কয়েকদিন ধরে ব্লগ বেশ উত্তপ্ত। কেন উত্তপ্ত, কি কারন এবং কি তাহার সমাধান এই বিষয়ে আপাতত আর কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না। সত্যি বলতে সামগ্রিক বিষয়টি যথেষ্ট বিরক্তির উদ্রেক সৃষ্টি করেছে। মডারেশন টিমের সহনশীলতাকে অনেকেই দুর্বলতা হিসাবে দেখছেন আবার অনেকেই পান থেকে চুন খসলেই নিজেকে সম্মানহারা মনে করছেন। উভয়ক্ষেত্রে বিষয়টি দুঃখজনক। লেবু বেশি টেপার ফল কখনই মিষ্টি হয় না। তাছাড়া ব্লগ স্কুল কলেজ নয়, আমরা এখানে কেউ কারো শিক্ষক নই। আমি আশা করব, আমাদের সম্মানিত ব্লগাররা নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে বুঝবেন এবং ব্লগের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সহযোগিতা করবেন। মডারেশন টিম ব্লগ নিয়ম প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্লগারদের প্রতি সহনশীলতা বাদ দেয়, তাহলে আমাদের অনেকের জন্য ব্লগিং বেশ কঠিন হয়ে যাবে। পাশাপাশি, আমি কিছু কিছু ব্লগারের ক্ষেত্রে খুবই আপত্তিজনকভাবে দ্বিচারিতা লক্ষ্য করছি। এই ধরনের দ্বিচারিতাকে 'সহজ সরল মনের অধিকারী' হিসাবে ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ নেই।
আরেকটি বিষয়। গত ১৯ তারিখ থেকে ব্লগের নির্বাচিত পাতাটি সাময়িক বন্ধ আছে, আগামী দুই একদিনের মধ্যে তা পুনরায় চালু হবে। এটা ব্লগের প্রতি ব্লগ কর্তৃপক্ষের হতাশা থেকে নয় বরং কারিগরী ত্রুটি থেকেই সৃষ্টি। আমরা ধারনা করেছিলাম, এই সমস্যাটি আরো আগেই সমাধান হবে, তাই আলাদা করে কোন নোটিস প্রদান করা হয় নি।
অনেক কঠিন কঠিন কথা বলে ফেললাম, এবার কিছু আনন্দের কথা বলি। ব্লগার সোহানী আপা তাঁর বই বিক্রির টাকার একটা অংশ আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং অনুরোধ করেছেন দরিদ্র শিশুরদের জন্য যেন এই ফান্ডটি খরচ করা হয়। আমি অচিরেই এই বিষয়ে একটি আলাদা পোস্ট দিয়ে এই সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রকাশ করব। পাশাপাশি, আপাকে ধন্যবাদ এত চমৎকার একটি মানবিক উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য। আমাদের ব্লগাররা সব সময় প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে বিভিন্ন মানবিক কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আশা করি ভবিষ্যতেও থাকবেন।
এবার মুল পোস্টে আসি। ব্লগেও গরম, বাইরেও গরম। ভাবলাম এই গরমে কিছু আনন্দের স্মৃতিচারন করি। এতে যদি গরম কিছুটা কমে তাহলে সেটা খুবই উপভোগ্য হবে। আমি আমার এই মজার অভিজ্ঞতাগুলো কয়েকটি শিরোনামে আলাদা আলাদা করে লিখলাম। যদি আপনাদের পড়ে ভালো লাগে, তাহলে সেটাই হবে আমার একমাত্র প্রাপ্তি।
ঈদ যাত্রাঃ
আমার মা আর বাবা হচ্ছেন দুসম্পর্কে মামাতো ফুপাতো ভাই বোন। আমি খুব ছোট থাকতেই আমার দাদাদাদী মারা যান। ফলে আমার বাবাকে আমার নানানানী অসম্ভব আদর ও স্নেহ করতেন। অবশ্য আমার বাবা বাড়ির বড় জামাই হিসাবে যতটা না আদর ভালোবাসা পেয়েছেন, তারচেয়ে বেশি পেয়েছেন ভাগ্নে হিসাবে। আমার মামা, খালারা সবাই ঢাকায় আমাদের বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছেন এবং তাদের বিয়ে শাদীর পর সবাই আমরা একই বিল্ডিং এর বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকতাম। ঈদ আসলে আমরা দলবেঁধে বাড়িতে রওনা হতাম। ঢাকা থেকে ১৫/২০ জনের একটা বিশাল দলবল নিয়ে এক সাথে গ্রামে যাত্রা ছিলো আমাদের জন্য খুব আনন্দের একটা উপলক্ষ।
যেদিন বাসায় আব্বা ঘোষনা দিতেন আমরা অমুক দিন বাড়িতে যাচ্ছি, সেদিন থেকে আমাদের মনে একটা চাঞ্চল্য সৃষ্টি হতো। আমরা দিন গুনতাম, কবে সেই কাংখিত দিন আসবে। দেখা যেত, গ্রামে যাওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই আমরা সবাই এক বাসায় চলে আসছি। গাদাগাদি করে ঘুমাচ্ছি, খাওয়া দাওয়া করছি। এক বাসায় ইফতার তো আরেক বাসায় সেহেরি!
যখন বেশ ছোট ছিলাম, তখন ট্রেনে বাড়িতে যেতাম। আমার মনে পড়ে, খুব ভোরে আমাদের ট্রেন ছাড়ত। সকাল সাড়ে ছয়টায়। এই উত্তেজনায় রাতে আমার কখনই ঘুম আসত না। আমি সেহেরী করেই রেডি। আব্বা আম্মা হাসতেন। আমরা বেবী ট্যাক্সি বা রিকশায় করে দল বেঁধে কমলাপুর স্টেশনে যেতাম। তখন অবশ্য আমাদের পরিবারের সদস্য এত বেশি ছিলো না। সব মিলিয়ে ৭/৮ জন। আগের দিন বাবা এলাকার পরিচিত বেবীটেক্সি ড্রাইভারদের বলে রাখতেন। সকাল বেলা যখন বারান্দা থেকে শুনতাম যে বেবী ট্যাক্সি চলে এসেছে, আমি দৌড়ে নিচে নেমে গিয়ে বেবী টেক্সিতে বসে থাকতাম, কখন স্টেশনের দিকে রওনা হবো। স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনটা দেখতে পেলেই বুকের হার্টবিট বেড়ে যেত। ট্রেনটা যখন হুইসেল দিয়ে ছাড়ত, তখন একটা অদ্ভুত আনন্দ হতো। কি অদ্ভুত ছেলেমানুষী আচরন! এখন ভাবতেই হাসি পায়। অথচ যদি ভেবে দেখি, এইগুলোর আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতি।
আব্বা মাঝে মাঝে খুব মজার কাজ করতেন। একবার রোজার ঈদের সময় আব্বা ব্যবসায়িক কাজে খুব ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের গ্রামে যাওয়ার সময়টা ছিলো অনিশ্চিত। আমি অফিসে কাজ করছিলাম, হঠাৎ আব্বা ফোন দিয়ে বললেন, তুমি আগামীকাল হাফবেলা ছুটি নিয়ে নাও। আগামীকাল দুপুরে আমরা গ্রামে রওনা হবো। বড় হয়ে যাওয়ার পরেও কেন যেন আব্বার কথা শুনে পেটের ভেতর একটা অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করলাম। পরদিন অফিসে খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলাম। চারিদিকে ঈদের ছুটির একটা আমেজ। সেদিনই সম্ভবত শেষ কর্মদিবস ছিলো। দুপুর দুইটায় আব্বা ফোন দিয়ে বললেন, তুমি বাসায় আসো, একটু ঝামেলা হয়েছে।
আমি মহা দুঃশ্চিন্তায় বনানী থেকে এক প্রকার উড়ে কলাবাগানের বাসায় এলাম। এসে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বা কি ঝামেলা?
আব্বা হাসিমুখে বললেন, তেমন কিছু না। আমাদের সাথে আরো কয়েকজন যাবে। মালপত্র এক গাড়িতে জায়গা হচ্ছে না, তুমি তোমার মেঝ খালার গাড়িটায় মালপত্র ভরে চালিয়ে নিয়ে আসো।
মেঝ খালার গাড়ির কথা শুনে আমি মনে মনে প্রমোদ গুনলাম। ইহা প্রাগৈতিহাসিক আমলের ম্যানুয়াল গিয়্যার সমৃদ্ধ টয়োটা ৯০ এসই লিমিটেড গাড়ি। জীবনে একবার ভুল করে, নিজের ড্রাইভিং দক্ষতা দেখাতে গিয়ে খালার এই গাড়িটি আমি চালিয়ে কলাবাগান থেকে মোহাম্মদপুর গিয়েছিলাম। ব্যাস! সেই থেকে এই গাড়ি চালানোর দায়িত্ব আমার। কারন প্রথমত ম্যানুয়াল গিয়্যার তেমন কেউ চালাতে পারে না। দুই এই গাড়িটির প্রথম গিয়ার তেমন কাজ করে না, এই গাড়িটি সেকেন্ড গিয়্যারে কাজ করে এবং আরো বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করলে তা আপনাকে অসীম সার্ভিস প্রদান করবে। কোন ড্রাইভার এই হ্যাপা নিয়ে গাড়ি চালাবে না। একবার গ্রামে যাওয়ার সময় কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে প্রায় ঘন্টাখানেক জ্যামে আটকে থেকে আমার খালার ড্রাইভার প্রায় তাৎক্ষনিকভাবে চাকরি ছেড়ে চলে গিয়েছিলে।
যাইহোক, যেতে যেতে ইফতারির সময় হয়ে গেলো। আমার বাবা আর মামাকে দেখলাম রাস্তার পাশে একটা মাঠের মধ্যে বিশাল আয়োজন করে চাদর বিছাচ্ছেন। আশেরপাশের ছেলেপেলেরা বেশ উৎসাহ নিয়ে ব্যাপারটা দেখছেন। কয়েকজনকে ডাক দিলাম আমাদের সাথে ইফতারের জন্য। তারা সবাই চলে এলেন। আসলে আগে মানুষের মনে বেশি সংকীর্নতা ছিলো না। সবাই সহজ সরল ছিলেন। কেউ বাসা থেকে দৌড়ে কলের ঠান্ডা পানি আনলেন, কেউ বা আনলেন মুড়ি। আমার বাবা হয়ত এমন কিছু আগে থেকে পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই সেইভাবেই তিনি ইফতার আয়োজন করেছেন। মাশাল্লাহ আমাদের জন্য যে ইফতার ছিলো, সেই ইফতার দিয়ে প্রায় আরো ১০/১২ জন মানুষ অনায়াসে খুব ভালোভাবে ইফতার সম্পন্ন করতে পারলো।
সবার সাথে ইফতার করে, পাশের মসজিদে নামাজ পড়ে, ফেরার সময় ঐ বাড়িতে আমাদের দাওয়াত গ্রহন করে সবাই ধীরে সুস্থে আবার রওনা হলাম।! এইগুলো ছিলো আমাদের ঈদ আনন্দ! আমাদের ঈদে বাড়ি যাত্রা!
নতুন চাকরীঃ স্যার কই?
আমার একজন সিনিয়র সহকর্মী একটি নামকরা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য হিসাবে যোগদান করলেন। তাঁর অধীনে আমি সরাসরি কাজ না করলেও উপচার্য অফিসের মুখপাত্র হিসাবে তাঁর সাথে আমার বেশ অনেকগুলো ছোট বড় প্রজেক্টে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিলো। তিনি ছিলেন খুবই করিৎ কর্মা একজন ব্যক্তি, অপ্রয়োজনীয় বুর্যোক্রেসীকে তিনি ঘৃণা করতেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি অনেকের বিরাগভাজন যেমন হয়েছেন, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের কাছেও প্রিয় ছিলেন।
তো যাইহোক, তিনি নতুন প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেই আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তখন বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি আর গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ স্যার একদিন ফোন দিয়ে বললেন, এ্যাই! তুমি কই? আমার অফিসে এখনই আসো
আমি ভেবেছি, স্যার বুঝি এমনিতেই দেখা করতে ডেকেছেন। আমি খুবই সাধারনভাবে নন ফরমাল ওয়েতে তাঁর অফিসে গেলাম। গিয়ে দেখি সর্বনাসের চুড়ান্ত! বোর্ড মিটিং রুমে তিনি বসে আছেন সাথে বোর্ড অব ট্রাস্টির লোকজন। আমাকে দেখেই একটা কটমট দৃষ্টি দিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলেন। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি একে আমাদের চট্রগ্রাম ক্যাম্পাসের জন্য নিয়োগ দিতে চাই। ও দীর্ঘদিন প্ল্যানিং এন্ড ডেভলেপমেন্ট বিভাগে কাজ করেছে, আই ওয়ান্ট হিম।
সবাই বললেন, ওয়েল! আপনাকে আমরা নির্বাচন করেছি। আর আপনি যাকে নির্বাচন করবেন তার ব্যাপারে সেই হিসাবে আমাদের কোন আপত্তি থাকার কথা না। তবে যাই করেন না কেন, কাজ দ্রুত শুরু হওয়া চাই। আর একটা বিষয়, আপনি যে কাজের জন্য একে পাঠাচ্ছেন, ওর বয়সটা বেশি কম হয়ে যাচ্ছে না? আরো সিনিয়র কাউকে দায়িত্ব দিলে ভালো হত না?
স্যার বললেন, আমার কাছে কাজটাই মুখ্য। বয়স দিয়ে কি হবে? ইতিমধ্যে তো বেশি বয়সের একজনকে আমরা রেখে দেখেছি। কোন ফিডব্যাক পাচ্ছি না।
আমার সামনেই এই সব আলাপ হচ্ছে। আমি মাননীয় স্পীকার হয়ে সকলের দিকে চেয়ে আছি। আমি রাজি কি না, আমি করব কি না - এই সব কোন ম্যাটারই না যেন স্যারের কাছে! কি নিশ্চিতে তিনি আমার হয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। আমার দিকে চেয়ে বললেন, তুমি আগামী চট্রগ্রাম চলে যাও। ট্রেনের টিকিট কাটা আছে। আগামী দুই সাপ্তাহের মধ্যে চট্রগ্রাম ক্যাম্পাসের সকল সমস্যা, সম্ভাব্য সলিউশন ও ক্ষেত্র বিশেষে কেমন খরচ প্রয়োজন তা যাচাই করে আমার ও ট্রাস্টি বোর্ডের সামনে রিপোর্ট দিবা। তোমার রিপোর্টিং বস আমি আর ট্রাস্টি বোর্ড। বাকি কাউকে গোনার প্রয়োজন নাই। আর তোমাকে পাঠাচ্ছি ভিসি অফিস আর ওপিডি ডিপার্টমেন্টের কর্ডিনেটর হিসাবে। এই দুই সাপ্তাহে ক্যাম্পাসের কোন ছোট খাটো বিষয়ে যদি আমার সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হয় তাহলে তুমি প্রাথমিকভাবে আমার সাথে আলাপ করে সেই সিদ্ধান্ত জানাবা। আমি চাই না, চট্রগ্রাম ক্যাম্পাসের দায়িত্বরত কেউ একটা পিন কেনার জন্য আমার এক ঘন্টা সময় নষ্ট করে।
স্যার, আমি কি তাহলে হোটেলে উঠব?
ট্রাস্টি বোর্ডের একজন বললেন, হোটেলে কেন থাকবেন? আমাদের নিজস্ব বাসা আছে। আপনার জন্য সেখানে ইতিমধ্যে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে।
আমি আর কিছু না বলে অফিস থেকে বের হয়ে আসলাম। একটা কফিশপে ঢুকে একগ্লাস ঠান্ডা পানি আর কফি খেলাম। মাথা ঠান্ডা করে সবার আগে বাসায় ফোন দিলাম। আম্মা আব্বা দুইজনেই আমার এই আকস্মিক চাকুরির যোগদানে কিছুটা বিরক্ত। পরে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলে শান্ত করলাম।
সকালে যখন চট্রগ্রামে পৌঁছলাম, তখন আমার নাম্বারে একটা ফোন আসল। একজন স্থানীয় টোনে শুদ্ধ ভাষায় বললেন, আসসালামু আলাইকুম স্যার! আপনাকে রিসিভ করতে আমি অফিস থেকে আসছি। আপনার বগির সামনেই আমাকে পাবেন।
আমি ট্রেন থেকে ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে প্ল্যাটফর্মে নামলাম। দুরে নীল শার্ট পড়া এক লোক ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। সবাই যে যার মত চলে যাচ্ছে। আমি ঐ নাম্বারে ফোন দিলাম। দেখি ঐ নীল শার্ট পড়া লোকই হন্তদন্ত হয়ে বলল, স্যার!! আমি তো এখানে আছি, আপনি কই?
আমার সাথে চোখাচোখি হতে বেচারা কিছুটা হতাশ হলো। আমাকে ভালো করে দেখে বললেন, কর্ডিনেটর স্যার কই? স্যারের তো ট্রেন আসার কথা। আমি কিছুটা দ্বিধায় পড়লাম। ভাবলাম, স্যারের যে স্বভাব আর কাকে কাকে আমার সাথে পাঠিয়েছেন আল্লাহই জানে। আমি বললাম, আর তো কেউ আসে নাই।
দেখলাম নীল শার্ট পড়া লোকটা কাকে যেন ফোন দিয়ে বলল, স্যার কর্ডিনেটর স্যার তো আসে নাই। অন্য এক স্টাফ আসছে যে! উনাকে কি গাড়িতে করে নিয়ে আসব?
সম্ভবত হ্যাঁ জবাব শোনার পর তিনি আমাকে ইশারায় বললেন তাঁর পিছু নিতে। আমি এই সব ভারী ব্যাগ নিয়ে পুরো প্ল্যাটফর্ম হেঁটে গাড়িতে এসে বললাম। পুরো পথ বেচারা কাকে যেন ফোনে বিচার দিচ্ছিলো, এত ভোরে উঠে তাঁকে ডিউটিতে পাঠানো হইছে অথচ স্যারই আসে নাই।
যাইহোক, আমাকে অফিসের বাসায় নামিয়ে দিলেন। আমি একটু ফ্রেস ট্রেস হয়ে রেডি হতেই দেখি ঢাকা থেকে ভিসি স্যার ফোন দিলেন। ফোন দিয়ে খোঁজ খবর নিলেন। আর নতুন কাজের ইনস্ট্রাকশন দিলেন। আমি বুঝলাম, স্যার আমার অবস্থা টাইট করে ছাড়বেন।
যাইহোক, রেডি হয়ে অফিসে গেলাম। প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করলাম। বিভিন্ন বিল্ডিং, ল্যাব আর লাইব্রেরী ঘুরে ঘুরে দেখে রুমে ঢুকে মাত্র পানি মুখে দিচ্ছিলাম, হুড়মুড় করে আমার রুমে সকালের ড্রাইভার প্রবেশ করলেন। বিস্ফোরিত নয়নে বললেন। স্যার আপনি যে নতুন স্যার এটা আমারে কেন বলেন নাই? আমি স্যার আপনার সাথে এই বেয়াদপি করলাম, হ্যান তেন আরো বহু কি যেন বললেন।
সত্যি বলতে আমি এই পুরোটা সময় দাঁত বের করে হাসছিলাম। পরে বেচারাকে শান্ত করে কাজে ফেরত পাঠালাম। এই চাকরীতে গিয়ে আমি একটা জিনিস শিখলাম - সুশীল সিন্ডিকেট খুব ভয়াবহ জিনিস। এরা খুব মিষ্টি হাসি দিয়ে একটা নির্দিষ্ট শ্রেনীর ব্রেণ ওয়াস করে। পাশাপাশি, আঞ্চলিকতাকে অনেকেই অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের অপরাধ ও অকর্ম্যতাকে ঢাকে। একটা প্রতিষ্ঠানে যদি পেশাদারিত্ব না থাকে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানটি টিকতে পারে না। বলা বাহুল্য এই প্রতিষ্ঠানটি এই সকল দোষে প্রচন্ড জর্জরিত ছিলো। এই প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন রুপে সাজানোর জন্য যে কষ্ট আমি করেছিলাম, সেটা আমার কাছে খুবই আনন্দের একটি অভিজ্ঞতা। শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো কিছু করতে পেরেছি, তাদের ভালোবাসা পেয়েছি এটাও আমার জন্য একটি আনন্দের ঘটনা।
পাঠক অনেক বড় একটি লেখা দিলাম। যদি বিরক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে অগ্রীম দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনারাও চাইলে লিখতে পারেন আপনাদের জীবনের এই ধরনের নানা স্মৃতি, আনন্দ ও বেদনার গল্প!