পত্রিকার সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম যে বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারণী ১৮০০ কর্মকর্তা বা আমলা ভারত হতে প্রশিক্ষণ নিবে। সেই সংবাদের ছবিও দেখতে পেলাম বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এর। এই সংবাদ পড়ে সিলেটে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়াকালীন একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
তৎকালীন (২০০১-২০০৬) অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন কোন একটা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে। অনুষ্ঠান শেষে যখন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করিতেছিলেন তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন একমাত্র ছাত্রী নিবাসের ছাত্রীরা তার গাড়ি আটকিয়ে কিছু দাবি-দাওয়া পেশ করেন। সেই দাবি গুলোর একটি ছিলও ছাত্রী হলে একটা বড় টেলিভিশন চাই। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা সেই দেশের অর্থমন্ত্রীর কাছে চাইছে একটি টেলিভিশন। ছাত্রীদের এই চাওয়া শুনে অর্থমন্ত্রীর আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। অর্থমন্ত্রী হেসে ছাত্রীদের বলেছিলেন তোমাদের চাওয়ার মধ্যেই যদি দরিদ্রতা থাকে তবে সামনে এগোবা কিভাবে? আমি দেশের অর্থমন্ত্রী, আমার কাছে তোমরা চাওয়া উচিত ছিলও যে নতুন একটা ছাত্রী হল চাই। তা না করে তোমরা কি না চাইলে ২০-৩০ হাজার টাকা দামের একটা টেলিভিশন!!!!!!
Human Development index (যেমন: শিশু জন্ম-মৃত্যু হার, নারীর শিক্ষা, সবার জন্য স্বাস্থ্য, নিরাপদ প্রজনন ব্যবস্হা ইত্যাদি) এর প্রায় পতিটি সূচকে যে ভারত অপেক্ষা বাংলাদেশ এগিয়ে সেই ভারতে গিয়ে কিনা প্রশিক্ষণ নিবে বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারণী ১৮০০ কর্মকর্তা বা আমলা? যে দেশের আমলারা বিদেশে গিয়ে প্রতিনিয়ত লজ্জায় মুখ ঢাকে এই প্রশ্ন শুনে যে কেন এই ২০১৯ সালে এসেও সেই দেশের ২০ কোটির মতো মানুষ উন্মুক্ত স্থানে পায়খানা করে? কেন এই ২০১৯ সালেও সেই দেশে বিরাট সংখ্যক কন্যা শিশুকে জন্মের পূর্বে কেটে টুকরো-টুকরো করে মায়ের পেট থেকে বের করে ডাস্টবিনে ফেলা হয়? কেন সেই দেশের রাজধানীকে বিশ্বের ধর্ষণ রাজধানী হিসাবে গণ্য করা হয়? কেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বায়ু-দুষিত শহর গুলোর প্রথম ১০ টির মধ্যে ২/৪ টি সেই দেশের হয়? ব্যক্তি আক্রোশে যে দেশের সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতি অন্য বিচারপতির নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে?
১৮০০ আমলার ভারতে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্বন্ধে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের সাবেক মাহা হিসাব নিরক্ষ হাফিজ উদ্দিন আহমেদের মন্তব্যটা পছন্দ হইছে: "বাংলাদেশের আমলাদের তাজমহল দেখা ও বউদের জন্য শাড়ি কেনা ছাড়া আর কোন উপকার দেখি না"
সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার জনক সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কিউয়ান ইউ ও তার বউ বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন বিষয়ে স্নাতক ও তাদের ছেলে সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হতে কম্পিউটার সাইন্স বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছেন। সিঙ্গাপুরের বর্তমান মন্ত্রীসভার প্রায় অর্ধেক মন্ত্রী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের John F. Kennedy School of Government থেকে Master of Public Policy (MPP) এর ডিগ্রী অর্জন করেছেন।
মধ্য রাতে ব্যালট বক্স ভর্তি করা নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনা যখন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে মাস্টার্স করা আব্দুল মোমেনকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ করলো তখন আশাবাদী হয়েছিলাম যত জোচ্চুরি করেই নির্বাচিত হউক না কেন শেখ হাসিনা একাটা যোগ্য মানুষকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে। জীবনের প্রায় পুরোটা সময় আমেরিকায় বসবাস করা ও আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করা আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগামী কিছুদিনের মধ্যে সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে।
আশা করেছিলাম আমাদের হার্ভার্ড পাশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের আমলাদের জন্য সিঙ্গাপুর সরকারকে অনুসরণ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের John F. Kennedy School of Government থেকে Master of Public Policy (MPP) এর ডিগ্রী নেওয়ার ব্যবস্হা করবেন। হার্ভার্ড না হউক নিদেন পক্ষে আমেরিকার ভালো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় হতে পাবলিক পলিসির উপর উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য চুক্তি করবেন।
আব্দুল মোমেন যদি বাংলাদেশের বাংলাদেশের আমলাদের পরিবর্তে বাংলাদেশের সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভিসিদের ভারতের আইআইটির পরিচালকদের কাছ থেকে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য চুক্তি করতেন যে কিভাবে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় গুলো হতে পাশ করা গ্রাজুয়েটরা ভারতের আইআইটি হতে পাশ করার মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা কিংবা গুগলের সুন্দর পিচাই এর মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হতে পারে তা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্হা করা। কিংবা বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Bangladesh Space Research and Remote Sensing Organization, or SPARRSO, এর বৈজ্ঞানিক ও কর্মকর্তাদের ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা Indian Space Research Organisation এর সাথে চুক্তি করে বৈজ্ঞানিক ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্হা করে ভারতের মতো নিজ দেশে কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট বানিয়ে তা পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপনের ব্যবস্হা করতো তাহলেও একটা ধন্যবাদ দেওয়ার যেতো।
কিন্তু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম বৈদেশিক সফরে ভারতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কি করলেন বাংলাদেশের আমলাদের ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য চুক্তি?
প্রবাদে আছে যাই দিন ভালো আসে দিন খারাপ। দেশের আমলারা যদি ভারত হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতীয় মডেলে প্রশাসন চালানো শুরু করেন ও সরকারের কাছে পলিসি প্রস্তাবনা পাঠানো শুরু করেন তবে আগামী কিছুদিনের মধ্যে সিঙ্গাপুর না ভারতের মতো বাংলাদেশের মানুষদেরও বদনা নিয়ে খোলা মাঠে বা রেল-লাইনের ধারে দৌড়ানোর ছবি দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
সুত্র:
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৪ সমঝোতা স্মারক সই, বাংলানিউজ২৪ডটকম, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:৪৫