমন কোনো উদ্দেশ্য নেই। এইটুকুই যে কতো রকমই না কিশোর বেলা হয়!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১৯ রাত ২:৩৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×