ভরপেটে ভাত খেয়ে একটা ঘুম দিবো ভাবছিলাম, এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠলো।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই, একজন মেয়ে মিষ্টি গলায় জিজ্ঞাসা করলো, ভাইয়া সাদিয়া কি বাসায় আছে?
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন সাদিয়া?.......
মেয়েটি কপাল কুচকে বললো, আমার বন্ধু আপনার বোন সাদিয়া।ভাইয়া আপনার কথা অনেক শুনেছি, আপনি সব বিষয়ে মজা করেন।এখন সাদিয়া কে ডেকে দিন,খুব দরকার।
আমি বললাম, সাদিয়া নামে এখানে কেউ থাকে না।তবে সোনিয়া মেহরিন সাথী অরফে পেতু নামে একজন থাকে আপনি চাইলে ডেকে দিতে পারি।
মেয়েটি দুঃখিত বলে চলে গেল।আমি তাকে আরেক নজর দেখার জন্যই হোক বা কোতুহলী হয়েই হোক বারান্দায় গেলাম। দেখলাম মেয়েটি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে, আর সিএনজি ড্রাইভারটি হাত নাড়িয়ে কথা বলছে। পাশে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে।যেহেতু কথা শুনতে পাচ্ছিলাম না।তাই দ্রুত নিচে নামলাম।
সিএনজি ড্রাইভার বলছে,ভাড়া নাই তো গাড়িতে চড়ছেন কেন?দেখতে তো ভালাই-ভদ্র দেখা যায়।এই ব্যবসা কত দিন ধরে করছেন!
পাশে নেতাগোছের একজন বলল, ভাড়া নাই তো ক হয়েছে?অন্যকিছু দেন।জানিনা কেন,লোকজন একসাথে হো হো করে হেসে উঠলো!
উনি আমাদের বাসায় এসেছেন, বলে ভাড়া মিটিয়ে দিলাম।মেয়েটির গাল গড়িয়ে ততক্ষণে জল পরতে শুরু করেছে। হিমুর রূপা, বাজিরাও'এর মাস্তানি অথবা রতন লাল সিং'এর পদ্মাবতীও এর রুপের কাছে নচ্ছার! হুমায়ুন স্যার সবসময় লিখতেন, মেয়েদের কাদলে বিচ্ছিরি দেখায়!কই এই মেয়েটাকে দারুণ দেখাচ্ছে!আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
মেয়েটিই বললো, ধন্যবাদ আমি যাই।বলেই হনহন করে চলতে শুরু করলো। আমিও পেছন পেছন যাচ্ছিলাম।গলির মাথায় গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো, আপনি আসছেন কেন?আপনি আমার সাথে এই মজাটা না করলেও পারতেন।
বললাম,আপনার কাছেতো টাকা নেই।বাসায় যাবেন কীভাবে? উত্তরে কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিল। যেহেতু আমি মানব দরদী তাই পিছুপিছু গেলাম।মেয়েটি মাজার থেকে আজমপুর পর্যন্ত প্রায় ১.৫ কিমি পথ হেটেই গেল।আজমপুর ফুটওভার ব্রিজ পার হয়েও হাটা শুরু করলো। দু-একবার পিছনে থাকালেও আমি তাতে কোন প্রভাব ফেললাম বলে মনে হচ্ছিল না।
আমিই ডেকে বললাম,এই যে চলুন না,রিকশায় পৌছে দিই।আর হাটতে পারছি না।আপনি চাইলে আমি অন্য রিকশায় করে আসবো। মেয়েটি রিকশায় উঠলো। এখনকার উত্তরা ১৪ নাম্বার সেক্টরে সবচেয়ে পুরনো বাসার সামনে গিয়ে রিকশা থামলো। আমিই ভাড়া দিলাম।
মেয়েটি বললেন, আপনি চলে যান।আমি আপনার টাকা দিয়ে দিবো।
এই ছিল আমার আর মিথিলার দেখা হবার ঘটনা।
হ্যা, ও টাকা ফেরত দিয়েছিল।আমি বাসায় ছিলাম না। কেন থাকবো,আমজ এরপর ১০ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি।কখন আসবে,কখন দেখবো এই ভেবে!ও এল না! ঠিক যেদিন আমি ক্যাম্পাসে গেলাম সেদিনই এসেছিল।কি যে রাগ হয়েছিল নিজের উপর!
ধুর,আমি তার প্রেমে পরিনি।প্রেমে পরা এত সহজ?এমন প্রেমে ছেলেরা অনেক পরে।বাকি ছেলেদের মত আমিই সব ভুলেই গিয়েছিলাম।প্রায় ১ বছর পর ৮.৮.২০১৪ তে বন্ধুদের সাথে জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে গেলাম।পেছন থেকে কেউ এই যে! এই যে! বলে চিৎকার করছিল।ফিরে তাকাতেই দেখি সেই মেয়েটি।বললো, আপনি একটা ক্যাকটাস! একটা মেয়েকে কেউ এতটা দৌড় করায়!
তারপর থেকে জাবি আমার এলাকা আর জেনেটিক্স বিভাগ আমার ঘর।কত দাড়িয়ে থেকেছি এক নজর দেখার জন্য।ময়নাদ্বিপ,ট্রান্সপোর্ট মোড়,ক্যাফেটেরিয়া, সুইমিংপুল পাড়,বোটানিক্যাল গার্ডেন কোথায় আমরা সময় কাটাইনি!জাবির ঘাসও নিশ্চিত আমাদের গল্পটা জানে।
ও আমাকে ভাইয়াই ডাকতো।কিন্তু ঘটনাটা ঘটলো ২০১৫ সালে।ওর র্যাগডে চলছিল।তাই আমি একাই সুইমিংপুলের কাছে জারুলগাছগুলোর নিচে এসে বসলাম।
মিথিলা পেছন থেকে আমার গালে আবীর ঘষে দিয়ে আমার পাশে বসলো! বললো,আপনাকে আর কাজ ফেলে কষ্ট করে জাবিতে আসতে হবে না।আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি।
আমি তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকালাম।গাল বেয়ে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পরছিল।
মিথিলা আমার হাত জড়িয়ে,কাধে মাথা রেখে বললো, আপনি আমার তুমি!আপনি জানেন না,হিমুদের কাদতে নেই।তবে আমি কিছুতেই আপনার রুপা হতে চাই না।হুমায়ূন সাহেবতো আর নেই, তাই হিমু আর রুপাতো দূরে দূরেই থাকবে।
আমরা ২০১৬ তে বিয়ে করেছিলাম।
এগুলো ভাবতে ভাবতে আমি ল্যাব-এইড'এ পৌছে গেলাম।ডাক্তার ১৪৩ নম্বর রুম থেকে বেরিয়ে বিরস মুখে বললো, আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন!তবে মেয়েটির মা-বাবা এখন থেকে আপনিই.....মনকে শক্ত করুন!
আমি দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়ালাম।মিথিলার ফ্যাকাশে মুখ দেখার ইচ্ছে আমার নেই।ওর হাসি মুখের স্মৃতিই জমা থাকুক, শান্ত মুখটা নাহ অপরিচিত থাকুক।
তবে আমার মেয়ের নাম আমি সাদিয়াই রাখবো!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০৬