সাভারের রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরে যখন সাহায্যের জন্য আবেদন জানালাম নিজের ফেসবুক ও ব্লগের মাধ্যমে তখন নিজের পে-পাল একাউন্টে ৩৫০ ডলার জমা হওয়ার পরে জানতে পরলাম কানাডার অটোয়া থেকে ঐ ডলার পাঠিয়েছেন ব্লগার সাজি আপু। গত ৯ বছরে বাংলাদেশের বর্ষাকালে বন্যা দূর্গত মানুষদের মাঝে ত্রান ও শীতকালে শীতবস্ত্র বীতরণের উদ্যোগে সাজি আপু তার নিজের পরিচিত বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন। এই কানাডায় থাকার পরেও ঢাকা থেকে সামু ব্লগাররা যখন কুড়িগ্রামের তিস্তা নদির চড়ান্বচলের মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরনে গিয়েছিল তাদের সকলের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্হা করেছিলেন কুড়িগ্রামে অবস্হিত নিজের ভাই এর বাড়িতে।
আমার শশুর স্ট্রোক করার ১৫ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ২ তারিখে প্রায় দুপুর ১২ টায় মৃত্যু সংবাদ শুনার ১ ঘণ্টার মধ্যে দেশে যাওয়ার বিমান টিকেট কেনা হয় ফ্লাইট পরের দিন রাত ১০ টায়। অথচ পাসপোর্ট তখন আমাদের বসবাস করা শহর থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে কানাডার রাজধানী অটোয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ এমবাসিতে। ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলাম সাজি আপুর কাছে। আপু জানালো অটোয়াতে ফ্রিজিং রেইন চলছে সেই সাথে এনভায়রনমেন্ট কানাডার সিভিয়ার ওয়েদার ওয়ার্নিং ইস্যু হয়েছে চরম দরকার ছাড়া বাহিরে গাড়ি নিয়ে বেড় না হওয়ার জন্য, রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ। সাজি আপু আমার কথা শুনার সাথে-সাথে বললেন আমি এম্বাসি থেকে পাসপোর্ট উঠিয়ে গাড়ি চালিয়ে টরোন্টোর উদ্দেশ্য রওয়ান দিচ্ছি। সাজি আপু নিজের সকল কাজ ফেলে এম্বাসিতে হাজির হলেন। এম্বাসি একজনের পাসপোর্ট অন্যজনকে দিবে না কোন প্রকার নমিনি লেটার ছাড়া। ব্লগার ও কবি সত্তার কারণে ওটোয়া প্রবাসী সাংস্কৃতিক মণ্ডল ও এমবাসির সকলের সাথে পরিচিত। ফলে ঐ লেটার ছাড়াই পাসপোর্ট সংগ্রহ করলেন এম্বাসি থেকে নিজের সাংস্কৃতিক পরিচয় ব্যবহার করে। সৌভাগ্যক্রমে আপুর টরোন্টোতে আসতে হয় নি কারণ তিনি টরোন্টো থেকে অটোয়ার হাই কমিশনের অফিসে যাওয়া এক ভদ্রলোকের মাধ্যমে পাসপোর্ট পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্হা করেন। সেই পাসপোর্ট নিয়ে পরের দিনই বাংলাদেশে রওনা দেন আমার স্ত্রী। সন্তান জন্মের পূর্বে আমার স্ত্রীকে প্রায় ৩ মাস হসপিটালে থাকতে হয়েছিল। সেই সময় প্রায় প্রতি সপ্তাহে ফোনে, ম্যাসেজ দিয়ে কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে নিয়মিত ভাবে খোজ-খবর নিতেন। প্রায় প্রতিবছর ওটোয়ার টিউলিপ ফেস্টিভেলের সময় আপু ফোন দিয়ে স্ব-পরিবারে ওটোয়া ঘুতে যাবার আমন্ত্রন দিতেন। অবিশ্বাস্য শোনাবে হয়ত, এই মানুষটির সাথে আমার কোন কোন পারিবারিক সম্পর্ক নাই, কোনদিন সরাসরি দেখাও হয় নি। অথচ কি অসাধারণ একটি আত্নিক সম্পর্ক রয়েছে। আমি নির্দিধায় বলতে পারি আমার জীবনে দেখা অন্যতম একজন পরোপকারি মানুষ সাজি আপু।
গত ৩ দিন থেকে মনটা প্রচণ্ড বিষণ্ণ যখন জানতে পারলাম সাজি আপুর স্বামী ক্যান্সরে আক্রান্ত। আরও অবাক হলাম শুনে যে ভাইয়া ইতিপূর্বে দুইবার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ও তা জয় করেছেন। এবারের ক্যান্সারটা অত্যন্ত জটিল ও চিকিৎসা খরচ নিজেদের সামর্থ্যের বাহিরে কারণ এই টাইপের ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ সরকারি চিকিৎসা বীমার আন্ডারে পরে না। সারাজীবন অন্য মানুষকে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করে যাওয়া মানুষটির বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দ্বায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সকল ব্লগারদের প্রতি অনুরোধ সারাজীবন অন্য মানুষকে নিঃস্বার্থ ভাবে সাহায্য করে যাওয়া মানুষটির নিজের প্রিয় মানুষটির সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারে আমাদের কিছু অর্থ সাহায্য। সাজি আপু নিজেই একটি GoFundMe ক্যাম্পেইন চালু করেছেন যে উদ্যোগটিকে আপনি সফল করতে পারেন যে কোন পরিমান অর্থ সাহায্যের মাধ্যমে অথবা সংবাদটি নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করে।
Mithu's Cancer Battle Fund