somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ! একটি ফেক নিউজ

০৫ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির গতানুগতিক বার্ষিক মিটিং ৪৩তম সম্মেলন।
শুরু ৩০ সে জুন। বৈঠক চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত।
ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় এখন পর্যন্ত ১৬৭টি দেশের ১০৯২টি স্থান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবন বাদ দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

মুল ব্যাপারটি হচ্ছে বার্ষিক মিটিং এর পুর্বে এসব স্থানের মধ্যে সুন্দরবন সহ ৫৪টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কে বিভিন্ন কারণে নরমাল তালিকা থকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করে আসছিল আন্তর্জাতিক পরিবেশ বাদিরা। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ দিতে নয়।

বিদেশে বাংলাদেশ বিরোধি মহলের প্ররচনায় প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর করজারভেশন অব ন্যাচার (IUCN) গত ৭ জুন এক প্রতিবেদনে সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে থাকা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছিল। কোন মিডিয়া ব্যাপারটি না জানলেও বাংলাদেশে ওদের চামচারা ঠিকই খবর পেয়ে যায়। তৎপর টিআইবি মিটিং ডেকে মিডিয়াকে জানায় সুন্দরবন রক্ষা কমিটিরা তৎপর হয়ে সোশাল মিডিয়ায় সোচ্চার হতে থাকে। গুজব ছড়াতে থাকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে সুন্দরবন।


মূল ব্যাপারটি হচ্ছে -
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি বরাবর পাঠানো IUCN ওই প্রতিবেদনে সুপারিশ করে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাস্থল বাংলাদেশের সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ১৫০টি শিল্পস্থাপনা হচ্ছে, যা সুন্দরবনের টিকে থাকার জন্য হুমকি। তাই সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে থাকা বিশ্ব ঐতিহ্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ইন ডেঞ্জার) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হোক।’


কিন্তু অপশক্তির মুখে ছাই দিয়ে ৩০ জুন থেকে শুরু হওয়া সম্মেলনে গত ৩ জুলাই বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন সুন্দরবনকে বিপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐহিত্য কমিটি। আজারবাইজানের বাকুতে কমিটির ৪৩তম সভায় ২১ টি দেশের প্রতিনিধী সদস্য বিশিষ্ট কমিটি সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এতে জানানো হয়, বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় আলোচনার জন্য অন্তর্ভুক্ত করে। এ বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য বাকুতে শুনানির আয়োজন করা হয়। তবে ২১ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটিতে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনার পর সর্বসম্মতভাবে সুন্দরবনকে বিপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত হয়।

শুনানিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ওই ব্যাখ্যায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি।

সুন্দরবনের পাশে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ, বনের ভেতর দিয়ে জাহাজ চলাচলসহ বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ হুমকির মুখে দীর্ঘদিন ধরেই এমন অভিযোগ জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন সংস্থা। এ কারণে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরেই আশঙ্কা ছিল সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে বাদ যেতে পারে। আসলে ইউনেসকো তালিকা থেকে বাদ নয়, নর্মাল তালিকা থেকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রাখতে চেয়েছিল।

প্রতি বছরই মিটিং হয়। বাংলাদেশ এতদিন ঘাষ খায় নি।
গত বছরের ৪ ডিসেম্বর সুন্দরবনের হালনাগাদ অবস্থা জানিয়ে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির কাছে ছবি/স্যাটেলাইট ছবি ও লিখিত প্রতিবেদন দেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সুন্দরবন সুরক্ষায় সরকার জাতিসংঘ প্রস্তাবিত প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানতে চেয়ে সরকারকেও চিঠি দেয় ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি। ২২ এপ্রিল সরকার ওই চিঠির জবাব দেয়। আর ২০ মে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির কাছে রামপাল ও তালতলী বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন (ইআইএ) জমা দেয় সরকার। বলা হয় ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন এলাকার অনেকটা বাইরে অবস্থিত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে ৫ কোটি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। যা অতিব প্রয়োজনীয়।
প্রাপ্ত সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রেখে দেয়ার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি।

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি সুন্দরবনের বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) গঠনকে স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে জেডব্লিউজির নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে কমিটিকে হালনাগাদ তথ্য দিতে সরকারকে অনুরোধ করেছে কমিটি।

ভবিষ্যতে ইআইএর মাধ্যমে পশুর নদীর ড্রেজিংয়ের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে নির্ধারিত মানদণ্ডের ভিত্তিতে ইআইএ সম্পন্ন করতে হবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।


প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুন্দরবন নিয়ে আলোচনার দিন সভায় বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। ব্যাখ্যায় সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হয়। ২১ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটিতে বিষয়টি বিস্তারিতভাবে জানার পর সদস্য দেশ গুলো বাংলাদেশ ও সুন্দরবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন।





প্রথমে কিউবা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও চীন সুন্দরবনকে বিপন্ন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার প্রস্তাব উপস্থাপন করে।
২১ রাষ্ট্রের ভেতর উগান্ডা সহ ১৫ টি রাষ্ট্র এই প্রস্তাব সমর্থন করে।
কিউবা, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা এবং চীন ছাড়াও আজারবাইজান, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, তিউনিসিয়া, তানজানিয়া, বুরকিনাফাসো, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে ও পর্যবেক্ষক মর্যাদার রাষ্ট্র ভারতসহ ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র সরাসরি বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দেয়। সুন্দরবন সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রশংসিত হয় বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এ কমিটির নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ বছরই বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদলকে সুন্দরবন পর্যবেক্ষন করতে আমন্ত্রণ জানাবে এবং আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তারা হালনাগাদ তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন কমিটিকে জমা দেবে। গতানুগতিক রুটিন ওয়ার্ক।


ইউনেস্কোর সভা আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে ৩০ জুন থেকে শুরু হয়ে আগামী ১০ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।

সুত্র সিএনএন ও আজার তাস বার্তা সংস্থা।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৯ দুপুর ২:৪৫
১২টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×