আজকে নিঃসংসভাবে একটা খুন করবো। কুচিকুচি করে কেটে মাংস রাস্তার কুকুরদের খাইয়ে দিবো।তারপর ছুড়িটা চুলায় গলিয়ে ফেলবো।
No dead body,
No murder weapon,
No charge,
No punishment!
আমি ছুড়ি-দা কড়কড়ে বালু দিয়ে ধার দিয়ে নিচ্ছি।কোনভাবেই আজ আজমইল্লাকে ছাড়বো না।ওকে খুন করার প্ল্যান আমার অনকে দিনের। ওর প্রতিদিনের রুটিন আমার মুখস্থ!
পুরো নাম আজমল শেখ।বাসা মুসার দোকানের পিছনে বস্তির মত ঘরগুলোতে।সারাদিন মাটি,ইট,বালু টানার কাজ করে।বেশ পেটানো কুচকুচে কালো শরীর। বাসায় তিন ছেলে আর প্রায় আধামরা বৌ।তবে মাঝে মাঝে মেয়েছেলের কাছে যায়।সপ্তাহে ৩দিন শনি,সোম,বুধ!আজ বুধবার।আজ সুফিয়ার কাছে যাবেই।
ঐখান থেকে ফেরার সময় বেশ ক্লান্ত থাকে।ঠিক হুজুরের বাসার গলির অন্ধকারে কাজ শেষ করতে হবে।কুকুরগুলোয় আমার হাত করা।৩ মাস ধরে খাইয়ে খাইয়ে পোষ মানিয়েছি!
পেছন থেকে এক কোপে মাথা আলাদা করে ফেলবো, অনেকটা পদ্মাবত সিনেমায় রণবীর সিং যেভাবে করেছিল। তারপর একটু মাথা ঠান্ডা রেখে পিছপিছ করে কাটা!কতক্ষণ আর লাগবে।আমার কাছে বেশ টাইম আছে।
আমি চাইলে আফতাব সাহেবের নাতি মুসাকেও খুন করতে পারি।ভদ্রলোকের খুব দেমাক।
শিশুদের খুন করা ইদানীং পান্তা ভাত।জমি নিয়ে বিরোধ তার পুলাপান মেরে ফেল,পারিবারিক বিরোধ তার পুলাপান মেরে ফেল, মন চাইছে ধর্ষণ করার পর খুন করে ফেল।রাগটা ঝেরে ফেলা বা প্রতিশোধ নেয়ার নতুন উপায়।খুব সহজ,একটা চকলেট দিয়া ডাকলেই আসবে।তারপর খালি কাজটা করতে হবে।
মুসার কিটক্যাট খুব পছন্দ।তাকে এইটা দেখিয়ে ডাকলে ছুটে আসবে।তারপর ঘরে এনে,গলা টিপে মেরে ফেলবো। ছোট শিশু কতই আর চিৎকার করবে।তারপর এসিডে চুবিয়ে শরীর, মাংস আলাদা করে গলিয়ে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে দিবো।জাভেদ ইকবালের কথা মনে নাই? ঠিক তারই কায়দায় কাজটা করবো। কোন ভূল নেই।
মুসা ধবধবে ফর্সা ছেলে, চমৎকার কথা বলে।আমাদের বাসায়ও আসে মাঝেমধ্যে খেলতে।যতক্ষণ থাকে কথার তুবড়ি ছোটায়।তবে আমি বিরক্ত হতাম না।
ওর মাংস এসিডে গলে নিশ্চয়ই কালো কুচকুচে হয়ে যাবে।একটু গন্ধ হয়তো ছড়াবে, মাছের বা মাংসের আশটে গন্ধ বলে ঠিকই পার পেয়ে যাবো। মাসায় একটা মাছ আগেই পচিয়ে রেখেছি।
আগেই বলেছি আমার প্ল্যান আছে,গভীর প্ল্যান!
আমিতো মিস নাজমাকেও খুনটা করতে পারি।তিনি একাই থাকেন।সিংগেল মাদার।একেবারে রোগা মহিলা, এককথায় বলা যায় পেন্সিল কাঠির মত।
একমাত্র ছেলে সারাদিন এটাসেটা নিয়ে ঝগড়া করে,ভাংচুর করে,বাসায় একা ফেলে চলে যায়।তিনি বাসায় একা-একা কাদেন।
তাকে খুন করলে আমাকে কেউ সন্দেহই করবে না।তিনি আমাদের নিচের ফ্ল্যাটেই থাকেন।মাঝেই এটাসেটার জন্য আসেন।আমি গেলে নিশ্চয়ই আশ্চর্য হবেন না?গিয়ে কলিংবেলটা চাপবো, আর দরজা খুলতেই মাথায় জোরে বসিয়ে দিবো এক ঘা! ঊনার যে বয়স,একটাতেই শেষ হয়ে যাবার কথা!
সবাই ভাববে নেশাখোর ছেলে টাকার জন্য মাকে খুন করেছে।পেপারে হেড লাইন হবে।কপাল ভালো থাকলে প্রতিবেশী হিসেবে আমার সাক্ষাৎকারও চাইতে পারে সাংবাদিকেরা!
কি? খুত আছে আমার প্ল্যানে? নেইতো!আমি জানি।
ঠিক এমনি নিখুঁতভাবে খুন করা হয়েছিল আমার মা মরা ছোট মেয়ে রোজকে!
কি দোষ হত, যদি আজমল আমার মেয়েকে প্রাইমারী স্কুলের পাশের পরিত্যক্ত বিল্ডিংটা ঢুকতে দেখেই ধমক দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিতো?যদি মুসা সেদিনও আমাদের বাসায় খেলতে আসতো? মিস নাজমা যদি উচ্চ শব্দের অভিযোগ না জানাতেন, মেয়েটাকে বকা না দিতেন, তাহলে কি আমি মেয়েকে বাইরে যেতে দিতাম? আমার রোজের মৃত্যুর জন্য এরা কি দায়ী নয়?
আমার মেয়েটাকে নির্দয়ভাবে বলৎকার করে মেরে ফেলা হয়েছিল।বিবস্ত্র শরীরটা পরে ছিল পরিত্যক্ত গার্মেন্টস বিল্ডিংয়ে,মাথাটা আজ ১ বছরেও খুজে পাওয়া যায়নি!আমার মেয়েটাকে আল্লাহ মায়ের আদরের ভাগ্য দেয়নি, কিন্তু অতটুকু বয়সেই কি কষ্টই না পেয়েছে সেদিন!
এই যাহ, ফজরের আযান পরে গেল।যাই নামাজ পড়ে দোয়া করে আসি।আল্লাহ যাতে আমার মেয়েটাকে আর কষ্ট না দেন।
খুন কিন্তু আমি এদের করবোই। আমার গভীর প্ল্যান আছে, গভীর প্ল্যান!