পোস্টের নিচে কিছু আপডেট যুক্ত করা হয়েছে।
সামহোয়্যারইন ব্লগে সাম্প্রতিক সময়ে ভালো বিষয় ভিত্তিক ব্লগ পোস্টের প্রচন্ড খরা চলছে। খুব কম পোস্টেই ভালো আলোচনা হয়, সুষ্ঠ বিতর্ক হয়। কেবল ধর্ম ভিত্তিক পোষ্টেই মাঝে মাঝে দেখি বিতর্কের নামে চলছে কিছু হাস্যকর আলোচনা। আর এই সকল ধর্মীয় পোস্টগুলোর মান যে খুব একটা ভালো তা বলা যাবে না, হাতে গনা দুই একটা পোস্ট বাদ দিলে অধিকাংশ পোষ্টই নিম্নমানের গ্রাম্য ওয়াজ টাইপ পোস্ট। এই সকল পোস্ট ধর্মের জন্য তো বটেই, দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য কতখানি প্রয়োজনীয় সেটা মহান সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন। যেখানে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে, প্রযুক্তি এগিয়ে যাচ্ছে, ধর্মের মুল আদর্শ বজায় রেখে আধুনিকতাকে গ্রহন করা হচ্ছে, সেখানে কিছু মানুষ গৎ বাঁধা ধর্মীয় আলোচনায় মগ্ন থাকছে। এদের কেউ সমালোচনা করলে, ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝানোর চেষ্টা হচ্ছে বাকিরা ধর্ম বিদ্বেষী। একজন ব্লগারকে কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি, ধর্ম বিষয়ক পোস্টে কিছু জানতে চাইলেই তিনি তাঁকে ইসলাম বিরোধী হিসাবে ভাবছেন। অন্য কেউ হলে আমি তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতাম। কিন্তু যার কথা বলছি, তিনি তুলনা মুলক সহজ সরল বিধায় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করাই শ্রেয়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত সরলতা আর বুদ্ধিহীন প্রাণীর মগজ নিয়ে বেঁচে থাকার মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
আপনার পছন্দ হোক বা না হোক, তিক্ত বাস্তবতা হচ্ছে ধর্ম বিষয়ে বাজারে প্রচুর বই আছে, রেফারেন্স আছে। যা থেকে আপনি ধর্মীয় বিভিন্ন বিধি বিধান, ধর্মীয় বই পড়ার শিক্ষা, কোনটা জাল রেফারেন্স, কোনটা সহি রেফারেন্স, ধর্মীয় বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী সম্পর্কেও জানতে পারবেন। এইগুলো সেই সব বই থেকে হুবহু কপি করে ব্লগে দেয়ার মধ্যে কোন গুরত্ব নেই। এতে শুধু শুধু সময় অপচয় এবং এক ধরনের আবর্জনা সৃষ্টি হয়। আপনার এই সব লেখাকে ধর্ম প্রচারের স্বার্থে আপনার কষ্ট বা অবদান হিসাবে দেখার কোন সুযোগ নাই।
আপনাকে নতুন কিছু জানাতে হবে। সেই জন্য আপনাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। আপনাকে লিখতে হবে ধর্মীয় আলোকে দূর্নীতির বিরুদ্ধে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিয়মকানুন মানার গুরুত্ব সম্পর্কে। ধর্ম যে শুধু আধ্যাতিক বিষয় নয় বরং ব্যবহারিক জীবনে কিভাবে ধর্মকে প্রয়োগ করে আপনি আধুনিক হবেন সেটা সম্পর্কেও লিখতে হবে। যেমন ধরুন ইসলাম ধর্মে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা থাকা সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এটা তো শুধু নিজের সম্পর্কে না, আপনার আশেপাশেও পরিষ্কার রাখা জরুরী। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা মানে শুধু মাত্র নামাজের আগে বা কোরান শরীফ পড়ার সময় ওযু করা না। রাস্তা ঘাটে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা, থুতু না ফেলা, আবর্জনা না ফেলা ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা আপনার ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। ধর্মে এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট নীতিমালা আছে। একজন ব্যক্তি যদি তার জীবনে তা অনুসারিত ধর্মের বিভিন্ন নিয়ম কানুনের বাস্তবিক প্রয়োগ ঘটাতে না পারে, তাহলে তিনি শুধু মাত্র নাম কা ওয়াস্তে ধার্মিক।
ধর্ম বিষয়ে যারা লিখেন তাদের উচিত দূর্নীতি নিয়ে লেখা। ধর্ম কিভাবে দূর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারে, সেই সম্পর্কে জানানো। এই ক্ষেত্রে সাধারন মানুষদের চাইতে এগিয়ে আসতে হবে দেশের মসজিদের ইমাম, এতিম খানার ম্যানেজমেন্ট, মন্দির বা গীর্জার পুরোহিতদের। তাদেরকে উচ্চ কন্ঠে বলতে হবে – অনুগ্রহ করে এই মসজিদে কেউ দুর্নীতির টাকা দিবেন না, অন্যায়ভাবে অর্জন করা অর্থ সম্পদ আমাদের প্রয়োজন নেই। এটা মুখে বলতে হবে, প্রয়োজনে লিখেও দিতে হবে। তাই এই বিষয়ে ব্লগে লেখালেখি শুরু করতে হবে। শুধুমাত্র ধর্মের বানী প্রচার করে সব সহি শুদ্ধ করে ফেলতে পারলে তো আর কথা ছিলো না। ব্লগাররা যে কোন অন্যায়ে আগে এগিয়ে এসেছে, প্রতিবাদ করেছে। তাই ধর্মীয় আদর্শ দিয়ে কিভাবে দূর্নীতি প্রতিরোধ করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। আপনার এলাকায় আপনি দায়িত্ব নিয়ে শুরু করুন, অন্য এলাকায়ও দেখবেন তার প্রভাব পড়েছে। মোটকথা ব্লগে আপনি লিখবেন মানুষকে সচেতন করবেন, ব্লগের একটা লেখা পড়ে মানুষ যেন বুঝে – যারা ব্লগারা তাঁরা সবাই পড়ালেখা জানা মানুষ, এরা সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা মানুষ। এরা ধর্ম ভালো বুঝে। ধর্মকে অন্ধের মত সমর্থন করে না।
দেখা যাবে আমার এই লেখার এই অংশটুকু পড়ে কয়েকজন ব্লগার ধর্মকে ব্যবহারিক জীবনে আনার উদহারন হিসাবে পোস্ট দিচ্ছেন – সাপে কামড় দিয়ে কোন দোয়া পড়বেন, যৌবনের শক্তি বাড়াতে কোন দোয়া পড়বেন কিংবা স্ত্রীকে বশে আনতে কোন দোয়া পড়বেন। এবং এমনটাই হওয়ার সম্ভবনা ৯০%। আর কারা এমনটা দিতেন পারেন তাদেরকেও অধিকাংশ মানুষ চিনেন বলেই আমার বিশ্বাস।
এরপর যারা ধর্ম নিয়ে নিয়মিত লিখেন, তাদের লিখতে হবে আমাদের ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন সম্পর্কে। এটার অর্থ এই না, যারা ধর্ম বিষয়ে পড়বেন, তাদেরকে বিজ্ঞানে বা ভুগোলে পন্ডিত হতে হবে। নুন্যতম বিজ্ঞান ও ভুগোল সম্পর্কে জানতে হবে, তা না হইলে, মিশর থেকে কুয়েত যাওয়ার সময় আপনি হিমালয় দেখার গল্প শুনিয়ে এবং রকেটে করে আমেরিকা যাবার গল্প করে ধর্মকে হাস্যকার বানাবেন। ধর্ম শিক্ষা যদি আধুনিক না হয়, তাহলে যারা ধর্ম শেখাবেন বা প্রচার করবেন, তারাও মানুষকে ভুল শেখাবেন। এইভাবে ভুল শিখতে শিখতে তা একসময় মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে বা ইতিমধ্যে করছেও। সবার যেমন ধর্মের বেসিক দরকার, তেমনি সকল মানুষেরও বিজ্ঞানের বেসিক দরকার। যারা এই নিয়ে হট্টগোল করবেন, তারা শিক্ষিত হলেও মুর্খ। এই ধরনের ক্যাটাগরী সবচেয়ে বিপদজনক ক্যাটাগরীর মধ্যে অন্যতম।
একই কথা ব্লগের যারা তথাকথিত ধর্ম বিরোধী, ধর্ম বিদ্বেষী আছেন তাদের সম্পর্কেও। নাস্তিকতা সম্পর্কে তাদের একমাত্র ধারনা –সৃষ্টিকর্তাকে গালি দেয়া, যারা ধর্ম বিশ্বাস করে তাদের আবেগ ও মুল্যবোধকে চুড়ান্ত অসম্মান প্রদর্শন করা এবং পৃথিবীর সকল সমস্যার মুলে ইসলাম ধর্মকে ধরে নিয়ে ভয়াবহ বিদ্বেষ ছড়ানো। নাস্তিকতা এত হালকা বিষয় নয়। নাস্তিকতা একটি দর্শন। যুক্তির সাথে বিশ্বাসের লড়াই। অনুগ্রহ করে একটু পড়াশোনা করলেই জানতে পারবেন যে ধর্মের সমালোচনা আর নাস্তিক্যবাদ এক জিনিস নয়। বিষয়টা সহজে বুঝার জন্য উইকিপিডিয়ার আশ্রয় নিতে পারেন। সেখানে মোটামুটি সহজবোধ্যভাবে বলা আছে।
ব্লগে আমরা মুক্তমত প্রকাশের নামে ভয়াবহ ধর্ম বিদ্বেষী পোস্ট দেয়াকে সমর্থন করি না। এর অর্থ হচ্ছে, আপনি মুক্তমত প্রকাশের নামে ঘৃণাবাক্য ছড়াতে পারেন না। হেইট স্পীচ কখনই ফ্রিডম অব স্পীচ নয়। আপনি ধর্ম মানেন না, ধর্মের বিখ্যাত ব্যক্তিদের মানেন না, সেটা আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু আপনি যখন কোন ধর্মীয় ব্যক্তিকে চুড়ান্ত অসম্মান করবেন, কোন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থের উপর চা বা কফির কাপ রেখে ছবি তুলে সাধারন ধর্ম বিশ্বাসী মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলা বা আহত করাকে যদি মুক্তমত বা স্বাধীন মত প্রকাশ ভাবেন তাহলে সেটা চুড়ান্ত ভুল। আমরা এই ধরনের বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি না। যিনি এই ধরনের হাস্যকর কাজ করছেন, তিনি নিজেকে নিজের অলক্ষ্যেই হাস্যকরভাবে অপরিপক্ক বানিয়ে ফেলছেন।
পাশাপাশি কেউ যদি কোন ধর্ম বিষয়ে স্পর্শকাতর কোন তথ্য প্রকাশ করেন, তাহলে সেই ক্ষেত্রে তাঁকে উভয় পক্ষের কাছে গ্রহনযোগ্য কোন তথ্যসুত্র দিতে হবে। কারন বাজারে অনেক প্রচলিত মিথ্য তথ্যপূর্ন বই থাকার প্রমান বিশেজ্ঞরা পেয়েছেন। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাঃ এর মৃত্যূর পর ইসলামের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বিভিন্ন দন্দ্বের কথা শোনা যায় যা শুধু মাত্র শিয়াদের কর্মকান্ড হিসাবে এক শ্রেনীর মানুষ চালিয়ে দিতে চায়। আমার জানা মতে, ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কোরানে শিয়া সুন্নি বিভাজন বা মাহজাব সমর্থনে কোন সুস্পষ্ট দলিল নেই, বা খলিফা নির্বাচন নিয়ে প্রক্রিয়া বা আদেশ নেই। এই সকল বিষয় নির্ধারিত হয়েছে হাদীস দিয়ে। ফলে এই সকল বিষয় নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তুলে বা এই সকল বিষয় জানতে চায় সেটা অন্যায় চাওয়া নয় বলেই আমার বিশ্বাস। আমি মনে করি, ইসলামের স্বার্থেই এই সকল বিষয়ে পরিষ্কার আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। তাই এই সকল বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। আর কেউ যদি ইসলামের কোন অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে চায় এবং তাঁকে যদি কেউ ইসলাম বিদ্বেষী বা নাস্তিক বা কোন ধরনের অন্যায় টাগিং করেন, সেটা হবে চুড়ান্ত ধরনের অন্যায়। আমরা এই ধরনের অন্যায় কাজ সমর্থন করব না।
আমি আশা করব, এই ধরনের আলোচনা যদি হয়, তাহলে সকলেই গ্রহনযোগ্য কোন রেফারেন্সের ভিত্তিতে আলোচনা করবেন। কোন অখ্যাত বা অগ্রহনযোগ্য রেফারেন্স দিয়ে অহেতুক বিতর্ক গ্রহনযোগ্য হবে না।
এরপর আসা যাক, বাকি সাধারন পোস্ট সম্পর্কে। ব্লগে সুলিখিত রাজনৈতিক লেখা তেমন একটা আসে না। আর যেগুলো আসে, সেগুলো ব্লগ দেখে হয়ত আমরা প্রকাশ করছি, কিন্তু কোন সুস্থ আলোচনায় এই ধরনের লেখা প্রকাশযোগ্য না। অথচ এই ধরনের লেখা যারা লিখছেন তারা বিভিন্ন মন্তব্যে দাবী করছেন, ব্লগাররা জাতির সেরা সন্তান, ব্লগাররা জাতির বিবেক, ব্লগাররা জাতিকে এগিয়ে নিবে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করে, শব্দ চয়ন করে ব্লগাররা কি সত্যি দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে পারবে?
আরেক শ্রেনী আছে যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গেছেন নবী রাসুলদের পর্যায়ে। তাঁকে নিয়ে কোন সমালোচনা করা যাবে না, তাঁর কোন কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করা যাবে না ইত্যাদি। কেউ মানুক বা না মানুক বাস্তবতা হচ্ছে, নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিসংবিদিত এবং তিনি আমাদের জাতির পিতা। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাঙালির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্যে অবিচলিত, বিরামহীনভাবে কাজ করেছেন তিনি, দিনের পর দিন তিনি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ফলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি দেশের মানুষের সম্মান ও ভালোবাসা চিরজীবনই থাকবে তেমনি তাঁর শাসনামলের অনেক ব্যর্থতার কথাও মানুষ স্মরন রাখবে। কতিপয় গো-ছানাদের অতিরিক্ত কচলাকচলি এবং কিছু ছাগ শিশুদের ম্যাতাকারে প্রকৃত নেতাদের কিছুই যায় আসে না। মুজিবের মত নেতা বার বার জন্মায় না।
কিছুদিন আগে আমি একটি পোস্ট দিয়েছিলাম মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে। সেখানে আমাকে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, যে দশ বছর আগের স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ আর বর্তমানে মত প্রকাশের সুযোগ কি এক? এর উত্তর সহজ ভাষায় দেয়া কঠিন। তবে কিছুটা সহজ করে বলার চেষ্টা করলে বলতে হবে, আমার মত প্রকাশ যতক্ষন পর্যন্ত না ক্ষমতার সর্বোচ্চ শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তির জন্য অস্বস্তি বা বিব্রত হবার কারন হয়ে না দাঁড়ায়, ততক্ষন পর্যন্ত আমি স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারছি। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলেই বিপদ।
আমাদেরকে প্রকাশযোগ্য ভাষায় এই ধরনের সিলেক্টেড মত প্রকাশের ভয়াবহতা নিয়ে লিখতে হবে। আপনি উত্তেজনার বসে গালাগালি ও প্রকাশ অযোগ্য শব্দ দিয়ে যদি কিছু লিখেন আর সেটা যদি মুছে দেয়া হয়, তখন ব্লগ অথোরিটিকে গালাগালি করতে পারেন। আমরা নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো।
আমি প্রচন্ড হতাশার সাথে লক্ষ্য করছি, আমাদের নতুন বা মোটামুটি বয়সের ব্লগারদের নিজেদের লেখার মান উন্নয়নে কোন আগ্রহ নেই। একটা এক ঘেয়েমীর ছাপ সর্বত্র। যেমন ধরুন একজন ছবি ব্লগ দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে দিনের পর দিন শুধু একই ধরনের ছবি, দুই চারটা ছবি দিয়েই শেষ! পোস্ট পড়ার কোন আগ্রহ পাই না। সম্ভব হলে আপনারা আগের ছবি ব্লগগুলো দেখবেন, তাহলে কিছুটা হলেও ধারনা পাবেন।
ফিচার পোস্ট এখন তো তেমন আর আসে না। বাঘা বাঘা ফিচার রাইটার সব এখন ব্যস্ত। তারা প্রচুর দিয়েছেন এই সামহোয়্যারইন ব্লগকে। তাদের কথা আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরন করি। দুই একজন যারা ফিচার লেখার চেষ্টা করেছেন তারা অনেকেই সামহোয়্যারইন ব্লগারদেরই লেখা অন্য প্ল্যাটফর্ম থেকে কপি করে এনে আবার এখানে নিজ নামে প্রকাশ করছেন। এটা দুঃখজনক, হতাশজনক। একটা ফিচার লেখার জন্য যে ধরনের পড়াশোনা করা প্রয়োজন, বই পড়া প্রয়োজন, আমরা কি তা পড়তে পারছি? অনুগ্রহ করে যদি কেউ ফিচার লিখতে চান, তাহলে সেই সম্পর্কে গুগলে গিয়ে সার্চ করে দেখবেন যে সামহোয়্যারইন ব্লগে কোন লেখা আছে কি না। সেটা আগে পড়ে তারপর অন্য প্ল্যাটফর্মের লেখাগুলো পড়বেন।
ব্লগে মানসম্মত রম্য, স্যাটায়ার তো এখন দুষ্প্রাপ্য মাছের মত বিরল। ভ্রমন পোস্ট তো দেশি কই মাছ! আমি জুন আপাকে কৃতজ্ঞতা জানাই, তিনি আমাদেরকে এখনও দারুন দারুন সব লেখা দিয়ে যাচ্ছেন। জুন আপা যদি বই বের করেন, সেটা হবে বর্তমান সময়ে সেরা ভ্রমন কাহিনীর ব্লগ।
আর রেফারেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে ব্লগারদের আলসেমিটি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। আমি বার বার করে অনুরোধ করছি, আপনারা সঠিক রেফারেন্স প্রদান করুন। কোন পোস্টের শেষে অনলাইন থেকে সংগৃহীত বা শুধু সংগৃহীত লিখেই সবাই খালাস। রেফারেন্স দেয়া নিয়ে ব্লগার আর ইউ এর একটি পোস্টে সম্প্রতি বেশ আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমি কিছুটা অসম্পূর্ন তথ্য বা ভুল তথ্য প্রদান করেছিলাম যা প্রিয় ব্লগার সোনাবীজ ভাই সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সেই হিসাবে বলা যায়ঃ -
অনুগ্রহ করে আপনি পোস্টে কোন ছবি ব্যবহার করলে, সেই আলোকচিত্রী শিল্পীর নাম, যে সাইটে প্রকাশিত হয়েছে তার নাম পোস্টের শেষে লিখে দিন। আমরা কিছু বিশেষ করে কারনে সরাসরি হাইপার লিংক প্রদান করাকে উৎসাহিত করি না। যদি ছবির কোন কপিরাইট না থাকলেও যে সাইট থেকে সংগ্রহ করেছেন তা উল্লেখ্য করে দিন। পাশাপাশি, কোন ফিচার বা কোন পোস্ট তৈরীতে যদি আপনি অন্য কোন লেখক, বই, সাইট বা অন্য যে কোন কিছুর সাহায্য নিয়ে থাকুন না কেন, তা অনুগ্রহ করে পোস্টে উল্লেখ্য করে দিন এবং যারা জানেন না, তাদেরকে ভালো করে বুঝিয়ে বলুন। এর পরেও যদি কেউ বার বার ইচ্ছাকৃত ভুল করেন, তাহলে তার পোস্ট প্রকাশের সুবিধা আমরা নিয়ন্ত্রন করব। সেই ক্ষেত্রে নু্ন্যতম তিন সাপ্তাহ আগে কেউ পোস্ট প্রকাশের সুবিধা পাবেন না।
গল্প, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে আমার আসলে তেমন কিছু বলার নেই। এটা কমিউনিটি ব্লগ, এখানে সবাই ভালো লিখবেন এমন কোন কথা নেই। এখানে চাইলে সমরেশ মজুমদারও একাউন্ট খুলে লিখতে পারেন আবার হিরো আলমও চাইলে লিখতে পারেন। আমাদের চাওয়া ভালো ভালো লেখকের লেখা পড়ে নতুন লেখকরাও একদিন ভালো লিখবেন।
গত বছর ব্লগের ভবিষ্যত ও মডারেশন নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হয়েছিলো। আমরা ভেবেছিলাম, এতে হয়ত ব্লগে নবজাগরন ঘটবে, কিন্তু আফসোসের বিষয়, ঘুরে ফিরে সবাই নাম লিখিয়েছেন - বাকি খাতায় মানে এখন কোথাও কেউ নেই। দিন শেষে বিশাল হাভেলীর বৃদ্ধ কেয়ার টেকার হিসাবে আমিই আছি। নতুন মেহমানের অপেক্ষায়। যাইহোক, যারা ব্লগে মোটামুটি একটা দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন, আশা করি তাঁরা নতুন ব্লগারদেরকে সাহায্য করবেন ভালো পোস্ট লিখতে। নিয়ম সম্পর্কে জানাবেন। পিঠ চাপড়াচাপড়ি ব্লগিং বাদ দিয়ে সত্যি সমালোচনা করবেন। নিত্য নতুন বৈচিত্রময় বিষয়ে লিখুন। কপি করা পোস্ট বাদ দিয়ে নিজের আগ্রহের জায়গা থেকে লিখুন, নিজে যা বুঝেন, যতটুকু বুঝেন, তাই লিখুন।
ব্লগ অনেক মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে ভিজিট করা যায় না। আমরা বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোন ফলাফল না পেয়ে হতাশ। যদি এই বিষয়ে কেউ কোন সাহায্য করতে পারেন, তাহলে ব্লগ টিমের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে,
শুভ ব্লগিং।
ব্লগ পোস্টে রেফারেন্সের বিষয় নিয়ে বার বার জানানো হলেও অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। তাই এখানে পোস্টে রেফারেন্স যুক্ত করার নিয়ম সংযুক্ত করা হলোঃ
১। কোন সংবাদপত্র বা কোন ওয়েব সাইট বা কোন বই থেকে যদি কেউ কোন তথ্য বা ছবি তার নিজস্ব পোস্টে সংযুক্ত করেন, তাহলে অবশ্যই উক্ত সংবাদপত্র/ ওয়েব সাইট/ বই এর নাম রেফারেন্স হিসাবে উল্লেখ্য করতে হবে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোন লেখা বা ছবি যার লেখক বা আলোকচিত্রী শিল্পীর নাম উল্লেখ্য থাকবে, আপনার পোস্টে সেই সংবাদপত্রের নাম সহ লেখক বা আলোকচিত্রী শিল্পীর নাম উল্লেখ্য করতে হবে।
যদি কেউ এমনটা করতে ব্যর্থ হন, আমরা নোটিস দিবো। এর পরেও যদি পোস্টে প্রয়োজনীয় রেফারেন্স যুক্ত করতে কেউ ব্যর্থ হন, তাহলে সেই ক্ষেত্রে আমরা পোস্টটি সরিয়ে দিবো।
২। রেফারেন্স হিসাবে যদি কেউ কোন বইয়ের নাম প্রদান করেন, তাহলে অবশ্যই বইটির নাম, লেখক এবং সম্ভব হলে পাবলিকেশনের নাম উল্লেখ্য করতে হবে। পাবলিকেশনের নাম এই কারনে প্রয়োজন - কোন কারনে যদি কেউ বইটি সন্ধান করে বা বইটির অস্তিত্ব আদৌ আছে কি না যদি তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে, তখন পাবলিকেশনের নাম থাকলে তা খুঁজে বের করতে সুবিধা হয়।
৩। ছবি সুত্র প্রদানের ক্ষেত্রে কেউ যদি উল্লেখ্য করেন 'গুগল' তাহলে তা গ্রহনযোগ্য হবে না। কারন গুগল একটি সার্চ ইঞ্জিন। গুগল কোন ছবি প্রকাশ করে না। আপনি গুগল সার্চ করে যে ছবিটি সংযুক্ত করতে চাইবেন, সেই ছবির নিচে ছবিরটির মুল সোর্স দেখাবে। আপনাকে সেই সোর্স মাধ্যমের নাম উল্লেখ্য করতে হবে।
যেমন আপনি ঢাকা শহর গুগলে সার্চ দিলে অনেক ছবি আসবে। ধরুন আপনি যে ছবিটি পছন্দ করলেন, তা ডেইলি স্টারে প্রকাশিত হয়েছে। এই ক্ষেত্রে আপনি ছবিটিতে ক্লিক করার পর দেখবেন, যে সেখানে ফটোগ্রাফারের নাম দেয়া আছে। যদি আপনি এই ছবিটি ব্যবহার করতে চাই, সেই ক্ষেত্রে পোস্টে ছবিটি ব্যবহার করার পর পোস্টের নিচে উল্লেখ্য করতে হবে,
ছবি সুত্রঃ দৈনিক ডেইলি স্টার, ফটোগ্রাফার, আনিসুর রহমান।
আর যদি কোন পত্রিকায় ফটোগ্রাফারের নাম না উল্লেখ্য থাকে, তাহলে শুধুমাত্র উক্ত পত্রিকার নাম জানাতে হবে।
রেফারেন্স দিলে কেউ ছোট হয়ে যায় না, কারো পোস্টের মান করে যায় না, বরং পোস্ট এবং পোস্ট দাতা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়।
আমার এই পোস্টকে অনেকেই অনেক ভাবে দেখছেন। কেউ ভাবছেন, এই পোস্ট দিয়ে ব্লগারদের অপমান করা হয়েছে কিংবা ব্লগারদের চিন্তাভাবনায় শিকল টানা হয়েছে। আবার অনেকেই ভাবছেন এই পোস্টের পর অনেকেই লিখতে ভয় পাবে।
প্রথমত, আমার কাছে এই ধরনের কথাবার্তা খুবই অযৌক্তিক মনে হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, লেখার মান ভালো করার জন্য, ভালো পোস্ট প্রদান করার জন্য, একটি গাইড লাইনের প্রয়োজন। এই পোস্ট সেই গাইড লাইনের কিছুটা হলেও ভুমিকা পালন করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
তৃতীয়ত, এই পোস্টে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পোস্ট কেমন হতে পারে সেই ব্যাপারে ধারনা দেয়া হয়েছে। গৎবাঁধা এবং অপ্রয়োজনীয় পোস্ট ( মডারেশন বা ব্লগ টিমের বিবেচনায়) প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে।
চতুর্থ, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই - আপনি আপনার পছন্দ সই বিষয়ে লিখুন। যা বুঝবেন, যতটুকু জানেন নিজে থেকে লিখুন, প্রয়োজনে ভালো বই, পত্রিকা, ওয়েব সাইটের সাহায্য নিন। সব কিছুর বিনিময়ে আমরা আপনার মুল্যায়ন, আপনার মতামত জানতে চাই। ব্লগ লেখার নামে কপিপেষ্ট করবেন না। কেউ যদি কপি পেষ্ট পোস্ট করে তা উল্লেখ্য না করেন, সেই ক্ষেত্রে পোস্ট দাতার পোস্ট সুবিধা ব্যবহত হতে পারে।
পঞ্চম, বিভিন্ন পোস্টে আপনারা মত প্রকাশ করুন, আপনাদের মতামত দিন। ভালো না লাগলে স্পষ্ট ভাষায় বলুন ভালো লাগে নি। ভালো লাগলে জানান - ভালো লেগেছে। কারন পাঠকদের সত্যিকার মতামত ছাড়া ভালো লেখক তৈরী হয় না।
আমার ব্যক্তিগত জীবনে দেখেছি - পিঠ চাপড়া চাপড়ির কমেন্টের ফলে উৎসাহিত হয়ে বই প্রকাশ করে, একটা বইও বিক্রি করতে পারেন নি জনৈক ব্যক্তি। উল্টো হয়েছেন হাস্যরসের শিকার।
সবাইকে আবারো ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:২৫