একজন ডাক্তারকে মানুষের স্বাভাবিক সময়ে প্রয়োজন নাই, তাঁকে প্রয়োজন মানুষের সবচেয়ে দুর্বল এবং স্পর্শকাতর মুহুর্তে। যে সময়ে মানুষ অসুস্থ থাকে, মনোবল থাকে না, নিজের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে ঠিক সেই মুহুর্তেও একজন মানুষ ডাক্তারের উপর আস্থা রাখেন। এই আস্থা অনেকটা আধ্যাত্মিক ব্যাপার। ডাক্তারের শুধুমাত্র মুখের কথাই একজন রোগীর জন্য সুস্থতার সবচেয়ে বড় ঔষুধ হতে পারে। তাই ডাক্তার এমন একটা পেশা যাকে সবাই শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে এবং বিপদের সময় একান্তভাবে পাশে পেতে চায়।
সেবা জনিত প্রায় প্রতিটি সেক্টরে আমাদের লোকবলের অভাব আছে। বিশেষ করে সরকারী চিকিৎসা বিভাগে আমাদের প্রয়োজনীয় লোকের সংখ্যা খুবই কম। তা স্বত্তেও ডাক্তার এবং নার্সদের একটা বড় অংশ চেষ্টা করেন সেবা দিতে। ভালোমন্দ তো সব সেক্টরেই আছে। সমস্যা হয়, যখন এই মন্দ অংশকে পরিবর্তন করা যায় না বা যখন পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়। কোন সেক্টরের মন্দ অংশকে দোষারোপ করার মানে এই নয় যে, ভালো অংশকেও দোষারপ করা হচ্ছে। মন্দ অংশকে পরিবর্তন করার চেষ্টার অর্থ এই নয় যে ভালো অংশকেও পরিবর্তন করা হবে। তাই যখন কোন পেশার কোন নির্দিষ্ট অংশকে সমালোচনা করা হবে, সেটার পুরো পেশার উপর গিয়ে বর্তায় না। এই ধরনের চিন্তা ভাবনা বাস চালক শ্রমিক সংস্থাগুলো করলে অশিক্ষিত বলে মেনে নেয়া যায়। কিন্তু শিক্ষিত অংশের ক্ষেত্রে এমনটা ভাবা খুবই কঠিন।
কেউ যদি তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন, তাহলে তিনি অবশ্যই দোষী। বিশেষ করে সরকারী কোন কর্মকর্তা যদি তাঁর উপর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন বা নিয়মের ব্যতয় করেন তাহলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এই ব্যাপারে তাঁকে সর্তক, শাস্তিমুলক বা আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারেন। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী দেশের প্রথম পনেরজন ব্যক্তির মধ্যে ১৩ নাম্বারে আছে সংসদ সদস্যগণ। একজন সংসদ সদস্য চাইলে সিভিল সার্জনকেও জবাবদিহীতার আওতায় আনতে পারেন। কার্যত এখানে দোষের কিছু নাই। রাজনৈতিক কারনে এবং পেশাগত সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে অনেকেই এই বিষয়টিকে নিয়ে সমালোচনা করছেন। সবচেয়ে প্যাথেটিক ব্যাপার হচ্ছে, দুইদিন আগেও যে লোক সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার না থাকা, প্রাইভেটে প্র্যাক্টিস নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, তিনি আজকে হঠাৎ করে মাশরাফী অন্যায় করেছেন বলে বিশাল বিশাল লেখা প্রসব করছেন।
যাইহোক, এরা হিপোক্রেট। এই ধরনের মানুষ থাকবেই। এদেরকে ইগনোর করতে হবে। বুঝাতে হবে, সর্যি! আমরা হিপোক্রেসি পছন্দ করি না। আজকে যদি আমাদের রাষ্টীয়ভাবে জবাবদিহীর নজির থাকত, তাহলে অনেক কিছুই পরিবর্তন হতো। সবাই সবাইকে সম্মান করবে, সবাই নিজের সম্মান রাখবে এটাই কাম্য।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ২:৫৬